পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২৭: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(কোনও পার্থক্য নেই)

১৫:২৮, ১৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 “ইঁহার সঙ্কলিত ‘Celebrated Trials in India’ নামক পুস্তক সাধারণের একটি বিশেষ অভাব দূর করিয়াছে।

 “পাবলিক কার্যের মধ্যে তাঁহার সবচেয়ে প্রিয় কার্য ছিল—ইন্ডিয়ান ন্যাসনাল কংগ্রেস। হিউমের উদ্বোধনে এটি জানকীনাথের স্বহস্তে রােপা, স্বহস্তে জল সেচন করা ও সহস্তে বাড়ান জাতীয়-মহীরুহ। কংগ্রেসের জীবন আজ ২৮ বৎসর, আজ অনেকেই ইহার বন্ধু, সহায় ও মুরুব্বী, কিন্তু যতদিন এ নাবালক ছিল, ততদিন জানকীনাথই ইহার প্রধান অভিভাবক ছিলেন।

 “যে সময়ে অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন মাদাম ব্লাভাট্‌স্কি ভারতবর্ষে আসিয়া থিয়সফি প্রচার করেন সে সময় জানকীনাথ থিয়সফিস্ট সম্প্রদায়ভুক্ত হন। মিঃ হিউমও থিয়সফিষ্ট ছিলেন। সেকালে বৎসরান্তে মাদ্রাজে একটি থিয়সফিক্যাল কনফারেন্স হইত, ভারতবর্ষের সকল অংশ হইতে থিয়সফিস্টগণ সেখানে আসিয়া সম্মিলিত হইতেন। এইরূপ সম্মিলনী হইতেই হিউম সাহেবের একটি ভাবের স্ফুরণ হইল যে, সমগ্র ভারতবাসীর এরূপ একটি পলিটিক্যাল সম্মিলনী গড়িয়া তুলিতে পারিলে ভারতবাসীর অশেষ মঙ্গল হইবে। এই ভাব হইতেই কংগ্রেসের উৎপত্তি এবং সেই ভাবটিকে কাজে পরিণত করার মূলে ছিলেন জানকীনাথ ঘােষাল। তিনি তখন কিছুকালের জন্য এলাহাবাদে থাকিয়া ‘Indian Union’ নামক একখানি সাপ্তাহিক পত্রের সম্পাদন ভার গ্রহণ করেন। কংগ্রেসের আরম্ভ হইতে তিনি যে কিরূপ ভাবে ইহার জন্য কাজ করিয়াছেন, ধন প্রাণ মন দিয়া সকলের তিরস্কার নিগ্রহ সহ্য করিয়া অম্লানচিত্তে কার্য করিয়া গিয়াছেন তাহা সর্বজনবিদিত।...”


 উমেশচন্দ্র গুপ্ত : পুরা নাম উমেশচন্দ্র দত্তগুপ্ত, সাধারণতঃ উমেশচন্দ্র দত্ত নামেই পরিচিত। উমেশচন্দ্র কৃষ্ণনগর কলেজের খ্যাতিমান ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রথমে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে কৃষ্ণনগর কলেজে ইতিহাস ও সাহিত্যের অধ্যাপক হন। তিনি ১৮৭৫ সনে কলেজের অস্থায়ী অধ্যক্ষ হইয়াছিলেন। স্কুল-বিভাগে শিক্ষকতাকালে উমেশচন্দ্র কর্তৃক জানকীনাথ বিশেষ প্রভাবিত হইয়াছিলেন।


 মা : স্বর্ণকুমারী দেবী (? ১৮৫৫-১৯৩২) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থা কন্যা। স্বর্ণকুমারী গৃহে বসিয়া শিক্ষালাভ করেন। জানকীনাথ ঘােষালের সঙ্গে তাঁহার বিবাহ হয় ১৭ নবেম্বর ১৮৬৭ তারিখে। এই বিবাহের সংবাদ ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় (পৈৗষ ১৭৮৯ শক) এইরূপ বাহির হয় :

 “ব্রাহ্ম-বিবাহ। গত ২ অগ্রহায়ণ রবিবার ব্রাহ্মসমাজের প্রধান আচার্য শ্রদ্ধাস্পদ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যার সহিত কৃষ্ণনগরের অন্তঃপাতী জয়রামপুর নিবাসী শ্রীযুক্ত বাবু জানকীনাথ ঘােষালের ব্রাহ্মবিধানানুসারে বিবাহ হইয়া গিয়াছে। বরের বয়ঃক্রম ২৭ বৎসর কন্যার বয়ঃক্রম ১৩ বৎসর। এই বিবাহ উপলক্ষে দেশ-বিদেশ হইতে বহুসংখ্যক ভদ্রলােক ও ব্রাহ্মণপণ্ডিত উপস্থিত হইয়াছিলেন।”

 স্বর্ণকুমারী দেবী বাংলা, সংস্কৃত এবং ইংরেজী ভাষায় বুৎপন্ন হন। অল্প বয়সেই তিনি সাহিত্যচর্চা আরম্ভ করেন। তিনি ‘ভারতী’ সম্পাদনা করেন ১২৯১ হইতে ১৩০১ সাল এবং ১৩১৫ হইতে ১৩২১ সাল পর্যন্ত। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধ প্রভৃতি রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। স্বর্ণকুমারীর সাহিত্য-সাধনার বিষয়ে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘স্বর্ণকুমারী দেবী, মীর মশারফ হােসেন’ পুস্তকখানি পঠিতব্য।

 স্বামী জানকীনাথের সঙ্গে স্বর্ণকুমারীও থিয়সফিতে বিশ্বাসী হন। বঙ্গদেশীয় থিয়সফিক্যাল সােসাইটির মহিলা শাখার সভাপতি ছিলেন স্বর্ণকুমারী। এই সূত্রে তিনি বহু সম্ভ্রান্ত মহিলার সংস্পর্শে আসেন। সােসাইটির মহিলা শাখা উঠিয়া গেলে

২১০