বিবিধ প্রসঙ্গ/আদর্শ প্রেম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
JoyBot (আলোচনা | অবদান)
rp
JoyBot (আলোচনা | অবদান)
→‎top: rplc
১ নং লাইন:
{{Header
|title= [[বিবিধ প্রসঙ্গ]]
|section = [[বিবিধ প্রসঙ্গ/আদর্শ প্রেম|আদর্শ প্রেম]]
|previous = [[বিবিধ প্রসঙ্গ/প্রাতঃকাল ও সন্ধ্যাকাল|প্রাতঃকাল ও সন্ধ্যাকাল]]
|next = [[বিবিধ প্রসঙ্গ/বন্ধুত্ব ও ভালবাসা|বন্ধুত্ব ও ভালবাসা]]
১০ নং লাইন:
|portal =
|categories =রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর}}
<div style="padding-left:2em;font-size:1.3em">
 
সংসারের-কাজ-চালানো, মন্ত্রবদ্ধ, ঘরকন্নার ভালবাসা যেমনই হউক, আমি প্রকৃত আদর্শ ভালোবাসার কথা বলিতেছি। যে-হউক এক জনের সহিত ঘেঁষাঘেষি করিয়া থাকা, এক ব্যক্তির অতিরিক্ত একটি অঙ্গের ন্যায় হইয়া থাকা, তাহার পাঁচটা অঙ্গুলির মধ্যে ষষ্ঠ অঙ্গুলির ন্যায় লগ্ন হইয়া থাকাকেই ভালোবাসা বলে না। দুইটা আঠাবিশিষ্ট পদার্থকে একত্রে রাখিলে যে জুড়িয়া যায়, সেই জুড়িয়া যাওয়াকেই ভালোবাসা বলে। না। অনেক সময়ে আমরা নেশাকে ভালোবাসা বলি। রাম ও শ্যাম উভয়ে উভয়ের কাছে হয়ত “মৌতাতের” স্বরূপ হইয়াছে,রাম ও শ্যাম উভয়কে উভয়ের অভ্যাস হইয়া গিয়াছে, রামকে নহিলে শ্যামের বা শ্যামকে নহিলে রামের অভ্যাস-ব্যাঘাতের দরুন কষ্ট বোধ হয়। ইহাকেও ভালোবাসা বলে না। প্রণয়ের পাত্র নীচই হউক, নিষ্ঠুরই হউক, আর কুচরিত্র হউক, তাহাকে আঁকড়িয়া ধরিয়া থাকাকে অনেকে প্রণয়ের পরাকাষ্ঠা মনে করিয়া থাকে। কিন্তু,ইহা বিবেচনা করা উচিত, নিতান্ত অপদার্থ দুর্বলহৃদয় নহিলে কেহ নীচের কাছে নীচ হইতে পারে না। এমন অনেক ক্রীতদাসের কথা শুনা গিয়াছে যাহারা নিষ্ঠুর নীচাশয় প্রভুর প্রতিও অন্ধভাবে আসক্ত, কুকুরেরাও সেইরূপ। এরূপ কুকুরের মতো, ক্রীতদাসের মতো ভালোবাসাকে ভালোবাসা বলিতে কোন মতেই মন উঠে না। প্রকৃত ভালোবাসা দাস নহে, সে ভক্ত; সে ভিক্ষুক নহে, সে ক্রেতা। আদর্শ প্রণয়ী প্রকৃত সৌন্দর্যকে ভালবাসেন, মহত্ত্বকে ভালবাসেন; তাঁহার হৃদয়ের মধ্যে যে আদর্শ ভাব জাগিতেছে তাহারই প্রতিমাকে ভালবাসেন। প্রণয়ের পাত্র যেমনই হউক, অন্ধভাবে তাহার চরণ আশ্রয় করিয়া থাকা তাঁহার কর্ম নহে। তাহাকে তো ভালবাসা বলে না, তাহাকে কর্দমবৃত্তি বলে। কর্দম একবার পা জড়াইলে আর ছাড়িতে চায় না, তা সে যাহারই পা হউক না কেন, দেবতারই হউক আর নরাধমেরই হউক! প্রকৃত ভালোবাসা যোগ্যপাত্র দেখিলেই আপনাকে তাহার চরণধূলি করিয়া ফেলে। এই নিমিত্ত ধূলিবৃত্তি করাকেই অনেকে ভালোবাসা বলিয়া ভুল করেন। তাঁহারা জানেন না যে, দাসের সহিত ভক্তের বাহ্য আচরণে অনেক সাদৃশ্য আছে বটে, কিন্তু একটি প্রধান প্রভেদ আছে— ভক্তের দাসত্বে স্বাধীনতা আছে, ভক্তের স্বাধীন দাসত্ব। তেমনি প্রকৃত প্রণয় স্বাধীন প্রণয়। সে দাসত্ব করে, কেননা দাসত্ববিশেষের মহত্ত্ব সে বুঝিয়াছে। যেখানে দাসত্ব করিয়া গৌরব আছে, সেইখানেই সে দাস, যেখানে হীনতা স্বীকার করাই মর্যাদা, সেইখানেই সে হীন। ভালোবাসিবার জন্যই ভালোবাসা নহে, ভালো ভালোবাসিবার জন্যই ভালোবাসা। তা যদি না হয়, যদি ভালোবাসা হীনের কাছে হীন হইতে শিক্ষা দেয়, যদি অসৌন্দর্যের কাছে রুচিকে বদ্ধ করিয়া রাখে, তবে ভালোবাসা নিপাত যাক।
 
</div>