পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৭: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১৩ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:
{{gap}}তার পর ১৮১১ খৃষ্টাব্দে “কৃষ্ণচন্দ্র চরিত” রচিত হয় এবং লণ্ডনে মুদ্রিত হইয়া প্রকাশিত হয়। রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায় ইহার রচয়িতা। কৃষ্ণচন্দ্র চরিতের ভাষা—“পরে নবাব মোহনদাসের বাক্য শ্রবণ করিয়া ভয়যুক্ত হইয়া সাবধানে থাকিয়া মোহনদাসকে পঁচিশ হাজার সৈন্য দিয়া অনেক আশ্বাস করিয়া পলাশীতে প্রেরণ করিলেন।” দীনেশবাবু ষে বলিয়াছেন “কৃষ্ণচন্দ্র চরিতের ভাষা খাঁটী বাঙ্গলা, ইহার উপর ইংরাজী গদ্যের কোন ভাব দেখা যায় না” তাহা ঠিক। বোধ হয় “কৃষ্ণচন্দ্র চরিতই” খাঁটী বাঙ্গলা ভাষার প্রথম গদ্য-সাহিত্য। ঠিক এই সময়ে বা কিছু পরে রামজয় তর্কালঙ্কার কর্ত্তৃক “সাংখ্য ভাষ্য”, লক্ষ্মীনারায়ণ ন্যায়ালঙ্কার কর্ত্তৃক “মিতাক্ষরা” ও কাশীনাথ তর্কপঞ্চানন কর্ত্তৃক “ন্যায়দর্শন” বঙ্গভাষায় লিখিত হয়।
{{gap}}তার পর ১৮১১ খৃষ্টাব্দে “কৃষ্ণচন্দ্র চরিত” রচিত হয় এবং লণ্ডনে মুদ্রিত হইয়া প্রকাশিত হয়। রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায় ইহার রচয়িতা। কৃষ্ণচন্দ্র চরিতের ভাষা—“পরে নবাব মোহনদাসের বাক্য শ্রবণ করিয়া ভয়যুক্ত হইয়া সাবধানে থাকিয়া মোহনদাসকে পঁচিশ হাজার সৈন্য দিয়া অনেক আশ্বাস করিয়া পলাশীতে প্রেরণ করিলেন।” দীনেশবাবু ষে বলিয়াছেন “কৃষ্ণচন্দ্র চরিতের ভাষা খাঁটী বাঙ্গলা, ইহার উপর ইংরাজী গদ্যের কোন ভাব দেখা যায় না” তাহা ঠিক। বোধ হয় “কৃষ্ণচন্দ্র চরিতই” খাঁটী বাঙ্গলা ভাষার প্রথম গদ্য-সাহিত্য। ঠিক এই সময়ে বা কিছু পরে রামজয় তর্কালঙ্কার কর্ত্তৃক “সাংখ্য ভাষ্য”, লক্ষ্মীনারায়ণ ন্যায়ালঙ্কার কর্ত্তৃক “মিতাক্ষরা” ও কাশীনাথ তর্কপঞ্চানন কর্ত্তৃক “ন্যায়দর্শন” বঙ্গভাষায় লিখিত হয়।


{{gap}}এই সময়ে কলেজের বাঙ্গলা পাঠ্য ছিল মৃতুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের “পুরুষ পরীক্ষা” “হিতোপদেশ” প্রভৃতি। বিদ্যালঙ্কার, তর্কালঙ্কার প্রভৃতি দেখিয়া পাঠকগণ অবশ্যই বুঝতে পারিতেছেন বে, সংস্কৃতজ্ঞ টোলের পণ্ডিত ছাড়া অন্য লোক বড় একটা সাহিত্য চর্চ্চা করিত না, তখনকার বাঙ্গলা লিখিতে হইলে রীতিমত সংস্কৃত শিক্ষা করিতে হইত তজ্জন্য তৎকালে ইহা একরূপ ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতেরই একচেটিয়া ছিল, কিন্তু এভাব বেশী দিন থাকিল না, ইহার কিছুদিন পরেই মহাত্মা রামমোহন রায় বঙ্গভাষার উন্নতিসাধনে মনোনিবেশ করেন এবং ঐকান্তিক চেষ্টায় অনেকটা সফলতা লাভ করেন। তাঁহারই অক্লান্ত পরিশ্রমে বাঙ্গলা সাহিত্য নব কলেবর ধারণ করিয়া উন্নতিমার্গে অগ্রসর হইতে থাকে। তাঁহার “পৌত্তলিক ধর্ম্মপ্রণালী,” “বেদান্তের অনুবাদ,” “কঠোপনিষদ,” “পথ্য প্রদান” প্রভৃতি গ্রন্থ তাহার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। এই