বৌ-ঠাকুরাণীর হাট/সপ্তম পরিচ্ছেদ

সপ্তম পরিচ্ছেদ।

 চন্দ্রদ্বীপের রাজা রামচন্দ্র রায় তাঁহার রাজ-কক্ষে বসিয়া আছেন। ঘরটি অষ্টকোণ। কড়ি হইতে কাপড়ে মােড়া ঝাড় ঝুলিতেছে। দেয়ালের কুলঙ্গির মধ্যে একটাতে গণেশের ও বাকিগুলিতে শ্রীকৃষ্ণের নানা অবস্থার নানা প্রতিমূর্ত্তি স্থাপিত। সেগুলি বিখ্যাত কারিকর বটকৃষ্ণ কুম্ভকারের স্বহস্তে গঠিত। চারিদিকে চাদর পড়িয়াছে, মধ্যস্থলে জরিখচিত মছলন্দের গদি, তাহার উপর একটি রাজা ও একটা তাকিয়া। তাহার চারি কোণে জরির ঝালর। দেয়ালের চারিদিকে দেশী আয়না ঝুলানাে, তাহাতে মুখ ঠিক দেখা যায় না। রাজার চারিদিকে যে সকল মনুষ্য-আয়না আছে, তাহাতেও তিনি মুখ ঠিক দেখিতে পান না, শরীরের পরিমান অত্যন্ত বড় দেখায়। রাজার বামপার্শ্বে এক প্রকাণ্ড আলবােলা ও মন্ত্রী হরিশঙ্কর। রাজার দক্ষিণে রমাই ভাঁড়, ও চস্‌মা-পরা সেনাপতি ফর্ণাণ্ডিজ্।

 রাজা বলিলেন, “ওহে রমাই!”

 রমাই বলিল, “আজ্ঞা, মহারাজ!”

 রাজা হাসিয়া আকুল। মন্ত্রী রাজার অপেক্ষা অধিক হাসিলেন। ফর্ণাণ্ডিজ্‌ হাততালি দিয়া হাসিয়া উঠিল। সন্তোষে রমাইয়ের চোখ মিট্‌মিট্‌ করিতে লাগিল। রাজা ভাবেন রমাইয়ের কথায় না হাসিলে অরসিকতা প্রকাশ পায়; মন্ত্রী ভাবেন, রাজা হাসিলে হাসা কর্ত্তব্য; ফর্ণাণ্ডিজ্ ভাবে অবশ্য হাসিবার কিছু আছে। তাহা ছাড়া যে দুর্ভাগ্য, রমাই ঠোঁট খুলিলে দৈবাৎ না হাসে, রমাই তাহাকে কাঁদাইয়া ছাড়ে। নহিলে রমাইয়ের মান্ধাতার সমবয়স্ক ঠাট্টাগুলি শুনিয়া অল্প লােকেই আমােদে হাসে। তবে, ভয়ে ও কর্ত্তব্য-জ্ঞানে সকলেরই বিষম হাসি পায়, রাজা হইতে আরম্ভ করিয়া দ্বারী পর্য্যন্ত।

 রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “খবর কি হে?”

 রমাই ভাবিল রসিকতা করা আবশ্যক।

 “পরম্পরায় শুনা গেল, সেনাপতি মহাশয়ের ঘরে চোর পড়িয়াছিল।”

