বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ/নবম পরিচ্ছেদ
নবম পরিচ্ছেদ





কাজে
মধ্য আফ্রিকায় কাজে একটি বিখ্যাত নগর। নগর বলিতা আমরা যাহা বুঝি, কাজে সেরূপ ছিল না। ছয়টা প্রকাণ্ড গহ্বরের মধ্যে কতকগুলি কুটীর লইয়া কাজে নগর। সুবৃহৎ গৃহগুলির পার্শ্বে কৃতদাসদিগের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটীর, গৃহের সম্মুখে বিস্তৃত প্রাঙ্গণ ও মুক্ত উদ্যান এবং উদ্যান-মধ্যে পলাণ্ডু, আলু, কুষ্মাণ্ড প্রভৃতির ক্ষেত্র কাজে নগরকে সুশোভিত করিয়া রাখিয়াছিল।
সে কালে কাজেই আফ্রিকাবিহারী বণিক্দিগের একটী অন্যতম প্রধান মিলনকেন্দ্র ছিল। দক্ষিণ হইতে কৃতদাস ও হস্তিদন্ত লইয়া বণিক্গণ তথায় আগমন করিত। পশ্চিমের বণিক্গণ তথা হইতে তুলা ও কাচনির্ম্মিত দ্রব্যাদি লইয়া যাইত। তাই তখন কাজের বিপণী সর্ব্বদা কোলাহলচঞ্চল থাকিত, শিঙ্গা দামামা প্রভৃতির ধ্বনিতে সর্বদা মুখরিত হইত—এখানে খচ্চর ও গর্দভের পৃষ্ঠে পণ্য বোঝাই করিয়া এক দল বণিক্ অপেক্ষা করিতেছে, সেখানে কেহ বা দাস-ব্যবসায়ে লিপ্ত, স্থানান্তরে কাচের বিনিময়ে হস্তিদন্ত বিক্রীত হইতেছে।
ধনাঢ্য বণিক্গণ পুত্র-কলত্র ও কৃতদাস লইয়া তথায় সুখে স্বচ্ছন্দে বাস করিত। ইহারাই আফ্রিকার অন্তর্বাণিজ্যে লিপ্ত হইয়া জীবিকা অর্জ্জন করিত। কেহ কেহ বা পণ্যাদি লইয়া আরবে পর্য্যন্তও গমন করিত।
অকস্মাৎ সেই কোলাহলচঞ্চল বিপণী নীরব হইল। ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই ঊদ্ধশ্বাসে পলায়ন করিয়া কুটীর মধ্যে আশ্রয় লইল—পণ্য পৃষ্ঠে করিয়া অশ্ব গর্দভ বা খচ্চর মুক্ত প্রান্তরে পড়িয়া রহিল। সকলেই বিস্মিত হইয়া দেখিল কি একটা বিরাট পদার্থ স্বর্গ হইতে ধীরে ধীরে নামিয়া আসিতেছে।
ভিক্টোরিয়া ক্রমেই নিম্নে আসিল। শেষে একটী বৃহৎ বৃক্ষের শাখায় নোঙ্গর আবদ্ধ করা হইল। নাগরিকগণ সশঙ্কচিত্তে একে একে, দুইয়ে দুইয়ে অদূরে সমবেত হইতে লাগিল । কেহ বা যাদুমন্ত্র উচ্চারণ করিতে লাগিল। কেহ বা যোদ্ধার ন্যায় দৃঢ় মুষ্টিতে অস্ত্র ধারণ করিল। কেহ বণিক্—পণ্যসম্ভার রক্ষায় নিযুক্ত হইল। স্ত্রীলোক বালক বৃদ্ধ সকলেই বিস্মিত হইয়া বেলুন ও বেলুনযাত্রীদিগকে দেখিতে লাগিল। দামামাগুলি বিপুল নিনাদে বাজিয়া উঠিল। নাগরিকগণ শেষে উর্দ্ধে হস্ত উত্তোলন করিয়া নবাগত যাত্রীদিগকে সম্মান প্রদর্শন করিতে লাগিল।
