পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৫২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Text from Google OCR
(কোনও পার্থক্য নেই)

১১:১৩, ১০ মার্চ ২০১৬ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

為*○ করুণা ভূমিকা গ্রামের মধ্যে অনপেকুমারের ন্যায় ধনবান আর কেহই ছিল না। অতিথিশালানিমাণ, দেবালয়প্রতিষ্ঠা, পাকরিণীখনন প্রভৃতি নানা সৎকমে তিনি ধনব্যয় করিতেন। তাহার সিন্ধক-পাণ টাকা ছিল, দেশবিখ্যাত যশ ছিল ও রুপবতী কন্যা ছিল। সমস্ত যৌবনকাল ধন উপাজন করিয়া অনুপ বদ্ধ বয়সে বিশ্রাম করিতেছিলেন। এখন কেবল তাঁহার একমাত্র ভাবনা ছিল যে, কন্যার বিবাহ দিবেন কোথায়। সৎপাত্র পান নাই ও বন্ধ বয়সের একমাত্র আশ্রয়স্থল কন্যাকে পরগহে পাঠাইতে ইচ্ছা নাই— তত্তজন্যও আজ কাল করিয়া আর তাঁহার দহিতার বিবাহ হইতেছে না। সঙ্গিনী-অভাবে কর্ণার কিছলমাত্র কষ্ট হইত না। সে এমন কাল্পনিক ছিল, কল্পনার স্বপেন সে সমস্ত দিন-রাত্রি এমন সুখে কাটাইয়া দিত যে, মহেতেমারও তাহাকে কষ্ট অনুভব করিতে হয় নাই। তাহার একটি পাখি ছিল, সেই পাখিটি হাতে করিয়া অন্তঃপরের পকেরিণীর পাড়ে কল্পনার রাজ্য নিমাণ করিত। কাঠবিড়ালির পশ্চাতে পশ্চাতে ছাটাছুটি করিয়া, জলে ফল ভাসাইয়া, মাটির শিব গড়িয়া, সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটাইয়া দিত। এক-একটি গাছকে আপনার সঙ্গিনী ভগ্নী কন্যা বা পত্র কল্পনা করিয়া তাহাদের সত্য-সতাই সেইরাপ যত্ন করিত, তাহাদিগকে খাবার আনিয়া দিত মালা পরাইয়া দিত, নানা প্রকার আদর করিত এবং তাদের পাতা শকাইলে, ফলে ঝরিয়া পড়িলে, অতিশয় ব্যথিত হইত। সন্ধ্যাবেলা পিতার নিকট যা-কিছ গলপ শনিত, বাগানে পাখিটিকে তাহাই শনানো হইত। এইরপে কর্ণা তাহার জীবনের প্রত্যুষকাল অতিশয় সনখে আরম্ভ করিয়াছিল। তাহার পিতা ও প্রতিবাসীরা মনে করিতেন যে, চিরকালই বুঝি ইহার এইরপে কাটিয়া যাইবে । কিছ দিন পরে কর্ণার একটি সঙ্গী মিলিল। অনপের অনাগত কোনো একটি বন্ধ ব্ৰাহ্মণ মরিবার সময় তাঁহার অনাথ পত্র নরেন্দ্রকে অনপেকুমারের হতে সপিয়া যান। নরেন্দ্র অনপের বাটীতে থাকিয়া বিদ্যাভ্যাস করিত, পত্রহীন অনুপ নরেন্দ্রকে অতিশয় স্নেহ করিতেন। নরেন্দ্রের মুখশ্ৰী বড়ো প্রীতিজনক ছিল না কিন্তু সে কাহারও সহিত মিশিত না, খেলিত না ও কথা কহিত না বলিয়া, ভালোমানষে বলিয়া তাহার বড়োই সংখ্যাতি হইয়াছিল। পল্লীময় রাষ্ট্র হইয়াছিল যে, নরেন্দ্রের মতো শান্ত শিষ্ট সবোধ বালক আর নাই এবং পাড়ায় এমন বন্ধ ছিল না যে তাহার বাড়ির ছেলেদের প্রত্যেক কাজেই নরেন্দ্রের উদাহরণ উত্থাপন না করিত। কিন্তু আমি তখনই বলিয়াছিলাম ষে, নরেন্দ্র, তুমি বড়ো ভালো ছেলে নও। কে জানে নরেন্দ্রের মুখশ্ৰী আমার কোনোমতে ভালো লাগিত না। আসল কথা এই অমন বাল্যবদ্ধ গভীর সবোধ শান্ত বালক আমার ভালো লাগে না। অনপেকুমারের পথাপিত পাঠশালায় রঘুনাথ সাবভৌম নামে এক গরমহাশয় ছিলেন। তিনি নরেন্দ্রকে অপরিমিত ভালোবাসিতেন, নরেন্দ্রকে প্রায় আপনার বাড়িতে লইয়া যাইতেন এবং অনপের নিকট তাহার যথেষ্ট প্রশংসা করিতেন।