পাতা:চোখের বালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

JoyBot (আলোচনা | অবদান)
rh, replaced: </noinclude> → {{rh| |চোখের বালি| }} </noinclude> (2)
Vedbas (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
বিননাদিনী এইরূপ শনিগ্রহের মতাে ঘুরিতে এবং মহেন্দ্রকে ঘুরাইতে লাগিলকোথাও তাহাকে বিশ্রাম দিল না। বিনােদিনী অতি শীঘ্রই লােককে আপন করিয়া লইতে পারে; অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সে গাড়ির সহযাণিীদের সহিত বন্ধুস্থাপন করিয়া লইত। যেখানে যাইবার ইচ্ছা সেখানকার সমস্ত খবর লইত, যাত্রিশালায় আশ্রয় লইত এবং যেখানে যাহা-কিছু দেখিবার আছে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বন্ধুসহায়ে দেখিয়া লইত। মহেন্দ্র বিনােদিনীর কাছে নিজের অনাবশ্যকতায় প্রতিদিন আপনাকে হতমান বােধ করিতে লাগিল। টিকিট কিনিয়া দেওয়া ছাড়া তাহার কোন কাজ ছিল না, বাকি সময়টা তাহার প্রবৃত্তি তাহাকে ও সে আপন প্রবৃত্তিকে দংশন করিতে থাকিত। প্রথম প্রথম কিছুদিন সে বিনােদিনীর সঙ্গে সঙ্গে পথে পথে ফিরিয়াছিল ; কিন্তু কমে তাহা অসহ্ন হইয়া উঠিল। তখন মহেন্দ্ৰ আহারাদি করিয়া ঘুমাইবার চেষ্টা করিত, বিননাদিনী সমস্ত দিন ঘুরিয়া বেড়াইত। মাতৃস্নেহলালিত মহেন্দ্র যে এমন করিয়া পথে বাহির হইয়া পড়িতে পারে তাহা কেহ কল্পনাও করিত না।
চোখের বালি a &S

বিনোদিনী এইরূপ শনিগ্রহের মতো ঘুরিতে এবং মহেন্দ্রকে খুৱাইতে লাগিল— কোথাও তাহাকে বিশ্রাম দিল না । বিনোদিনী অতি শীঘ্রই লোককে আপন করিয়া লইতে পারে ; অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সে গাড়ির সহযান্ত্ৰিণীদের সহিত বন্ধুত্ৰস্থাপন করিয়া লইত। যেখানে যাইবার ইচ্ছা সেখানকার সমস্ত খবর লইত, যাত্রিশালায় আশ্রয় লইত এবং যেখানে যাহা-কিছু দেখিবার আছে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বন্ধুসহায়ে দেখিয়া লইত । মহেন্দ্র বিনোদিনীর কাছে নিজের অনাবশুকতায় প্রতিদিন আপনাকে হতমান বোধ করিতে লাগিল । টিকিট কিনিয়া দেওয়া ছাড়া তাহার কোনো কাজ ছিল না, বাকি সময়টা তাহার প্রবৃত্তি তাহাকে ও সে আপন প্রবৃত্তিকে দংশন করিতে থাকিত । প্রথম প্রথম কিছুদিন সে বিনোদিনীর সঙ্গে সঙ্গে পথে পথে ফিরিয়াছিল ; কিন্তু ক্রমে তাহা অসহ হইয়া উঠিল। তখন মহেন্দ্ৰ আহারাদি করিয়া ঘুমাইবার চেষ্টা করিত, বিনোদিনী সমস্ত দিন ঘুরিয়া বেড়াইত। মাতৃস্নেহলালিত মহেন্দ্র যে এমন করিয়া পথে বাহির হইয়া পড়িতে পারে তাহা কেহ কল্পনাও করিত না ।
একদিন এলাহাবাদ স্টেশনে দুইজনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করিতে ছিল । কোনো আকস্মিক কারণে ট্রেন আসিতে বিলম্ব হইতেছে । ইতিমধ্যে অন্যান্য গাড়ি যত আসিতেছে ও যাইতেছে, বিনোদিনী তাহার যাত্রীদের ভালো করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছে। পশ্চিমে ঘুরিতে ঘুরিতে চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে সে হঠাৎ কাহারো দেখা পাইবে, এই বোধ করি তাহার আশা । অন্তত, রুদ্ধ গলির মধ্যে জনহীন গৃহে নিশ্চল উদ্যমে নিজেকে প্রত্যহ চাপিয়া মারার চেয়ে এই নিত্যসন্ধানপরতার মধ্যে, এই উন্মুক্ত পথের জনকোলাহলের মধ্যে শাস্তি আছে।
{{gab}}একদিন এলাহাবাদ স্টেশনে দুইজনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করিতে ছিল। কোনাে আকস্মিক কারণে ট্রেন আসিতে বিলম্ব হইতেছে। ইতিমধ্যে অন্যান্য গাড়ি যত আসিতেছে ও যাইতেছে, বিনােদিনী তাহার যাত্রীদের ভালাে করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতেছে। পশ্চিমে ঘুরিতে ঘুরিতে চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে সে হঠাৎ কাহারাে দেখা পাইবে, এই বােধ করি তাহার আশা। অন্তত, রুদ্ধ গলির মধ্যে জনহীন গৃহে নিশ্চল উদ্যমে নিজেকে প্রত্যহ চাপিয়া মারার চেয়ে এই নিত্যসন্ধানপরতার মধ্যে, এই উন্মুক্ত পথের জনকোলাহলের মধ্যে শান্তি আছে।