ফার্গুসন্ বলিলেন, “ওই দেখ ওরা আমাদের পূজা করছে। ওদের পূজা-পদ্ধতিই এই রকম।”
অকস্মাৎ একজন যাদুকরের নির্দেশে বাদ্যধ্বনি থামিয়া গেল। যাত্রীদিগের উদ্দেশে সে কি যেন বলিল। কেহই তাহার কথা বুঝিতে পারিলেন না। ফার্গুসন্ তখন দুই চারিটী আরব্য শব্দ উচ্চারণ করিলেন। যাদুকরও তখন আরব্য ভাষায় একটী নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা করিল। ফার্গুসন্ সঙ্গীদিগকে কহিলেন—
“ওরা মনে করেছে বেলুনটা চন্দ্র। আমরা তিন জন চন্দ্রের তিনটা ছেলে। ওদের দেশে সূর্য্যের পূজা হয়। চন্দ্র যে অনুগ্রহ করে’ সূর্য্যের দেশে এসেছেন তা’তে ওরা নিজেদের কৃতার্থ মনে করছে।”
নীরব থাকা উচিত নহে বিবেচনায় ফার্গুসন্ও আরব্য ভাষায় কহিলেন,— “সহস্র বৎসর পর চন্দ্র একবার করে’ তাঁর রাজ্য দেখতে আসেন। তাঁকে যারা পূজা করে, তাদেরও দেখে যান। তোমাদের যদি কোন বর থাকে প্রার্থনা কর।”
যাদুকর কহিল, “আমাদের সুলতান অনেকদিন থেকে পীড়ায় শয্যাশায়ী। আপনারা তাঁকে রক্ষা করুন।”
ফার্গুসন্ কহিলেন, “তথাস্তু।”
কেনেডি বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “তুমি কি তবে সেই সুলতানকে দেখতে যাবে?”
“হাঁ যাব। লোকগুলো ভাল বলেই বোধ হচ্ছে। কোন বিপদের আশঙ্কা নাই।”
“কি জানি ভাই—বলা যায় কি!”
“কোন ভয় নাই ডিক্। বার্টন্ এবং স্পিক্ এখানে এসেছিলেন। তাঁরা লিখে গেছেন যে, এরা খুব যত্ন করে’ অতিথি সৎকার করেছিল।”
“তুমি যেয়ে কি করবে?”
“একটু ঔষধ সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি।” এই বলিয়া ফার্গুসন সেই চঞ্চল জনসঙ্ঘকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন—
“সুলতানের উপর চন্দ্রের দয়া হয়েছে; চল, পথ দেখাও।”
মুহূর্ত্তমধ্যে চতুর্দ্দিকে বিপুল উল্লাসের চিহ্ন দেখা গেল। চীৎকার, গীত-বাদ্য প্রভৃতি মুহূর্ত্তে সেই নীরব স্থানকে ধ্বনিত করিয়া তুলিল। নাগরিকগণ পিপীলিকাশ্রেণীবৎ অগ্রসর হইল।
ফার্গুসন্ বন্ধুকে কহিলেন, “যে কোন বিপদ্ মুহূর্ত্তে আসতে পারে। চক্ষের নিমেষে যাতে আমরা যেতে পারি তা’র জন্য প্রস্তুত থাক। তুমি গ্যাস-নলে অল্পে অল্পে তাপ দাও যেন বেলুন নিমেষে বহু উচ্চে উঠতে পারে। নোঙ্গরটা শক্ত করে’ই বাঁধা আছে—গ্যাস উত্তপ্ত হ’বে বলে’ ভয় নাই। জো নীচে নেমে যাও। তুমি মইটার কাছে থাকবে।”
কেনেডি কহিলেন, “ফার্গুসন, সেই বুড়ো কাফ্রিটাকে দেখতে তুমি তবে একাই যাবে?”
