পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

Mohaguru (আলোচনা | অবদান)
বট পরিষ্কার করছে, কোন সমস্যা?
 
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
আচার, কোনােদিন নারিকেলের মিষ্টান্ন, কোনােদিন পাতায়-মােড়া কেতকীকেশরসুগন্ধি গহনির্মিত খয়ের আনিয়া নিয়মিত সময়ে তাঁহার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইত।
আচার, কোনোদিন নারিকেলের মিষ্টান্ন, কোনোদিন পাতায়-মোড়া কেতকীকেশরসুগন্ধি গহনির্মিত খয়ের আনিয়া নিয়মিত সময়ে তাঁহার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইত।


{{gap}}প্রথম দিনকতক দেখিল, শশিভূষণ একখানা চিত্রহীন প্রকাণ্ড কঠোরমতি গ্রন্থ খুলিয়া অন্যমনস্কভাবে পাতা উল্টাইতেছেন, সেটা যে মনোযােগ দিয়া পাঠ করিতেছেন তাহাও বােধ হইল না। অন্য সময়ে শশিভূষণ যে-সকল গ্রন্থ পড়িতেন তাহার মধ্য হইতে কোনাে না কোনাে অংশ গিরিবালাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ঐ স্থূলকায় কালাে মলাটের পুস্তক হইতে গিরিবালাকে শুনাইবার যােগ্য কি দুটো কথাও ছিল না। তা না থাক্, তাই বলিয়া ঐ বইখানি কি এতই বড়াে আর গিরিবালা কি এতই ছােটো।
{{gap}}প্রথম দিনকতক দেখিল, শশিভূষণ একখানা চিত্রহীন প্রকাণ্ড কঠোরমতি গ্রন্থ খুলিয়া অন্যমনস্কভাবে পাতা উল্টাইতেছেন, সেটা যে মনোযোগ দিয়া পাঠ করিতেছেন তাহাও বোধ হইল না। অন্য সময়ে শশিভূষণ যে-সকল গ্রন্থ পড়িতেন তাহার মধ্য হইতে কোনো না কোনো অংশ গিরিবালাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ঐ স্থূলকায় কালো মলাটের পুস্তক হইতে গিরিবালাকে শুনাইবার যোগ্য কি দুটো কথাও ছিল না। তা না থাক্, তাই বলিয়া ঐ বইখানি কি এতই বড়ো আর গিরিবালা কি এতই ছোটো।


{{gap}}প্রথমটা, গুরুর মনােযােগ আকর্ষণের জন্য গিরিবালা সুর করিয়া, বানান করিয়া, বেণী-সমেত দেহের উত্তরার্ধ সবেগে দুলাইতে দুলাইতে উচ্চৈঃস্বরে আপনিই পড়া আরম্ভ করিয়া দিল। দেখিল তাহাতে বিশেষ ফল হইল না। কালাে মােটা বইখানার উপর মনে মনে অত্যন্ত চটিয়া গেল। ওটাকে একটা কুৎসিত কঠোর নিষ্ঠুর মানুষের মতাে করিয়া দেখিতে লাগিল। ঐ বইখানা যে গিরিবালাকে বালিকা বলিয়া সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে তাহা যেন তাহার প্রত্যেক দুর্বোধ পাতা দুষ্ট মানুষের মুখের মতাে আকার ধারণ করিয়া নীরবে প্রকাশ করিতে লাগিল। সেই বইখানা যদি কোনাে চোরে চুরি করিয়া লইয়া যাইত তবে সেই চোরকে সে তাহার মাতৃভাণ্ডারের সমস্ত কেয়াখয়ের চুরি করিয়া পুরস্কার দিতে পারিত। সেই বইখানার বিনাশের জন্য সে মনে মনে দেবতার নিকট যে-সকল অসংগত ও অসম্ভব প্রার্থনা করিয়াছিল তাহা দেবতারা শুনেন নাই এবং পাঠকদিগকেও শুনাইবার কোনাে আবশ্যক দেখি না।
{{gap}}প্রথমটা, গুরুর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গিরিবালা সুর করিয়া, বানান করিয়া, বেণী-সমেত দেহের উত্তরার্ধ সবেগে দুলাইতে দুলাইতে উচ্চৈঃস্বরে আপনিই পড়া আরম্ভ করিয়া দিল। দেখিল তাহাতে বিশেষ ফল হইল না। কালো মোটা বইখানার উপর মনে মনে অত্যন্ত চটিয়া গেল। ওটাকে একটা কুৎসিত কঠোর নিষ্ঠুর মানুষের মতো করিয়া দেখিতে লাগিল। ঐ বইখানা যে গিরিবালাকে বালিকা বলিয়া সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে তাহা যেন তাহার প্রত্যেক দুর্বোধ পাতা দুষ্ট মানুষের মুখের মতো আকার ধারণ করিয়া নীরবে প্রকাশ করিতে লাগিল। সেই বইখানা যদি কোনো চোরে চুরি করিয়া লইয়া যাইত তবে সেই চোরকে সে তাহার মাতৃভাণ্ডারের সমস্ত কেয়াখয়ের চুরি করিয়া পুরস্কার দিতে পারিত। সেই বইখানার বিনাশের জন্য সে মনে মনে দেবতার নিকট যে-সকল অসংগত ও অসম্ভব প্রার্থনা করিয়াছিল তাহা দেবতারা শুনেন নাই এবং পাঠকদিগকেও শুনাইবার কোনো আবশ্যক দেখি না।


