সে/৪: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
+ |
+ |
||
২২৮ নং লাইন:
পাল্লারাম চোখ পাকিয়ে হাঁক দিয়ে বললে , জান না বটে ! ঐ যে তার তালি - দেওয়া আঁশ - বের - করা সবুজ রঙের এক পাটি পশমের মোজা কাদাসুদ্ধ শুকিয়ে গিয়ে মরা কাঠবেড়ালির কাটা লেজের মতো তোমার বইয়ের শেলফে ঝুলছে , ওটা ফেলে সে যাবে কোন্ প্রাণে ।
আমি বললুম , লোকসান সইবে না , যেখানে থাকে ফিরে আসবেই । কিন্তু হয়েছে কী ।
পাল্লারাম বললে , পরশুদিন সন্ধের সময় দিদি গিয়েছিল জঙ্গিলাটের বাড়ি । লাটগিন্নির সঙ্গে গঙ্গাজল পাতিয়েছে । ফিরে এসে দেখে , একটা ঘটি , একটা ছাতা , একজোড়া তাস , হারিকেন লণ্ঠন , আর একটা পাথুরে কয়লার ছালা নিয়ে কোথায় সে চলে গেছে । দিদি বাগান থেকে একঝুড়ি বাঁশের কোঁড়া , লাউডগা আর বেতোশাক তুলে রেখেছিল ; তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । দিদি ভারি রাগ করছে ।
আমি বললুম , তা আমি কী করব ।
পাল্লারাম বললে , তোমার এখানে কোথায় সে লুকিয়ে আছে , তাকে বের করে দাও ।
আমি বললুম , এখানে নেই , তুমি থানায় খবর দাও গে ।
নিশ্চয় আছে ।
আমি বললুম , ভালো মুশকিলে ফেললে দেখছি ! বলছি সে নেই ।
‘ নিশ্চয় আছে , নিশ্চয় আছে' বলতে বলতে পাল্লারাম আমার টেবিলের উপর দমাদ্দম তার বাঁশের লাঠির মুণ্ডটা ঠুকতে লাগল । পাশের বাড়িতে একটা পাগল ছিল , সে শেয়াল ডাকের নকল করে হাঁক দিল ‘হুক্কাহুয়া' । পাড়ার সব কুকুর চেঁচিয়ে উঠল । বনমালী আমার জন্যে এক গ্লাস বেলের শরবত রেখে গিয়েছিল , সেটা উল্টিয়ে বোতল ভেঙে বেগ্নি রঙের কালির সঙ্গে মিশে রেশমের চাদর বেয়ে আমার জুতোর মধ্যে গিয়ে জমল । চীৎকার করতে লাগলুম , বনমালী , বনমালী !
বনমালী ঘরে ঢুকেই পাল্লারামের চোহারা দেখে ‘বাপ রে' ‘মা রে' বলে চেঁচাতে চেঁচাতে দৌড় দিলে ।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল ; বললেম , সে গেছে কনের খোঁজ করতে ।
কোথায় ।
মজাদিঘির ধারে বাঁশতলায় ।
লোকটা বললে , সেখানে যে আমারই বাড়ি ।
তা হলে ঠিক হয়েছে । তোমার মেয়ে আছে ?
আছে ।
এইবার তোমার মেয়ের পাত্র জুটল ।
জুটল এখনো বলা যায় না । এই ডাণ্ডা নিয়ে ঘাড়ে ধরে তার বিয়ে দেব , তার পরে বুঝব কন্যাদায় ঘুচল ।
তা হলে আর দেরি কোরো না । কনে দেখার পরেই বরকে দেখা হয়তো সহজ হবে না ।
সে বললে , ঠিক কথা ।
একটা ভাঙা বালতি ছিল ঘরের বাইরে । সেটা ফস্ করে তুলে নিলে । জিগেস করলেম , ওটা নিয়ে কী হবে ।
ও বললে , বড়ো রোদ্দুর , টুপির মতো করে পরব ।
ও তো গেল । তখন কাক ডাকছে , ট্রামের শব্দ শুরু হয়েছে । বিছানা থেক ধড়ফড়্ করে উঠেই ডাক দিলেম বনমালীকে । জিগেস করলেম , ঘরে কে ঢুকেছিল ।
ও চোখ রগড়ে বললে , দিদিমণির বেড়ালটা ।
এই পর্যন্ত শুনে পুপেদিদি হতাশভাবে বললে , ও কী কথা দাদামশায় , তুমি যে বলছিলে , তুমি নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলে , তার পরে তোমার ঘরে এসেছিল পাল্লারাম ।
সামলে নিলুম । আর একটু হলেই বুদ্ধিমানের মতো বলতে যাচ্ছিলুম আগাগোড়া স্বপ্ন । সব মাটি হত । এখন থেকে পাল্লারামকে নিয়ে উঠে - পড়ে লাগতে হবে যেমন করে পারি । স্বপ্ন যখন বিধাতা ভাঙেন নালিশ খাটে না । আমরা ভাঙলে বড়ো নিষ্ঠুর হয় ।
পুপুদিদি বললে , দাদামশায় , ওদের দুজনের বিয়ে হল কি না বললে না তো কিছু ।
বুঝলুম , বিয়ে হওয়াটা জরুর দরকার । বললুম , বিয়ে না হয়ে কি রক্ষা আছে ।
তার পরে তোমার সঙ্গে ওদের দেখা হয়েছে কি ।
হয়েছে বৈকি । তখন ভোর সাড়ে চারটে , রাস্তার গ্যাস নেবে নি । দেখলুম , নতুন বউ তার বরকে ধরে নিয়ে চলেছে ।
কোথায় ।
নতুন বাজারে মানকচু কিনতে ।
মানকচু !
হ্যাঁ , বর আপত্তি করেছিল ।
কেন ।
বলেছিল , অত্যন্ত দরকার হলে বরঞ্চ কাঁঠাল কিনে আনতে পারি , মানকচু পারব না ।
তার পরে কী হল ।
আনতে হল মানকচু কাঁধে করে ।
খুশি হল পুপু ; বল্লে , খুব জব্দ !
</div>
[[Category:সে]]
|