বেল্লিক রামায়ণ/দর্পের মাতৃভক্তির কথা

দর্পের মাতৃভক্তির কথা।

দর্প কহে, “শুনিবারে যদ্যপি বাসনা।
মম মাতৃভক্তি তবে শুনহ বর্ণনা॥
আমার মতন কেহ পারে না করিতে।
দাসীবৃত্তি ক’রে খায় সে পর গৃহেতে॥

দাসীবৃত্তি ক’রে মোরে মানুষ করিল।
অথচ আমার অন্ন সে ত না পাইল॥
যে দাসী সে দাসী আজো আছে পর স্থানে।
আমি না খাইতে তারে দিব ত জীবনে॥
আছে ত গতর তার পরে কেন দিবে।
আপন খোরাক সেই আপনি করিবে॥
একদিন বলেছিল বড় মুখ কোরে।
‘হ্যাঁরে বাবা, খেতে তুই দিবি না আমারে॥
কত কষ্টে তোরে আমি করিনু মানুষ।
তোর কি হয়নি একটুকু তাহে হুঁস॥
তাহা ছাড়া দশমাস দশদিন আর।
ধরেছি গর্ভেতে তোরে কত কষ্ট তার॥
সে ভেবে হয় না দয়া কিছু কিরে তোর।
না চাস্ কিছুতে দুঃখ ঘুচাইতে মোর॥’
কহিনু তাহাতে আমি শোন্ অভাগিনী।
তোর কার্য্য করিতে ত আমি জনমিনি॥
নিজ সুখোদয় করি কামনা অন্তরে।
তবে ত পেটেতে তুমি ধরেছ আমারে॥
তাহাতে যদ্যপি কষ্ট হয়ে কিছু থাকে।
অবশ্য সয়েছ তাহা কি কহ আমাকে॥
কেবা না সহে এমন দুনিয়া ভিতরে।
অধিক কি আর তুমি কর মম তরে॥

যতদিন শক্তি আছে দেহেতে তোমার।
ততদিন কর কার্য্য এমন প্রকার॥
নিতান্ত অশক্ত তার পর যদি হবে।
পশ্চাতে ভাবিয়া যাহা হােক দেখা যাবে॥
ভিক্ষা করিলেও পার করিতে তখন।
যা হােক সে সব কথা নহে ত এখন॥’
এইমত কহি তারে দিয়েছি তাড়ায়ে।
বিচারো হে এইবার ভক্তি পরিচয়ে॥
পারি কি না পারি হতে তর সঙ্গী আমি।
দয়া করি যাহা হােক কহ এবে তুমি॥”
কহিল নিরেটরাম তবে ত দর্পেরে।
“তাবশ্যই সঙ্গী আমি করিব তােমারে॥
তুমিই আমার যােগ্য বুঝিনু বিশেষ।
থাকিলে আমার সঙ্গে হবে সুখ বেশ॥
চল তবে যাই আজি দেখাই সে নারী।
হয় কি না হয় সেই বাঞ্ছিত তােমারি॥
তরে এক কথা ভাই কর সত্য আগে।
ছাড়া পেলে কদাচ নাহিক যাবে ভেগে॥
সময় ফুরালে যাবে নহে কদাচ না।
অন্যায় করে ত তুমি কভু মজাবে না॥
বৎসর হইলে পূর্ণ যেতে সবে পাব।
নতুবা যেমন আছি এমনি থাকিব॥

যদি ছাড়া পেয়ে মােরা আর নাহি আসি।
নিশ্চিত দারােগা প্রমাণিত হবে দোষী॥
ভাবসাব হয়েছে দিতেছে তাই ছেড়ে।
পুনশ্চ আসিব কার্য্য সাধি এই খোঁড়ে॥
আছয়ে আমার সঙ্গে এ বলা কওয়া।
প্রতি বার ছাড়া তরে যাবে কিছু দেওয়া॥
কহিয়ে গিয়াছি যতবার আমি ঘর।
ততবার দিছি ওরে তিনটি মােহর॥
চল এই বেলা যাই দেখাই তােমারে।
সেই নারী এই কি না দিব তারে ধােরে॥”
শুনিয়ে পুলকে দর্প যােড় করি হাত।
নিরেটরামেরে তবে করে প্রণিপাত॥
পরে সেইদিন সন্ধ্যাকালে দুইজনে।
বাহির হইল আবাগীর দরশনে॥
দেখিয়া দর্পের আর ধরে না আনন্দ।
ছুটিয়া যাইল কাছে—নহে গতি মন্দ॥
ভয়েতে আবাগী পড়ে ভূতলে মূর্চ্ছিত।
কিছুক্ষণ মুখে আর না সরে সম্বিত॥
ধরাধরি করি দোঁহে তােলে তবে কাঁধে।
হায় কালরাহু যেন গরাসিল চাঁদে॥
নিরেটের বাড়ী হয় অতি নিকটেই।
রেখে আসে দোঁহে তারে সেই বাড়ীতেই॥

রহিল আদেশ, নিরেটের স্ত্রীর প্রতি।
ঘুণাক্ষরে কেহ যেন না জানে ভারতী॥
অতি গোপনেতে এরে রাখিবে হেথায়।
যতদিন ফিরিয়ে না আসি পুনরায়॥
নিরেটের পত্নী তাহে স্বীকৃত হইল।
জেলখানা ঘরে তারা পুনঃ হেসে গেল॥
পুরস্কার যথারীতি দিয়ে দারোগায়।
সুখেতে দুজনে তথা বরষ কাটায়॥
যেথা খুসি, যবে খুসী—যখন তখন।
স্বচ্ছন্দে করিত তারা গমনাগমন॥
কেহ না বারিত দ্বার তাদের দুজনে।
পলাতে তাদের নাহি হইত গোপনে॥
হায় রে টাকার লোভ—ধন্য খেলা তব।
তোমার সমান আর কোথা কারে পাব॥
অভাগী হরণ হয়ে যষ্ঠকাণ্ড শেষ।
সপ্তম আরম্ভ এবে কাণ্ডমধ্যে বেশ॥
বেল্লিকের রামায়ণ সুমধুর তাতি।
কোথা আর পাবে হেন অপূর্ব্ব ভারতী॥


{{dhr}