 সেনাপতি মহাশয় অধীর হইয়া উঠিলেন। তিনি বুঝিলেন একটা পুরাতন গল্প তাঁহার উপর দিয়া চালাইবার চেষ্টা হইতেছে। তিনি রমাইয়ের রসিকতার ভয়ে যেমন কাতর, রমাই প্রতিবারে তেমনি তাঁহাকেই চাপিয়া ধরে। রাজার বড়ই আমােদ! রমাই আসিলেই ফর্ণাণ্ডিজ্‌কে ডাকিয়া পাঠান। রাজার জীবনে দুইটি প্রধান আমােদ আছে; এক ভেড়ার লড়াই দেখা, আর রমাইয়ের মুখের সামনে ফর্ণাণ্ডিজ্‌কে স্থাপন করা। রাজকার্য্যে প্রবেশ করিয়া অবধি সেনাপতির গায়ে একটা ছিটাগুলি বা তীরের আঁচড় লাগে নাই। অনবরত হাস্যের গোলাগুলি খাইয়া সে ব্যক্তি কাঁদ’ কাঁদ’ হইয়া আসিয়াছে। পাঠকের মার্জ্জনা করিবেন, আমরা রমাইয়ের সকল রসিকতাগুলি লিপি-বদ্ধ করিতে পারিব না, সুরুচির অনুরােধে অধিকাংশ স্থলই পরিত্যাগ করিতে হইবে।

 রাজা চোখ টিপিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তার পরে?”

 “নিবেদন করি মহারাজ! (ফর্ণাণ্ডিজ তাঁহার কোর্ত্তার বােতাম খুলিতে লাগিলেন ও পরিতে লাগিলেন।) আজ দিন তিন চার ধরিয়া সেনাপতি মহাশয়ের ঘরে রাত্রে চোর আনাগোনা করিতেছিল। সাহেবের ব্রাহ্মণী জানিতে পারিয়া কর্ত্তাকে অনেক ঠেলাঠেলি করেন, কিন্তু কোন মতেই কর্ত্তার ঘুম ভাঙাইতে পারেন নাই।”

 রাজা। “হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।”

 মন্ত্রী। “হােঃ হােঃ হােঃ হােঃ হােঃ হােঃ।”

 সেনাপতি। “হিঃ হিঃ।”

 “দিনের বেলা গৃহিণীর নিগ্রহ আর সহিতে না পারিয়া যােড়হস্তে কহিলেন, “দোহাই তােমার, আজ, রাত্রে চোর ধরিব।” রাত্রি দুই দণ্ডের সময় গৃহিণী বলিলেন, “ওগাে চোর আসিয়াছে!” কর্ত্তা বলিলেন, “ওই যাঃ, ঘরে যে আলাে জ্বলিতেছে! চোর যে আমাদের দেখিতে পাইবে ও দেখিতে পাইলেই পালাইবে।” চোরকে ডাকিয়া কহিলেন, “আজ তুই বড় বাঁচিয়া গেলি। ঘরে আলাে আছে, আজ নিরাপদে পালাইতে পারিবি, কাল আসিস্ দেখি, অন্ধকারে কেমন না ধরা পড়িস্।”

 রাজা “হা হা হা হা!”

 মন্ত্রী “হােহােহােহােহো!”

 সেনাপতি। “হি।”

 রাজা বলিলেন, “তার পরে?”

 রমাই দেখিল, এখনাে রাজার তৃপ্তি হয় নাই। “জানি না, কি কারণে চোরের যথেষ্ট ভয় হইল না। তাহার পর রাত্রেও ঘরে আসিল। গিন্নি কহিলেন, “সর্ব্বনাশ হইল, ওঠ।” কর্ত্তা কহিলেন “তুমি ওঠ না!” গিন্নি কহিলেন “আমি উঠিয়া কি করিব?” কর্ত্তা বলিলেন, “কেন; ঘরে একটা আলাে জ্বালাও না। কিছু যে দেখিতে পাই না!” গিন্নি বিষম ক্রুদ্ধ; কর্ত্তা ততােধিক ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, “দেখ দেখি, তােমার জন্যইত যথাসর্ব্বস্ব গেল। আলােটা জ্বালাও বন্দুকটা আন!” ইতি মধ্যে চোর কাজকর্ম্ম সারিয়া কহিল, “মহাশয়, এক ছিলাম তামাকু খাওয়াইতে পারেন! বড় পরিশ্রম হইয়াছে।” কর্ত্তা বিষম ধমক দিয়া কহিলেন “রােস্ বেটা! আমি তামাক সাজিয়া দিতেছি। কিন্তু আমার কাছে আসিবি ত এই বন্দুকে তাের মাথা উড়াইয়া দিব।” তামাক খাইয়া চোর কহিল “মহাশয়, আলােটা যদি জ্বালেন ত উপকার হয়। সিঁধকাটিটা পড়িয়া গিয়াছে খুঁজিয়া পাইতেছি না।” সেনাপতি কহিলেন “বেটার ভয় হইয়াছে। তফাতে থাক্, কাছে আসিস্ না।” বলিয়া তাড়াতাড়ি আলো জ্বলিয়া দিলেন। ধীরে সুস্থে জিনিষ পত্র বাঁধিয়া চোর চলিয়া গেল। কর্ত্তা গিন্নিকে কহিলেন “বেটা বিষম ভয় পাইয়াছে।”