হঠাৎ এক সময়ে স্টেশনে একটি কাচের বাক্সের উপর বিনোদিনার দৃষ্টি পড়িতেই সে চমকিয়া উঠিল । এই পোস্ট, আপিসের বাক্সের মধ্যে, যে-সকল লোকের উদ্দেশ পাওয়া যায় নাই তাহদের পত্র প্রদর্শিত হইয়া থাকে । সেই বাক্সে সজ্জিত একখানি প্রত্রের উপরে বিনোদিনী বিহারীর নাম দেখিতে পাইল । বিহারীলাল নামটি অসাধারণ নহে ; পত্রের বিহারীই যে বিনোদিনীর অভীষ্ট বিহারী, এ কথা মনে করিবার কোনো হেতু ছিল না— তবু বিহারীর পুরা নাম দেখিয়া সেই একটিমাত্র বিহারী ছাড়া আর-কোনো বিহারীর কথা তাহার মনে সন্দেহ হইল না। পত্রে লিখিত ঠিকানাটি সে মুখস্থ করিয়া লইল । অত্যন্ত অপ্রসন্নমুখে মহেন্দ্র একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া ছিল ; বিনোদিনী সেখানে আসিয়া কহিল, “কিছুদিন এলাহাবাদেই থাকিব ।”
{{gab}}হঠাৎ এক সময়ে স্টেশনে একটি কাচের বাক্সের উপর বিনােদিনীর দৃষ্টি পড়িতেই সে চমকিয়া উঠিল। এই পােস্ট আপিসের বাক্সের মধ্যে, যে-সকল লােকের উদ্দেশ পাওয়া যায় নাই তাহাদের পত্র প্রদর্শিত হইয়া থাকে। সেই বাক্সে সজ্জিত একখানি প্রত্রের উপরে বিনােদিনী বিহারীর নাম দেখিতে পাইল। বিহারীলাল নামটি অসাধারণ নহে; পত্রের বিহারীই যে বিনােদিনীর অভীষ্ট বিহারী, এ কথা মনে করিবার কোনাে হেতু ছিল না— তবু বিহারীর পুরা নাম দেখিয়া সেই একটিমাত্র বিহারী ছাড়া আর-কোনাে বিহারীর কথা তাহার মনে সন্দেহ হইল না। পত্রে লিখিত ঠিকানাটি সে মুখস্থ করিয়া লইল। অত্যন্ত অপ্রসন্নমূখে মহেন্দ্র একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া ছিল ; বিনােদিনী সেখানে আসিয়া কহিল, “কিছুদিন এলাহাবাদেই থাকিব।”
s
{{nop}}