{{gap}}তখন ব্যথিতহদয় বালিকা দুই-একদিন চারুপাঠ হস্তে গুরুগৃহে গমন বন্ধ করিল। এবং সেই দুই-একদিন পরে এই বিচ্ছেদের ফল পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য সে অন্য ছলে শশিভূষণের গৃহসম্মুখবর্তী পথে আসিয়া কটাক্ষপাত করিয়া দেখিল, শশিভূষণ সেই কালাে বইখানা ফেলিয়া একাকী দাঁড়াইয়া হাত নাড়িয়া লােহার গরাদেগুলার প্রতি বিজাতীয় ভাষায় বক্তৃতা প্রয়ােগ করিতেছেন। বােধ করি, বিচারকের মন কেমন করিয়া গলাইবেন এই লােহাগুলার উপর তাহার পরীক্ষা হইতেছে। সংসারে-অনভিজ্ঞ গ্রন্থবিহারী শশিভূষণের ধারণা ছিল যে, পুরাকালে ডিমস্থিনীস সিসিরাে বার্ক্, শেরিডন প্রভৃতি বাগ্মীগণ বাক্যবলে যে-সকল অসামান্য কার্য করিয়া গিয়াছেন-যেরূপ শব্দভেদী শর-বর্ষণে অন্যায়কে ছিন্নভিন্ন, অত্যাচারকে লাঞ্ছিত এবং অহংকারকে ধূলিশায়ী করিয়া দিয়াছেন, আজিকার দোকানদারির দিনেও তাহা অসম্ভব নহে। প্রভুত্বমদগর্বিত উদ্ধত ইংরাজকে কেমন করিয়া তিনি জগৎসমক্ষে লজ্জিত ও অনুতপ্ত করিবেন, তিলকুচি গ্রামের জীর্ণ ক্ষুদ্র গৃহে দাঁড়াইয়া শশিভূষণ তাহারই চর্চা করিতে-ছিলেন। আকাশের দেবতারা শুনিয়া হাসিয়াছিলেন কি তাঁহাদের দেবচক্ষু অশ্রুসিক্ত হইতেছিল, তাহা কেহ বলিতে পারে না।
{{gap}}তখন ব্যথিতহদয় বালিকা দুই-একদিন চারুপাঠ হস্তে গুরুগৃহে গমন বন্ধ করিল। এবং সেই দুই-একদিন পরে এই বিচ্ছেদের ফল পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য সে অন্য ছলে শশিভূষণের গৃহসম্মুখবর্তী পথে আসিয়া কটাক্ষপাত করিয়া দেখিল, শশিভূষণ সেই কালো বইখানা ফেলিয়া একাকী দাঁড়াইয়া হাত নাড়িয়া লোহার গরাদেগুলার প্রতি বিজাতীয় ভাষায় বক্তৃতা প্রয়োগ করিতেছেন। বোধ করি, বিচারকের মন কেমন করিয়া গলাইবেন এই লোহাগুলার উপর তাহার পরীক্ষা হইতেছে। সংসারে-অনভিজ্ঞ গ্রন্থবিহারী শশিভূষণের ধারণা ছিল যে, পুরাকালে ডিমস্থিনীস সিসিরো বার্ক্, শেরিডন প্রভৃতি বাগ্মীগণ বাক্যবলে যে-সকল অসামান্য কার্য করিয়া গিয়াছেন-যেরূপ শব্দভেদী শর-বর্ষণে অন্যায়কে ছিন্নভিন্ন, অত্যাচারকে লাঞ্ছিত এবং অহংকারকে ধূলিশায়ী করিয়া দিয়াছেন, আজিকার দোকানদারির দিনেও তাহা অসম্ভব নহে। প্রভুত্বমদগর্বিত উদ্ধত ইংরাজকে কেমন করিয়া তিনি জগৎসমক্ষে লজ্জিত ও অনুতপ্ত করিবেন, তিলকুচি গ্রামের জীর্ণ ক্ষুদ্র গৃহে দাঁড়াইয়া শশিভূষণ তাহারই চর্চা করিতে-ছিলেন। আকাশের দেবতারা শুনিয়া হাসিয়াছিলেন কি তাঁহাদের দেবচক্ষু অশ্রুসিক্ত হইতেছিল, তাহা কেহ বলিতে পারে না।


{{gap}}সুতরাং সেদিন গিরিবালা তাঁহার দৃষ্টিপথে পড়িল না; সেদিন বালিকার অঞ্চলে জাম ছিল না; পূর্বে একবার জামের আঁটি ধরা পড়িয়া অবধি ঐ ফল সম্বন্ধে সে অত্যন্ত সংকুচিত ছিল। এমন-কি, শশিভূষণ যদি কোনােদিন নিরীহ ভাবে জিজ্ঞাসা করিত, “গিরি, আজ জাম নেই?” সে সেটাকে গূঢ় উপহাস জ্ঞান করিয়া সক্ষোভে
{{gap}}সুতরাং সেদিন গিরিবালা তাঁহার দৃষ্টিপথে পড়িল না; সেদিন বালিকার অঞ্চলে জাম ছিল না; পূর্বে একবার জামের আঁটি ধরা পড়িয়া অবধি ঐ ফল সম্বন্ধে সে অত্যন্ত সংকুচিত ছিল। এমন-কি, শশিভূষণ যদি কোনোদিন নিরীহ ভাবে জিজ্ঞাসা করিত, “গিরি, আজ জাম নেই?” সে সেটাকে গূঢ় উপহাস জ্ঞান করিয়া সক্ষোভে