 রাজা ও মন্ত্রী হাসি সামলাইতে পারেন না। ফর্ণাণ্ডিজ্ থাকিয়া থাকিয়া মাঝে মাঝে “হিঃ হিঃ” করিয়া টুক্‌রা টুক্‌রা হাসি টানিয়া টানিয়া বাহির করিতে লাগিলেন।

 রাজা কহিলেন “রমাই, শুনিয়াছ আমি শ্বশুরালয়ে যাইতেছি?”

 রমাই মুখভঙ্গী করিয়া কহিল, “অসারং খলু সংসারং সারং শ্বশুরমন্দিরং (হাস্য। প্রথমে রাজা, পরে মন্ত্রী, পরে সেনাপতি।) কথাটা মিথ্যা নহে। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া) শ্বশুরমন্দিরের সকলি সার,—আহারটা, সমাদরটা; দুধের সরটি পাওয়া যায়, মাছের মুড়টি পাওয়া যায়; সকলি সার পদার্থ। কেবল সর্ব্বাপেক্ষা অসার ঐ স্ত্রীটা!”

 রাজা হাসিয়া কহিলেন “সে কিহে, তােমার অর্দ্ধাঙ্গ”—

 রমাই যােড়হস্তে ব্যাকুলভাবে কহিল, “মহারাজ তাহাকে অর্দ্ধাঙ্গ বলিবেন না। তিন জন্ম তপস্যা করিলে আমি বরঞ্চ, এক দিন তাহার অর্দ্ধাঙ্গ হইতে পারিব, এমন ভরসা আছে। আমার মত পাঁচটা অর্দ্ধাঙ্গ জুড়িলেও তাহার আয়তনে কুলায় না!” (যথাক্রমে হাস্য) কথাটার রস আর সকলেই বুঝিল, কেবল মন্ত্রী পারিলেন না, এই নিমিত্ত মন্ত্রীকে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক হাসিতে হইল।

 রাজা কহিলেন, “আমি ত শুনিয়াছি, তােমার ব্রাহ্মণী বড়ই শান্তস্বভাবা ও ঘরকন্নায় বিশেষ পটু।”

 রমাই। “সে কথায় কাজ কি! ঘরে আর সকল রকম জঞ্জালই আছে, কেবল আমি তিষ্ঠিতে পারি না। প্রত্যুষে গৃহিণী এমনি ঝাঁটাইয়া দেন যে, একেবারে মহারাজের দুয়ারে আসিয়া পড়ি।”

 এইখানে কথা প্রসঙ্গে রমাইয়ের ব্রাহ্মণীর পরিচয় দিই। তিনি অত্যন্ত কৃশাঙ্গী ও দিনে দিনে ক্রমেই আরো ক্ষীণ হইয়া যাইতেছেন। রমাই ঘরে আসিলে তিনি কোথায় যে আশ্রয় লইবেন ভাবিয়া পান না। রাজসভায় রমাই এক প্রকার ভঙ্গীতে দাঁত দেখায় ও ঘরে আসিয়া গৃহিণীর কাছে আর এক প্রকার ভঙ্গীতে দাঁত দেখায়। কিন্তু গৃহিণীর যথার্থ স্বরূপ বর্ণনা করিলে নাকি হাস্যরস না আসিয়া করুণ রস আসে, এই নিমিত্ত রাজসভায় রমাই তাহার গৃহিণীকে স্থূলকায়া ও উগ্রচণ্ডা করিয়া বর্ণনা করেন, রাজা ও মন্ত্রীরা হাসি রাখিতে পারেন না!