জো কাতর কণ্ঠে কহিল, “আমাকেও কি সঙ্গে নেবেন না?” “আমি একাই যাই। আমার জন্য ভেব না। তোমরা ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আমার উপদেশ মত সব ঠিক রাখ।”
কাফ্রিদিগের চীৎকার ক্রমেই উচ্চ হইতে উচ্চতর হইতেছিল। তাহারা যেন ক্রমেই অধৈর্য্য হইতে লাগিল। ফার্গুসন্ আর বিলম্ব না করিয়া ঔষধের বাক্সটী লইয়া বেলুন হইতে অবতরণ করিলেন। রাজ-কুটীর নগর হইতে একটু দূরে অবস্থিত ছিল বেলা তখন ৩টা বাজিয়াছিল। ফার্গুসন্ গম্ভীর পাদবিক্ষেপে চলিতে লাগিলেন। কিছুদূর অগ্রসর হইতে না হইতেই সুলতানের পুত্র আসিয়া তাঁহাকে ভূলুণ্ঠিত হইয়া প্রণাম করিল। ফার্গুসন্ ললিত অঙ্গভঙ্গী করিয়া তাহাকে ভূমিতল হইতে উঠিতে বলিলেন।
শোভাযাত্রা ছায়াচ্ছন্ন পথে ঘুরিতে ঘুরিতে অবশেষে রাজপুরীর নিকটবর্ত্তী হইল। উহা শৈলপার্শ্বে নির্ম্মিত। গৃহপ্রাচীর রক্তাভ মৃত্তিকায় চিত্রিত সর্প ও মনুষ্যের মূর্ত্তিতে সুশোভিত। গৃহের ছাদ প্রাচীরের উপর ন্যস্ত ছিল বলিয়া গৃহমধ্যে উপর দিয়া বাতাস খেলিতেছিল। কক্ষমধ্যে বায়ুপ্রবেশের আর অন্যপথ ছিল না।
রাজরক্ষিগণ, রাজপরিষদবর্গ এবং রাজাত্মীয়গণ ও সমবেত জনমণ্ডলী ফার্গুসন্কে সসম্মানে অভ্যর্থনা করিল। তিনি দেখিলেন তাহাদিগের কেশদাম বেণীর ন্যায় অংসোপরি পতিত হইয়া দুলিতেছে। গণ্ডদেশ কালো লাল প্রভৃতি বিভিন্ন বর্ণে রঞ্জিত। তাহাদিগের কর্ণ অতি বৃহৎ। সেই বৃহৎ কর্ণের ছিদ্রে কাষ্ঠের চাকতি ঝুলিতেছে। উজ্জ্বলবর্ণের বসন পরিধান করিয়া কেহ বা সসম্ভ্রমে দূরে দণ্ডায়মান রহিয়াছে। সৈনিকগণ তীক্ষ্ণ বিষবাণ এবং অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র তরবারি লইয়া সগর্ব্বে দণ্ডায়মান রহিয়াছে। কাহারো বক্র দীর্ঘ তরবারি এবং সুশোভিত কুঠার তপন-কিরণে জ্বলিতেছে। ফার্গুসন্ গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন।
তাঁহাকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া সকলে জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল। রাজরমণীগণ তাঁহাকে অভিবাদন করিল। পিত্তল-নির্ম্মিত বাদ্যযন্ত্র ‘উপাতু’ অর্মান ঝন্ ঝন্ করিয়া বাজিতে লাগিল। জয়ডঙ্কা ‘কিলিন্দো’র গভীর নিনাদে দিঙ্মণ্ডল পূর্ণ হইয়া উঠিল। রমণীগণ দেখিতে সুশ্রী। তাহারা দীর্ঘ নলে ধূমপান করিতে করিতে হাসিতেছিল। ছয়টী রমণী অন্যান্য রমণীদিগের নিকট হইতে একটু দূরে স্বতন্ত্রভাবে বসিয়াছিল। সুলতানের মৃত্যুর পর তাহার সহিত ইহারাও জীবন্ত সমাহিত হইবে বলিয়া নির্দ্দিষ্ট হইয়াছিল। মৃত্যুর পর পরলোকেও সুলতানের তৃপ্তির জন্য এইরূপ ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল!
