উইকিসংকলন:সম্প্রদায়ের প্রবেশদ্বার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Jayantanth (আলোচনা | অবদান) +fixed |
অ কেয়ামতের ছোট বড় আলামত |
||
১ নং লাইন:
কেয়ামতের ছোট ও বড়
আলামতগুলো কী কী?
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
কেয়ামতের পূর্বে
কেয়ামতের নিকটবর্তিতার
প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো
প্রকাশ পাবে সেগুলোকে
ছোট আলামত ও বড় আলামত এই
পরিভাষাতে আখ্যায়িত করা
হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে
ছোট আলামতগুলো কেয়ামত
সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই
প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে
কোন কোন আলামত
ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে
নিঃশেষ হয়ে গেছে। কোন
কোন আলামত নিঃশেষ হয়ে
আবার পুনঃপ্রকাশ পাচ্ছে।
কিছু আলামত প্রকাশিত
হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে
প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। আর
কিছু আলামত এখনো প্রকাশ
পায়নি। কিন্তু নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সংবাদ অনুযায়ী
সেগুলো অচিরেই প্রকাশ
পাবে।
কেয়ামতের বড় বড় আলামত:
এগুলো হচ্ছে অনেক বড় বড়
বিষয়। এগুলোর প্রকাশ
পাওয়া প্রমাণ করবে যে,
কেয়ামত অতি নিকটে;
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার
সামান্য কিছু সময় বাকী
আছে।
আর ছোট ছোট আলামত:
কেয়ামতের ছোট আলামতের
সংখ্যা অনেক। এ বিষয়ে
অনেক সহিহ হাদিস উদ্ধৃত
হয়েছে। এখানে আমরা সম্পূর্ণ
হাদিস উল্লেখ না করে
হাদিসগুলোর শুধু প্রাসঙ্গিক
অংশটুকু উল্লেখ করব। কারণ
হাদিসগুলো উল্লেখ করতে
গেলে উত্তরের কলেবর অনেক
বড় হয়ে যাবে। যিনি আরো
বেশি জানতে চান তিনি এ
বিষয়ে রচিত গ্রন্থাবলী
পড়তে পারেন। যেমন- শাইখ
উমর সুলাইমান আল-
আশকারের“আলকিয়ামতুস
সুগরা”, শাইখ ইউসুফ
আলওয়াবেল এর“আশরাতুস
সাআ”ইত্যাদি।
কেয়ামতের ছোট ছোট
আলামতের মধ্যে রয়েছে-
১. নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের
নবুয়ত লাভ।
২. নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের
মৃত্যু।
৩. বায়তুল মোকাদ্দাস
বিজয়।
৪. ফিলিস্তিনের“আমও
য়াস”নামক স্থানে প্লেগ
রোগ দেখা দেয়া।
৫. প্রচুর ধন-সম্পদ হওয়া এবং
যাকাত খাওয়ার লোক না-
থাকা।
৬. নানারকম গোলযোগ
(ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া। যেমন
ইসলামের শুরুর দিকে উসমান
(রাঃ) এর হত্যাকাণ্ড
সংঘটিত হওয়া, জঙ্গে
জামাল ও সিফফিন এর যুদ্ধ,
খারেজিদের আবির্ভাব,
হাররার যুদ্ধ, কুরআন আল্লাহর
একটি সৃষ্টি এই মতবাদের
বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি।
৭. নবুয়তের মিথ্যা
দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ।
যেমন- মুসাইলামাতুল
কাযযাব ও আসওয়াদ আনসি।
৮. হেজাযে আগুন বের হওয়া।
সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি
৬৫৪হিঃ তে এই আগুন
প্রকাশিত হয়েছে। এটা ছিল
মহাঅগ্নি। তৎকালীন ও
তৎপরবর্তী আলেমগণ এই আগুনের
বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করেছেন। যেমন
ইমাম নববী
লিখেছেন-“আমাদের
জামানায় ৬৫৪হিজরিতে
মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে।
মদিনার পূর্ব পার্শ্বস্থকংকরময়
এলাকাতে প্রকাশিত হওয়া
এই আগুন ছিল এক মহাঅগ্নি। সকল
সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল
শহরের মানুষ তাওয়াতুর
সংবাদের ভিত্তিতে তা
অবহিত হয়েছে।
মদিনাবাসীদের মধ্যে এক
ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি
নিশ্চিত করেছেন,যিনি
নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ
করেছেন।”
৯. আমানতদারিতা না-
থাকা। আমানতদারিতা ক্ষুণ্ণ
হওয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে-
যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব
পালনের যোগ্য নয় তাকে
সে দায়িত্ব প্রদান করা।
১০. ইলম উঠিয়ে নেয়া ও
অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা।
ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে
আলেমদের মৃত্যু হওয়ার
মাধ্যমে। সহিহ বুখারি ও
সহিহ মুসলিম এর সপক্ষে
হাদিস এসেছে।
১১. ব্যভিচার বেড়ে
যাওয়া।
১২. সুদ ছড়িয়ে পড়া।
১৩. বাদ্য যন্ত্র ব্যাপকতা
পাওয়া।
১৪. মদ্যপান বেড়ে যাওয়া।
১৫. বকরির রাখালেরা সুউচ্চ
অট্টালিকা নির্মাণ করা।
১৬. কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয়
মনিবকে প্রসব করা। এই মর্মে
সহিহ বুখারি ও সহিহ
মুসলিমে হাদিস সাব্যস্ত
হয়েছে। এই হাদিসের
অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের
একাধিক অভিমত পাওয়া
যায়। ইবনে হাজার যে
অর্থটি নির্বাচন করেছেন
সেটি হচ্ছে- সন্তানদের
মাঝে পিতামাতার
অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে
দেখা দেয়া। সন্তান তার
মায়ের সাথে এমন
অবমাননাকর ও অসম্মানজনক
আচরণ করা যা একজন মনিব তার
দাসীর সাথে করে থাকে।
১৭. মানুষ হত্যা বেড়ে
যাওয়া।
১৮. অধিকহারেভূমিকম্পহওয়া।
১৯. মানুষের আকৃতি রূপান্তর,
ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর
পড়া।
২০. কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও
উলঙ্গ এমন নারীদের
বহিঃপ্রকাশ ঘটা।
২১. মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া।
২২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া
বেড়ে যাওয়া; সত্য সাক্ষ্য
লোপ পাওয়া।
২৩. নারীদের সংখ্যা
বেড়ে যাওয়া।
২৪. আরব ভূখণ্ড আগের মত তৃণভূমি
ও নদনদীতে ভরে যাওয়া।
২৫. একটি স্বর্ণের পাহাড়
থেকে ফোরাত (ইউফ্রেটিস)
নদীর উৎস আবিষ্কৃত হওয়া।
২৬. হিংস্র জীবজন্তু ও জড়
পদার্থ মানুষের সাথে কথা
বলা।
২৭. রোমানদের সংখ্যা
বৃদ্ধি পাওয়া এবং
মুসলমানদের সাথে তাদের
যুদ্ধ হওয়া।
২৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয়
হওয়া।
পক্ষান্তরে কেয়ামতের বড় বড়
আলামত হচ্ছে সেগুলো যা
নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হুযাইফা বিন আসিদ (রাঃ)
এর হাদিসে উল্লেখ
করেছেন। সে হাদিসে সব
মিলিয়ে ১০টি আলামত
উল্লেখ করা হয়েছে:
দাজ্জাল, ঈসা বিন মরিয়ম
(আঃ) এর নাযিল হওয়া,
ইয়াজুজ ও মাজুজ, পূর্বে
পশ্চিমে ও আরব উপদ্বীপে
তিনটি ভূমিধ্বস হওয়া,
ধোঁয়া, সূর্যাস্তের স্থান
হতে সূর্যোদয়, বিশেষ জন্তু,
এমন আগুনের বহিঃপ্রকাশ যা
মানুষকে হাশরের মাঠের
দিকে নিয়ে যাবে। এই
আলামতগুলো একটার পর একটা
প্রকাশ হতে থাকবে। প্রথমটি
প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত
পরেই পরেরটি প্রকাশ
পাবে।
ইমাম মুসলিম হুযাইফা বিন
আসিদ (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেন যে, একবার রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আমাদেরকে
কথাবার্তা বলতে দেখে
বললেন: তোমরা কি নিয়ে
আলাপ-আলোচনা করছ?
সাহাবীগণ বলল: আমরা
কেয়ামত নিয়ে আলোচনা
করছি। তখন তিনি
বললেন:নিশ্চয় দশটি আলামত
সংঘটিত হওয়ার আগে
কেয়ামত হবে না।তখন
তিনিধোঁয়া, দাজ্জাল,
বিশেষ জন্তু, সূর্যাস্তের
স্থান হতে সূর্যোদয়, ঈসা
বিন মরিয়মেরঅবতরণ, ইয়াজুজ-
মাজুজ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব
উপদ্বীপে তিনটি ভূমি ধ্বস
এবং সর্বশেষ ইয়েমেনে আগুন
যা মানুষকে হাশরের দিকে
তাড়িয়ে নিয়ে
যাবেউল্লেখ করেন।
এই আলামতগুলোর
ধারাবাহিকতা কী হবে
সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট সহিহ
কোন দলীল পাওয়া যায়
না। তবে বিভিন্ন দলিলকে
একত্রে মিলিয়ে এগুলোর
ধারাবাহিকতা নির্ধারণ
করা হয়ে থাকে।
শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা
হয়েছিল কেয়ামতের বড় বড়
আলামতগুলো কি
ধারাবাহিকভাবে আসবে?
জবাব দিতে গিয়ে তিনি
বলেন: কেয়ামতের
আলামতগুলোর মধ্যে কোন
কোনটির ধারাবাহিকতা
জানা গেছে; আর কোন
কোনটির ধারাবাহিকতা
জানা যায়নি।
ধারাবাহিক আলামতগুলো
হচ্ছে- ঈসা বিন মরিয়মের
অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজেরব
হিঃপ্রকাশ, দাজ্জালের
আত্মপ্রকাশ।
প্রথমে দাজ্জালকে
পাঠানো হবে। তারপর ঈসা
বিন মরিয়ম এসে দাজ্জালকে
হত্যা করবেন। তারপর ইয়াজুজ-
মাজুজ বের হবে।
সাফফারিনী (রহঃ) তাঁর
রচিত আকিদার গ্রন্থে এই
আলামতগুলোর
ধারাবাহিকতা নির্ধারণ
করেছেন। কিন্তু তাঁর
নির্ণয়কৃত এ ধারাবাহিকতার
কোন কোন অংশের প্রতি মন
সায় দিলেও সবটুকু অংশের
প্রতি মন সায় দেয় না। তাই
এই আলামতগুলোর
ধারাবাহিকতা আমাদের
কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের
কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-
কেয়ামতের বড় বড় কিছু
আলামত আছে। এগুলোর কোন
একটি প্রকাশ পেলে জানা
যাবে, কেয়ামত অতি
সন্নিকটে। কেয়ামত হচ্ছে-
অনেক বড় একটা ঘটনা। এই মহা
ঘটনার নিকটবর্তিতা সম্পর্কে
মানুষকে আগেভাগে সতর্ক
করা প্রয়োজন বিধায় আল্লাহ
তাআলা কেয়ামতের জন্য বেশ
কিছু আলামত সৃষ্টি করেছেন।
[মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড-২,
ফতোয়া নং- ১
|