 হাসি থামিলে পর রাজা কহিলেন, ওহে রমাই, তােমাকে যাইতে হইবে, সেনাপতিকেও সঙ্গে লইব।”

 সেনাপতি বুঝিলেন, এবার রমাই তাঁহার উপর দ্বিতীয় আক্রমণ করিবে। চস্‌মাটা চোখে তুলিয়া পরিলেন এবং বােতাম খুলিতে ও পরিতে লাগিলেন।

 রমাই কহিল, “উৎসব স্থলে যাইতে সেনাপতি মহাশয়ের কোন আপত্তি থাকিতে পারে না, কারণ এ ত আর যুদ্ধস্থল নয়!”

 রাজা ও মন্ত্রী ভাবিলেন, ভারি একটা মজার কথা আসিতেছে; আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন?”

 রমাই। “সাহেবের চক্ষে দিন রাত্রি চস্‌মা আঁটা। ঘুমাইবার সময়েও চস্‌মা পরিয়া শােন্; নহিলে ভাল করিয়া স্বপ্ন দেখিতে পারেন না। সেনাপতি মহাশয়ের যুদ্ধে যাইতে আর কোন আপত্তি নাই, কেবল, পাছে চস্‌মার কাঁচে কামানের গােলা লাগে ও কাঁচ ভাঙিয়া চোখ কাণা হইয়া যায়, এই যা’ ভয়! কেমন মহাশয়?”

 সেনাপতি চোখ টিপিয়া কহিলেন, “তাহা নয়ত কি?” তিনি আসন হইতে উঠিয়া কহিলেন “মহারাজ, আদেশ করেন ত বিদায় হই।”

 রাজা সেনাপতিকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হইতে কহিলেন, “যাত্রার সমস্ত উদ্যোগ কর। আমার চৌষট্টি দাঁড়ের নৌকা যেন প্রস্তুত থাকে।” মন্ত্রী ও সেনাপতি প্রস্থান করিলেন।

 রাজা কহিলেন, “রমাই, তুমি ত সমস্তই শুনিয়াছ। গতবারে শ্বশুরালয়ে আমাকে বড়ই মাটি করিয়াছিল?”

 রমাই। “আজ্ঞা হাঁ, মহারাজের লাঙ্গুল বানাইয়া দিয়াছিল।”

 রাজা হাসিলেন, মুখের দন্তের বিদ্যুৎছটা বিকাশ হইল বটে, কিন্তু মনের মধ্যে ঘােরতর মেঘ করিয়া উঠিল। এ সংবাদ রমাই জানিতে পারিয়াছে শুনিয়া তিনি বড় সন্তুষ্ট নহেন। আর কেহ জানিলে ততটা ক্ষতি ছিল না। অনবরত গুড়গুড়ি টানিতে লাগিলেন।

 রমাই কহিল, “আপনার এক শ্যালক আসিয়া আমাকে কহিলেন বাসর ঘরে তােমাদের রাজার লেজ প্রকাশ পাইয়াছে; তিনি রামচন্দ্র, রামদাস? এমন ত পূর্ব্বে জানিতাম না।” আমি তৎক্ষণাৎ কহিলাম, “পূর্ব্বে জানিবেন কিরূপে? পূর্ব্বে ত ছিল না। আপনাদের ঘরে বিবাহ করিতে আসিয়াছেন, তাই যস্মিন্ দেশে যদাচার অবলম্বন করিয়াছেন।”

