ভগ্নহৃদয়/ত্রয়োদশ সর্গ

ত্রয়ােদশ সর্গ।

অনিল ললিতা।

ললিতা।—ভেঙ্গেছে ভেঙ্গেছে যত লজ্জা ললিতার! 
মুক্তকণ্ঠে শুধাইছে, সখা, বার বার,—
কি করিব বল দেখি তোমার লাগিয়া?
কি করিলে জুড়াইতে পারিব ও হিয়া?
এই পেতে দিনু বুক রাখ সখা রাখ’ মুখ
ঘুমাও তুমি গো, আমি রহিব জাগিয়া!
খুলে বল, বল সখা, কি দুঃখ তোমার!
অশ্রুজলে মিশাইৰ অশ্রুজল ধার।
এক দিন বোলেছিলে মোর ভালবাসা
পেলেই পূরিবে তব প্রণয় পিপাসা;
বোলেছিলে সব তব করিছে নির্ভর
পৃথিবীর সুখ দুঃখ আমারি উপর।
কই সখা? প্রাণ মন করেছিত সমৰ্পণ,
দিয়েছি ত যাহা কিছু ছিল আপনার,
তবু কেন শুকাল না অশ্রুবারি ধার?
অনিল।—ললিতারে, ললিতারে, আমার কিসের দুখ 
হৃদয়ে জাগিছে যবে ওই তোর মধু মুখ!
জীবন নিশীথ মোর ও রবি কিরণে তোর
একেবারে মিশায়েছি আপনাকে পাশরিয়া;

মাঝে মাঝে হৃদাকাশে যদিও বা মেঘ আসে,
ভিতরে তবুও হাসে সে রবি-কিরণ প্রিয়া!
ওই স্মিত আঁখি দুটি হৃদয়ে রহিয়া ফুটি
রেখেছে ফুল ফুটায়ে প্রাণের বিজন বনে!
তব প্রেম সুধাধারা ঝরিয়া নির্ঝর পারা
তুলেছে হরিত করি এই মরুভূমি মনে!
তব হাসি জ্যোৎস্না সম এ মুগ্ধ নয়নে মম
সারা জগতের মুখে ফুটায়ে রেখেছে হাসি।
তুমি সদা আছ কাছে তাই দিবালোক আছে,
নাহিলে জগতে মোর কাঁদিত আঁধার রাশি;—
আয় সখি—বুকে আয়—উলসি উঠেছে প্রাণ—
ত্বরা কোরে যালো বালা—বাঁশি আন্-বীণা আন্—
আজি এ মধুর সাঁঝে—রাখি এ বুকের মাঝে
মধুর মুখানি তোর—ধীরে ধীরে কর্ গান?
ললিতা।—না সখা, মনের ব্যথা কোর’ না গােপন; 
যবে অশ্রুজল হায় উচ্ছ্বসি উঠিতে চায়,
রুধিয়া রেখোনা তাহা আমারি কারণ।
চিনি সখা, চিনি তব ও দারুণ হাসি,
ওর চেয়ে কত ভাল অশ্রুজল রাশি।
মাথা খাও—অভাগীরে কোরনা বঞ্চনা,
ছদ্মবেশে আবরিয়া রেখোনা যন্ত্রণা;
মমতার অশ্রুজলে নিভাইব সে অনলে
ভাল যদি বাস’ তবে রাখ’ এ প্রার্থনা!