শেষের কবিতা/অমিত-চরিত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
JoyBot (আলোচনা | অবদান)
rp
JoyBot (আলোচনা | অবদান)
→‎top: rplc
৪ নং লাইন:
|previous =[[শেষের কবিতা|শেষের কবিতা (সূচী)]]
|next =[[শেষের কবিতা-২]] (সংঘাত)
|notes =</br />
|author =রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|year =
১০ নং লাইন:
|portal =
|categories =রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর}}
<div style="padding-left:2em;font-size:1.3em">
অমিত রায় ব্যারিস্টার। ইংরেজি ছাদে রায় পদবী “রয়” ও “রে” রূপান-র যখন ধারণ করলে তখন তার শ্রী গেল ঘুচে কিন্তু সংখ্যা হল বৃদ্ধি। এই কারণে, নামের অসামন্যতা কামনা করে অমিত এমন একটি বানান বানালে যাতে ইংরেজ বন্ধু ও বন্ধুনীদের মুখে তার উচ্চারণ দাঁড়িয়ে গেল-অমিট রায়ে।
 
৪৩ নং লাইন:
 
এই বলে লিলি তাড়াতাড়ি উঠে তার সখীদের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিলে। অনেক ঘটনার মধ্যে এই একটা ঘটনার নমুনা দেওয়া গেল।
 
 
অমিতর বোন সিসি-লিসিরা ওকে বলে, “আমি তুমি বিয়ে কর না কেন?”
৭০ ⟶ ৬৯ নং লাইন:
 
ওর বোনেরা ওর যে অভ্যাসটা নিয়ে ভারি বিরক্ত সে হচ্ছে ওর উলটো কথা বলা। সজ্জনসভায় যা-কিছু সর্বজনের অনুমোদিত ও তার বিপরীত কিছু-একটা বলে বসবেই।
 
 
একদা কোন-একজন রাষ্ট্রতাত্ত্বিক ডিমোক্রাসির গুণ বর্ণনা করছিল; ও বলে উঠল, ‘বিষ্ণু যখন সতীর মৃতদের খন্ড খন্ড করলেন তখন দেশ জুড়ে যেখানে সেখানে তাঁর একশোর অধিক পীঠস্থান তৈরি হয়ে গেল। ডিমোক্রসি আজ যেখানে সেখানে যত টুকরো অ্যারিস্টক্রেসির পুজো বসিয়েছে- খুদে খুদে অ্যারিষ্টক্রাটে পৃথিবী ছেয়ে গেল, কেউ পলিটিক্সে, কেউ সাহিত্যে, কেউ সমাজে। তাদের কারো গাম্ভীর্য নেই, কেননা তাদের নিজের পরে বিম্বাস নেই।’
 
 
একদা মেয়েদের পরে পুরুষের আধিপত্যের অত্যাচার নিয়ে কোনো সমাজহিতৈষী অবলাবান্ধব নিন্দা করছিল পুরুষদের। অমিত মুখ থেকে সিগারেটা নামিয়ে ফস্‌ করে বললে, পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য অতি ভয়ংকর।’
 
সভাস’ অবলা ও অন্বান্ধবেরা চটে উঠে বললে, ‘মানে কী হল’?
 
অমিত বললে, ‘যে পক্ষের দখলে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে, অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে। শিকলওয়ালা বাঁধা বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলায়ও। মেয়েদের কৌটো আফিমে ভরা, প্রকৃতি-শয়তানী তার জোগান দেয়।’
 
 
একদিন এওদর বালিগঞ্চের এক সাহিত্যসভায় রবি ঠাকুরের কবিতা ছিল আলোচনার বিষয়। অমিতরা জীবনে এই সে প্রথম সভাপতি হতে রাজি হয়েছিল; গিয়েছিল মনে মনে যুদ্ধসাজ পরে। একজন সেকেলে গোছের অতি ভালোমানুষ ছিল বক্তা। রবি ঠাকুরের কবিতা যে কবিতাই এইটে প্রমাণ করাই তার উদ্দেশ্য। দুই-একজন কলেজের অধ্যাপক ছাড়া অধিকাংশ সভ্যই স্বীকার করলে, প্রমাণটা একরকম সনে-াষজনক।
 