 রাজা জবাব শুনিয়া বড়ই সুখী! ভাবিলেন রমাই হইতে তাঁহার এবং তাঁহার পূর্ব্বপুরুষদের মুখ উজ্জ্বল হইল ও প্রতাপাদিত্যের আদিত্য একবারে চির-রাহুগ্রস্ত হইল। রাজা যুদ্ধবিগ্রহের বড় একটা ধার ধারেন না। এই সকল ছােটখাট ঘটনাগুলিকে তিনি যুদ্ধবিগ্রহের ন্যায় বিষম বড় করিয়া দেখেন। এত দিন তাঁহার ধারণা ছিল যে তাঁহার ঘােরতর অপমানসুচক পরাজয় হইয়াছে। এ কলঙ্কের কথা দিনরাত্রি তাঁহার মনে পড়িত ও তিনি লজ্জায় পৃথিবীকে দ্বিধা হইতে অনুরােধ করিতেন। আজ তাঁহার মন অনেকটা সান্ত্বনা লাভ করিল যে সেনাপতি রমাই রণে জিতিয়া আসিয়াছে। কিন্তু তথাপি তাঁহার মন হইতে লজ্জার ভার একেবারে দূর হয় নাই।

 রাজা রমাইকে কহিলেন “রমাই, এবারে গিয়া জিতিয়া আসিতে হইবে। যদি জয় হয় তবে তােমাকে আমার অঙ্গুরী উপহার দিব।”

 রমাই বলিল “মহারাজ জয়ের ভাবনা কি? রমাইকে যদি অন্তঃপুরে লইয়া যাইতে পারেন, তবে স্বয়ং শাশুড়ী ঠাকুরাণীকে পর্য্যন্ত মনের সাধে ঘোল পান করাইয়া আসিতে পারি।”

 রাজা কহিলেন, “তাহার ভাবনা? তােমাকে আমি অন্তঃপুরেই লইয়া যাইব।”

 রমাই কহিল “আপনার অসাধ্য কি আছে?”

 রাজারও তাহাই বিশ্বাস। তিনি কি না করিতে পারেন? অনুগত বর্গের কেহ যদি বলে, “মহারাজের জয় হউক সেবকের বাসনা পূর্ণ করুন্।” মহামহিম রামচন্দ্র রায় তৎক্ষণাৎ বলেন “হাঁ, তাহাই হইবে।” কেহ যেন মনে না করে এমন কিছু কাজ আছে, যাহা তাঁহা দ্বারা হইতে পারে না। তিনি স্থির করিলেন, রমাই ভাঁড়কে প্রতাপাদিত্যের অন্তঃপুরে লইয়া যাইবেন, স্বয়ং মহিষী-মাতার সঙ্গে বিদ্রূপ করাইবেন, তবে তাঁহার নাম রাজা রামচন্দ্র রায়। এত বড় মহৎ কাজটা যদি তিনি করিতে পারিলেন, তবে আর তিনি কিসের রাজা।

 চন্দ্রদ্বীপাধিপতি, রামমোহন মালকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। রামমোহন মাল পরাক্রমে ভীমের মত ছিল। শরীর প্রায় সাড়ে চারি হাত লম্বা। সমস্ত শরীরে মাংশপেশী তরঙ্গিত। সে স্বর্গীয় রাজার আমলের লোক। রামচন্দ্রকে বাল্যকাল হইতে পালন করিয়াছে। রমাইকে সকলেই ভয় করে, রমাই যদি কাহাকেও ভয় করে ত সে এই রামমোহন। রামমোহন রমাইকে অত্যন্ত ঘৃণা করিত। রমাই তাহার ঘৃণার দৃষ্টিতে কেমন আপনাআপনি সঙ্কুচিত হইয়া পড়িত। রামমোহনের দৃষ্টি এড়াইতে পারিলে সে ছাড়িত না। রামমোহন আসিয়া দাঁড়াইল। রাজা কহিলেন, তাঁহার সঙ্গে পঞ্চাশ জন অনুচর যাইবে। রামমোহন তাহাদিগের সর্দ্দার হইয়া যাইবে।

 রামমোহন কহিল “যে আজ্ঞা, রমাই ঠাকুর যাইবেন কি?” বিড়ালচক্ষু খর্ব্বাকৃতি রমাই ঠাকুর সঙ্কুচিত হইয়া পড়িল।