ফার্গুসন্ রোগকাতর সুলতানের নিকটবর্তী হইলেন। দেখিলেন ৪০ বর্ষ বয়স্ক একটী অতিরুগ্ন লোক কাষ্ঠনির্ম্মিত একখানি অতি সাধারণ পালঙ্কে শয়ন করিয়া আছে। ফার্গুসন্ দেখিয়াই বুঝিলেন দীর্ঘকালের ব্যসনে ও অপরিমিত সুরাপানে তাহার জীবনীশক্তি ফুরাইয়া আসিয়াছে। তাহার সে শক্তিহীন দেহে নব বল দিতে পারে এমন সাধ্য কাহারো ছিল না। সুলতানকে যে শীঘ্রই মরিতে হইবে সে বিষয়ে আর তিলমাত্র সন্দেহ ছিল না। ফার্গুসন্ তাহাকে তীব্র ঔষধ পান করাইলেন। অল্পক্ষণের জন্য তাহার চৈতন্য ফিরিয়া আসিল। সুলতান দুই একবার হস্তপদ সঞ্চালন করিল দেখিয়া রাজপরিবারের আনন্দের সীমা রহিল না। ফার্গুসন্ আর অপেক্ষা না করিয়া ত্বরিতপদে কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন।
জো এতক্ষণ পর্য্যন্ত বেলুনের রজ্জু-মইয়ের নিকট অবস্থিত থাকিয়া কৌতূহলী কাফ্রিদিগের নিকট দেবপূজা লাভ করিতেছিল। যুবতীরা তাহাকে ঘিরিয়া নৃত্য করিতে লাগিল। কেহ বা গান গাহিতে আরম্ভ করিল। স্বর্গের নৃত্য নরলোকে দেখাইবার মানসে জো-ও সেই তালে তালে নাচিতে লাগিল। তাহার হস্তভঙ্গী, চরণবিক্ষেপ, মুখভঙ্গী ও অঙ্গসঞ্চালন দেখিয়া কাফ্রিগণ মনে করিল আহা! স্বর্গের নৃত্য কি সুন্দর! তাহারাও জো'র অনুকরণ করিয়া নৃত্য করিতে লাগিল।
অকস্মাৎ চতুর্দ্দিকে ভীষণ কোলাহল শ্রুত হইল। জো দেখিল নাগরিকগণ ও যাদুকরগণ উত্তেজিত হইয়া উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করিতে করিতে বেলুনের দিকে অগ্রসর হইতেছে। ফার্গুসন্ সকলের অগ্রে অতিশয় ক্ষিপ্রচরণে আগমন করিতেছেন। জো প্রমাদ গণিল।
ফার্গুসন্ ও জো অবিলম্বে বেলুনে উঠিলেন। কুসংস্কারসঞ্জাত ভীতি সেই উত্তেজিত নাগরিকদিগকে তখনো বেলুন হইতে দূরে রাখিয়াছিল। কেনেডি ব্যগ্র হইয়া কহিলেন—
“ফার্গুসন্ ব্যাপার কি? সুলতান মরেছে না কি?”
“না মরে নাই। ডিক্, আর মুহূর্ত্ত বিলম্ব নয়— নোঙ্গর খোলার আর সময় নাই—বেলুন ছাড়—নোঙ্গর কেটে দাও।”
“কেন? হয়েছে কি?”
কেনেডি আপন বন্দুক তুলিয়া লইলেন।
ফার্গুসন্ কহিলেন “রাখ—রাখ— বন্দুক রাখ।” তিনি আকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া বলিলেন, “ওই দেখ।”
“কি দেখব?”