সভাপতি উঠে বললে, ‘কবিমাত্রের উচিত পঁচিশ থেকে ত্রিশ পর্যন-। এ কথা বলব না যে পরবর্তীদের কাছ থেকে আরো ভালো কিছু চাই, বলব অন্য কিছু চাই। ফজলি আম ফুরালে বলব না, আনো ফজরিতর আম; বলব, নতুন বাজার থেকে বড়ো দেখে আতা নিয়ে এসো তো হে। ডাব-নারকেলের মেয়াদ অল্প, সে রসের মেয়াদ; ঝুনো নারকেলের মেয়াদ বেশি; সে শাঁসের মেয়াদ। কবিরা হল ক্ষণজীবী, ফিলজফরের বয়সের গাছপাথর নেই।… রবি ঠাকুরের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড়ো নালিশ এই যে,বুড়ো ওয়ার্ডস্বার্থের নকল করে ভদ্রলোক অতি অন্যায়রকম বেঁচে আছে। যম বাতি নিবিয়ে দেবার জন্যে থেকে থেকে ফরাশ পাঠায়, তবু লোকটা দাাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চৌকির হাতা আঁকড়িয়ে থাকে। ও যদি মানে মানে নিজেই সরে না পড়ে, আমাদের কর্তব্য ওর সভা ছেড়ে দল বেঁধে উঠে আসা। পরবর্তী যিনি আসবেন তিনিও তাল ঠুকেই গর্জাতে গর্জাতে আসবেন যে, তাঁর রাজত্বের অবসান নেই, অমরা বর্তী বাঁধা থাকবে মর্তে তাঁরই দরজায়। কিছুকাল ভক্তরা দেবে মাল্যচন্দন, খাওয়াবে পেট ভরিয়ে, সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করবে, তার পরে আসবে তাঁকে বলি দেবার পুন্যদিন-ভক্তিবন্ধন থেকে ভক্তদের পরিত্রাণের শুভলগ্ন। আফ্রিকার চতুষ্পদ দেবতার পুজোর প্রনালী এই রকমই। দ্বিপদী ত্রিপদী চতুষ্পদী চতুর্দশপদী দেবতাদের পুজোও এই নিয়মে। পূজা জিনিসটাকে একঘেয়ে করে তোলার মতো অপবিত্র অধার্মিকতা আর- কিছু হতে পারে না। … ভালো-লাগার এভোল্যুশন আছে। পাঁচ বছর পূর্বেকার ভালো-লাগা পাঁচ বছর পরেও যদি এই জায়গায় খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে তা হলে বুঝতে হবে, বেচারা জানতে পারে নি যে সে মরে গেছে। একটু ঠেলা মারলেই তার নিজের কাছে প্রমাণ হবে যে, সেন্টিমেন্টাল আত্মীয়েরা তার অনে-্যষ্টি- সৎকার করতে বিলম্ব করেছিল, বোধ করি উপযুক্ত উত্তরাধিকারীকে চিরকাল ফাঁকি দেবার মতলবে। রবি ঠাকুরের দলের এই অবৈধ ষড়যন্ত্র আমি পাবলিকের কাছে প্রকাশ করব বলে প্রতিজ্ঞা করেছি।’
 
 
আমাদের মণিভূষণ চশমার ঝলক লাগিয়ে প্রশ্ন করলে, ‘সাহিত্যে থেকে লয়ালটি উঠিয়ে দিতে চান?’
৯৬ ⟶ ৯১ নং লাইন:
সেদিনকার বক্তা বলে উঠল, ‘জানতে পারি কি, কাকে আপনি প্রেসিডেন্ট করতে চান? তার নাম করুন।’
অমিত ফস্‌ করে বললে, ‘ নিরাবণ চক্রবর্তী’।
 
 
সভার নানা চৌকি থেকে বিস্মিত রব উঠল, ‘নিবারণ চক্রবর্তী! সে লোকটা কে?’
১০৫ ⟶ ৯৯ নং লাইন:
 
‘তবে শুনুন’।
 
 
ব’লে পকেট থেকে একটা সরু লম্বা ক্যাম্বিসে -বাধা খাতা বের করে তার থেকে পড়ে গেল-