সমস্ত পুস্তকের ভাষা সম্বন্ধে আমার আলোচনা করা বাহুল্য, কারণ রাজা রামমোহনের গ্রন্থ সাহিত্যসেবী মাত্রেরই অধীত। মহাত্মা রামমোহনের পর পাদরী কৃষ্ণমোহন ও ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল বাঙ্গলা ভাষায় কয়েকখানি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। পাদরী কৃষ্ণ বন্দ্যো “বিদ্যাকল্পদ্রুম” নামে একখানা মাসিক পত্রও প্রচার করেন।
{{gap}}এই সময়ে কলেজের বাঙ্গলা পাঠ্য ছিল মৃতুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের “পুরুষ পরীক্ষা” “হিতোপদেশ” প্রভৃতি। বিদ্যালঙ্কার, তর্কালঙ্কার প্রভৃতি দেখিয়া পাঠকগণ অবশ্যই বুঝিতে পারিতেছেন যে, সংস্কৃতজ্ঞ টোলের পণ্ডিত ছাড়া অন্য লোক বড় একটা সাহিত্য চর্চ্চা করিত না, তখনকার বাঙ্গলা লিখিতে হইলে রীতিমত সংস্কৃত শিক্ষা করিতে হইত তজ্জন্য তৎকালে ইহা একরূপ ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতেরই একচেটিয়া ছিল, কিন্তু এভাব বেশী দিন থাকিল না, ইহার কিছুদিন পরেই মহাত্মা রামমোহন রায় বঙ্গভাষার উন্নতিসাধনে মনোনিবেশ করেন এবং ঐকান্তিক চেষ্টায় অনেকটা সফলতা লাভ করেন। তাঁহারই অক্লান্ত পরিশ্রমে বাঙ্গলা সাহিত্য নব কলেবর ধারণ করিয়া উন্নতিমার্গে অগ্রসর হইতে থাকে। তাঁহার “পৌত্তলিক ধর্ম্মপ্রণালী,” “বেদান্তের অনুবাদ,” “কঠোপনিষদ,” “পথ্য প্রদান” প্রভৃতি গ্রন্থ তাহার সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। এই সমস্ত পুস্তকের ভাষা সম্বন্ধে আমার আলোচনা করা বাহুল্য, কারণ রাজা রামমোহনের গ্রন্থ সাহিত্যসেবী মাত্রেরই অধীত। মহাত্মা রামমোহনের পর পাদরী কৃষ্ণমোহন ও ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল বাঙ্গলা ভাষায় কয়েকখানি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। পাদরী কৃষ্ণ বন্দ্যো “বিদ্যাকল্পদ্রুম” নামে একখানা মাসিক পত্রও প্রচার করেন।


{{gap}}বড়লাট লর্ড হার্ডিং-এর নামে “বিদ্যাকল্পদ্রুম” উৎসৃষ্ট হইয়াছিল। সেই উৎসর্গপত্রের ভাষা দেখিলেই শত বৎসর পূর্ব্বের মাসিক পত্রের অবস্থা ও ভাষা কতকটা বুঝিতে পারা যাইবেঃ—“গৌড়ীয় ভাষাতে ইউরোপীয় বিদ্যার অনুবাদ যত বাঞ্ছনীয় তত সহজ নহে, অতএব অসাধ্য জ্ঞান করিয়া আমি অনেক দিন পর্য্যন্ত এ চেষ্টাতে বিরত ছিলাম; কিন্তু সম্প্রতি কেবল গবৰ্ণমেণ্ট সমীপে উৎসাহ পাইয়া উক্ত অনুবাদের প্রতিজ্ঞাতে পুনশ্চ প্রবৃত্ত হইলাম।”
{{gap}}বড়লাট লর্ড হার্ডিং-এর নামে “বিদ্যাকল্পদ্রুম” উৎসৃষ্ট হইয়াছিল। সেই উৎসর্গপত্রের ভাষা দেখিলেই শত বৎসর পূর্ব্বের মাসিক পত্রের অবস্থা ও ভাষা কতকটা বুঝিতে পারা যাইবেঃ—“গৌড়ীয় ভাষাতে ইউরোপীয় বিদ্যার অনুবাদ যত বাঞ্ছনীয় তত সহজ নহে, অতএব অসাধ্য জ্ঞান করিয়া আমি অনেক দিন পর্য্যন্ত এ চেষ্টাতে বিরত ছিলাম; কিন্তু সম্প্রতি কেবল গবৰ্ণমেণ্ট সমীপে উৎসাহ পাইয়া উক্ত অনুবাদের প্রতিজ্ঞাতে পুনশ্চ প্রবৃত্ত হইলাম।”