“আকাশে চন্দ্র দেখছ না?”
চন্দ্রদেব তখন নির্ম্মল আকাশতল আলোকিত করিয়া ধীরে ধীরে উঠিতেছিলেন।
কাফ্রিগণ গর্জ্জন করিয়া উঠিল। আকাশে কখনো দুইটা চন্দ্র দেখা যায় না। সুতরাং তাহারা যে প্রতারিত হইয়াছে, ইহা বুঝিতে তাহাদের আর বিলম্ব হইল না। পলায়মান প্রতারকদিগকে শাস্তি দিবার জন্য তাহারা রোষদীপ্ত হইয়া উঠিল। কেহ ধনুকে শর সংযোগ করিল, কেহ বা বন্দুক উঠাইল। একজন যাদুকর ইঙ্গিতে সকলকে শান্ত হইতে বলিয়া বেলুনের নোঙ্গরটি ধরিবার জন্য বৃক্ষোপরি আরোহণ করিতে লাগিল।
জো দড়ি কাটিবার জন্য অস্ত্র উঠাইল।
ফার্গুসন্ কহিলেন- “থাম।”
“কাফ্রিটা যে উঠছে—”
“উঠতে দাও। নোঙ্গরটা বাঁচাতে পারি কি না দেখি। কাটার ঢের সময় পাওয়া যাবে। ঠিক—হুসিয়ার! গ্যাস ঠিক আছে?”
“আছে।”
যাদুকর নোঙ্গরের নিকটবর্ত্তী হইল দেখিয়া কাফ্রিগণ উল্লাসে জয়ধ্বনি করিতে লাগিল। সে উৎসাহিত হইয়া নোঙ্গরটি বন্ধনমুক্ত করিল। মুক্ত হইবামাত্র ভিক্টোরিয়া একবার কম্পিত হইল, তাহার পর কাফ্রিকে লইয়াই শূন্যে উঠিল। যাহারা রোষে গর্জ্জন করিতেছিল, তাহারা সঙ্গীর অবস্থা দেখিয়া কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া গেল।
ভিক্টোরিয়া যতই উচ্চে উঠিতে লাগিল, জো ততই আনন্দে করতালি দিতে দিতে হাসিতে লাগিল— হি হি হি।
কেনেডি কহিলেন “লোকটা ত নোঙ্গর ধরে’ বেশ ঝুলে আছে দেখছি।”
জো বলিল, “আর কেন, ওকে ছেড়ে দেওয়া যাক—দড়িটা কেটে দি।”
বাধা দিয়া ফার্গুসন্ বলিলেন, “না— না—কাজ নাই, আর কিছু দূর গিয়া ওকে নামিয়ে দিলেই চলবে, স্বজাতিদের মধ্যে তা’ হ’লে ওর জহুরা বেড়ে যাবে।”
দেখিতে দেখিতে ভিক্টোরিয়া কাজে নগর অতিক্রম করিল। কাফ্রি তখনো নোঙ্গর ধরিয়া ঝুলিয়া ছিল। ফার্গুসন্ যখন দেখিলেন নিকটে আর গ্রাম বা মনুষ্যবাসের কোন চিহ্ন পর্য্যন্ত নাই, তখন ধীরে ধীরে উত্তাপ হ্রাস করিতে লাগিলেন। বেলুনের গ্যাস ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হইতে লাগিল। বেলুন অল্পে অল্পে নামিতে আরম্ভ করিল—শেষে ভূপৃষ্ঠ হইতে ১৫।১৬ হস্ত মাত্র উপরে আসিয়া দাঁড়াইল। কাফ্রি যাদুকর তখন নোঙ্গর ছাড়িয়া ভূতলে লম্ফ প্রদান করিল এবং ভূমিস্পর্শ করিবামাত্র উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল।