এগারো

ভাল করে বর্ষা আরম্ভ হতে “জলকন্যার’ এক রকম নোঙর ফেলে দিন কাটানোর সময় এল। দু’একটা ছোটখাট কাজ যা পাওয়া গেল, সেগুলি সেরে আসতে লাগল ভিমনা, যাদববাবু গেলেন না। নাগা কিন্তু প্রত্যেকবার ভিমনার সঙ্গে ঘুরে এল। এক সঙ্গে বেশীদিন বাড়ী বসে থাকতে সে। তো ইপিয়ে ওঠেই, তাছাড়া প্রত্যেকটা কাজের শেষে লঞ্চের সকলেই কিছু বাড়তি টাকা পায়। নাগা টাকা জমাচ্ছে। হারু মাঝিকে পাঠিয়ে দিয়ে তার বেতনের টাকা প্রায় কিছুই থাকে না, এদিকে নকুল তাকে মেয়ে দিতে রাজী হলেও পণের টাকার পরিমাণ এক পয়সা কমাতে রাজী হয় নি।

 কিন্তু মাঝে মাঝে দু'একদিনের জন্য একটু ঘুরে এসে কি নাগার, ভেসে বেড়ানোর সাধ মেটে। বাইরে অবিরল ধারে বৃষ্টি পড়ে,—শুকনে। মাটি ভিজিয়ে দেওয়া প্রাণ জুড়ানো বর্ষণ নয়, সঁ্যাতসেঁতে জগতকে আরও সঁ্যাতসেঁতে করায় বিষাদ জাগানো বর্ষণ-আর ঘরের জানাল দিয়ে, ডোবার জলকে বাঁশবন পার হয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে নাগার মন ছটফট করতে থাকে। ডোবা দেখে দেখেই কি জীবন কাটাতে হবে তাকে? নদীও বর্ষায় ফুলে ফোঁপে উঠেছে, কত চর তলিয়ে গেছে, কত গ্রাম ভেসে গেছে—ঘোলাটে জলস্রোতের সেই বিস্তীর্ণ বুক রইল ফাকা পড়ে, এখানে ছোট একটা ঘরে বন্দী হয়ে তার দিন কাটছে। বর্ষা কি নদীর মত সমুদ্রের রূপ বদলে দিয়েছে? কে জানে কেমন দেখায় বর্ষাকালের সমুদ্র।

 ‘বিষ্টির জলে সাগরের জল নি বাড়ে কর্তা?’

 'না, নাগা, সাগরের জল বাড়ছে না। কমছে জানা যায় না। দীঘির থেইকা এক কলস জল তুইলা দেইখো জল কমে নাই, কলসের জল ঢাইলা দেইখো জল বাড়ে নাই।”

 কিন্তু এ তো নিছক যুক্তি। নাগার কল্পনা যে নদীর মতই সমুদ্রকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে তুলেছে।

 বর্ষা নামতেই কণিকা কলকাতায় ফিরবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। সারাদিন তার ঘ্যান ঘ্যানানির কামাই নাই। কণিকার মা মেয়ের মত অস্থির হয়ে না। উঠলেও শহরে ফিরবার জন্য তার মনও যে ছটফট করছে সেটা স্পষ্টই বুঝা যায়। আর সম্পত্তির সব ব্যবস্থা শেষ করে কবে এখান থেকে নড়তে পারবেন জানা না থাকায় মাধববাবুর মুখে যে হতাশার ভাব ফুটে উঠেছে তা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, দেশের বাড়ীতে বাস করবার সাধটা তার কি মেটাটাই মিটে গিয়েছে। চারিদিকে শুধু জল আর কার্দী, জঙ্গলের সাপ ঘরে আশ্রয় খুঁজতে আসছে, সন্ধ্যা থেকে মশার কামড়ে গা ফুলে উঠছে, পোকামাকড় অতিষ্ঠা করে তুলেছে। জীবন। কলকাতার অজস্র সুবিধা ও বৈচিত্র্যের অভাবেও এতকাল কোনমতে কাটানো গিয়েছে, কিন্তু এত কষ্ট সহ করে কি মানুষ থাকতে পারে।

 মাধববাবু অগত্যা একদিন স্ত্রী ও কন্যাকে কলকাতায় রেখে আসতে গেলেন। ফিরে যে তিনি এলেন সেটা শুধু সম্পত্তির মমতায়, যাদববাবুর হাতে একটা মাসের জন্যও সব ছেড়ে দিয়ে যাবার ভরসা আর তার নেই। এসে হয়তো শুনবেন যাদববাবু সব বিক্রি করে বড় জাহাজ কিনে বিলাতে হাওয়া খেতে গেছেন,—যদিও দলিলে তার স্বাক্ষর ছাড়া যাদববাবুর পক্ষে। সেটা করা সম্ভব নয়।

 যাওয়ার আগে কণিকা বলল, “কলকাতা দেখেছিস নাগা? ব্যাস নি। কখনো? আমাদের সঙ্গে আয় না?”

 কিন্তু নাগার কি কোথাও যাওয়ার উপায় আছে। তার কত কাজ, কত দায়িত্ব।

 “বৌকে ফেলে যেতে পারবি না, না?”

 “বৌ কই দিদিমণি?”

 “হবে তো দু’দিন বাদে।”—কণিকা ঠোঁট উল্টে বলে,—“যাই বলিস, বড় নোংরা নকুলের মেয়েট। একটু সাবান টাবান মাখাস। আর এমন হিংসুটি মেয়েটা।”

 রূপা হিংসুটি? না, কণিকার মত স্বার্থপরতা বা হিংস রূপার নেই। কিন্তু হিংসুট না হোক, কণিকার তুলনায় রূপা সত্যই বড় নোংরা। কণিকার প্রতিমার মত জমকালো পুতুল সেজে থাকা নয়, সমস্ত খুঁটিনাটিতে সহজ স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস রূপার নেই বলে নাগার মাঝে মাঝে বড় আপসোস হয়। এটো থালা বাটির পরিষ্কার কোণে একটু হাত ঠেকালে রূপা সঙ্গে সঙ্গে হাত ধোয়, কিন্তু হাত না ধুয়ে অনায়াসেই নোংরা। হাতে খাবার জিনিস ধরে। সে নিজেও কি ধরে না? ধরে। হয়তো উকুন আছে রূপার মাথায়। তার মাথায় কি নেই? এখন নেই, কিন্তু কিছুকাল আগে ছিল। রূপা নোংরা, সেও নোংরা। গরীব মাঝির ছেলে মেয়ে বলে নয়, পয়সা লাগে না এমন অনেক পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা তাদের হয় নি।

 নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবার চেষ্টা আরম্ভ করে নাগা দেখেছে, মাথার উকুন পোকার মত বড় বড় নোংরামির অভ্যাস ত্যাগ করা সহজ কিন্তু প্রত্যেক দিনের শত শত টুকিটাকি ব্যাপারের নোংরামি ছাড়া বড় কঠিন। তবু, সে ঠিক করে রেখেছে, বিয়ের পর রূপাকে পরিচ্ছন্নতা ' শেখাবে।

 কণিকাদের নাগা আটখামার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এল। বিদায় নেওয়ার সময় কণিকার মাকে প্রণাম করতে তিনি মূর্থ গেয়ে মাঝির ছেলে নাগাকে আশীৰ্বাদ করে বললেন, “বেঁচে থাকে। বাবা-পারলে তোমায় আমি সঙ্গে নিয়ে যেতাম।”

 স্নেহ নাগার সহ্যু হয় না, স্নেহ তো সে পেয়েছে খুব কম। আন্তরিক স্নেহের তুচ্ছ প্রকাশও তার বুকে আবেগের ঘূর্ণি জাগিয়ে দেয়, স্নেহের কাঙালি শিশুর মত। মার কথা শুনে কণিকা যখন বলতে গে”, “কতবার আমাদের সঙ্গে আসতে বললাম”—আর বলতে গিয়ে হঠাৎ কেঁদে ফেলল। শহর যেভাবেই গড়িয়ে পিটিয়ে তৈরী করে থাক, ছেলে মানুষের মন তো, সে মন কেন সব সময় মেনে নেবে বাড়ীর মাইনে করা মাঝি বন্ধু নয়, তাকে ছেড়ে যেতে মন কঁদে না। নাগার দু'চোখ ঝাপসা হয়ে গেল।. নিজেও পাছে যে কেঁদে ফেলে ভেবে এমন ভয় হ’ল নাগার।

 জাহাজ ঘাট ছেড়ে যাবার পর আকাশ থেকে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করল আর সেই সুযোগে নাগাও কয়েক ফোটা চোখের জলকে চোখ থেকে গালে নেমে আসতে দিল। কেউ দেখলে ভাববে বৃষ্টির জল, মা ও মেয়ে তাকে একটু দরদ করে গেছে বলেই এত বড় বুড়ো ছেলে কাঁদছে না।”

 আশ্বিনের গোড়ায় আবার সমুদ্রের ডাক এল।

 কিছুদিন পরে পূজা। যাদববাবুর বাড়ী প্রতি বছর পূজা হয়; এবারও ধীরে সুস্থে পূজার আয়োজন আরম্ভ হয়ে গেছে। এসময় যাদববাব লঞ্চ নিয়ে যাবেন শুনেই ছোটমা। আপত্তি করলেন।

 ‘তুমি গেলে সব দেখবে শুনবে কে?”

 “দাদা আছেন।”

 “উনি নতুন আইছেন, উনি কি জানেন? অখন তুমি যাঠিতে পারব না।” যাদববাবু ভরসা দিয়ে বললেন, “চার পোচ দিনের মধ্যে ফিরা আসুম।”

 ছোটমা দ্বিধাভরে বললেন, ‘আসবা তো ঠিক?”

 ‘আসুম।”

 নাগা বড় খুশী। তার মনে হল, ডেনিস যেন মুক্তির নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছে। কতকাল সে একটা লম্বা পাড়ি দেয় নি! বৰ্ষা সমুদ্রের কোন পরিবর্তন করেছে কি না নিজের চোখে দেখে আসবার সাধটাও তার মিটবে

 রূপা বলে, ‘ফুর্তি দেখি যে খুব?”

 নাগা বলে, “সাগরে গেছস রূপা কোনদিন?”

 রূপা বলে, “কাম নাই আমার সাগরে গিয়া!”

 পষ্ণু একটু গম্ভীর হয়ে বলে, “তুফানের সময় পড়ছে।”

 নাগা বলে, “তুফান আমাগো করব কি?”

 পঞ্চর সঙ্গে নাগার খুব ভাব হয়েছে। পঞ্চই চেষ্টা করে চালচুলাহীন নাগার সঙ্গে রূপার বিয়ে দেওয়ার জন্য নকুলকে রাজী করেছে সদরের দোকান তুলে দিয়ে পঞ্চ এখন বাড়ীতে থাকে, দোকান নাকি ভাল চলছিল না। তাছাড়া, মাঝির ছেলের কি, দোকান করা পোষায়? যাদববাবুকে বলে নাগা তাকে লঞ্চে কাজ পাইয়ে দিয়েছে।

 ভিমন আপত্তি করেছিল। লঞ্চে আর লোক দরক্লার নেই, তাছাড়া পঞ্চর সম্বন্ধে তার কেমন একটা আশঙ্কা আছে প্রথম থেকে। আর কিছু না হোক, মানুষটা যে একটু হাল্কা প্রকৃতির, বড় বেশী কথা বলে আর গায়ে। পড়ে মানুষের সঙ্গে ভাব করার চেষ্টা করে। তাদের যা কাজ তাতে এ ধরনের লোক সঙ্গে না থাকাই ভাল। কে জানে, হয়তো নিছক বাহাদুরী করার জন্যই যার তার কাছে লঞ্চের গোপন অভিযানের কাহিনী বলে বসবে।

 যাদববাবু বলেছিলেন, “না ভিমনা, বেশ চালাক চতুর আছে ছোকরা। নকুইলা সারাডা জীবন আমাগোর কাম করতেছে, তার পোলারে একটা কাম দিমু না? আমাগো নাগা পঞ্চর বইনরে বিয়া করব।”

 ভিমন কতকটা নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিল, ‘হ’?

 “আমারে জিগাইতে আইছিল নাগার হাতে বইনরে দেওনা উচিত হইবো কিনা। কথায় কথায় আমি কইছিলাম, পণের টাকাটা আমি দিয়া দিমু। পঞ্চ বারণ কইরা কইল, ওই টাকা নাগার কামান উচিত, দানের টাকায়। বিয়া করব ক্যান পুরুষ মানুষ? আগে পাজী ছিল পঞ্চটা, বেদম পাজী ছিল, অখন শুধরাইয়া গেছে।”

 তারপর ভিমনা আর আপত্তি করে নি। সে নকুলের ছেলে, দুদিন পরে নাগা তার বোনকে বিয়া করবে, যাদববাবু নিজে তার হয়ে ওকালতি করছেন, এ অবস্থায় শুধু মানুষ চেনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে যে সন্দেহ জেগেছে তাকে কি মানুষ প্রশ্রয় দিতে পারে?

 ডেনিসের আহবান আসবার আগে পঞ্চ একবার মোটে লঞ্চে পাড়ি দিয়েছে—নিতাই সাহার সামান্য একটা কাজ উপলক্ষে। সে সময় পঞ্চর চালচলন ভিমনার ভাল লাগে নি। সর্বদা সে লঞ্চের আনাচে কানাচে উকি দিচ্ছে, কানপেতে সকলের কথা শুনছে। আর চেষ্টা করছে, লস্কর থেকে আরম্ভ করে ভিমনার সঙ্গে খাতির জমাবার। *

 এবার ভিমনা একবার দ্বিধাভরে যাদববাবুকে বলল, “পঞ্চারে এইবার। থুইয়া গেলে হয় না। কর্তা?”

 “ক্যান?

 নির্দিষ্ট কোন কারণ ভিমনার জানা নেই। তবু  যাদববাবু একটু হেসে বললেন, “পঞ্চকে তুমি ক্যান পছন্দ কর না, সন্দ ২৩. করি ভিমনা। চলুক, কি হইবো! কি কও?”

 ভিমনা আর কি বলবে? সে চুপ করে গেল।

 তারপর আগের বারের মত সন্ধ্যার পর ডেনিসকে তুলে নিয়ে “জলকন্যা’ যখন বাহির সমুদ্রের দিকে রওনা হ’ল তখন কেবল পঞ্চ কেন, আরও অনেক চিন্তাই ভিমনার মন থেকে মুছে গেছে। সকাল থেকেই আজ আকাশের অবস্থা ভাল নয়, এখন একটিও তারা চোখে পড়ছে না। ভিমর্ম যতবার ব্যারোমিটারের দিকে তাকিয়েছে ততবারই মুখ তার গম্ভীর হয়ে গেছে। আশ্বিন মাসের তুফানের পরিচয় সে জানে, সে তুফানের কবলে পড়লে “জলকন্যা’’ দশ মিনিট টিকবে কি না সন্দেহ। তুফান যদি ওঠে তার আগেই লঞ্চ নিয়ে বন্দরে ফিরে আসতে পারবে মনে হয়; ভিমনার যতদূর বিশ্বাস কালের আগে তুফান উঠবে না, কিন্তু প্রকৃতির * ক্লোন খেয়াল সম্বন্ধে কি নিশ্চিত হওয়া যায়, বিশ্বাস করা যায় ঝড় বাদলকে। সামান্য টাকার ব্যাপার হলে ভিমনা বন্দরের আশ্রয় আজ ছেড়ে তুমাসত না। কিন্তু এবার ডেনিস আগের বারের চেয়েও অনেক বেশী টাকার চালান আনাচ্ছে, যাদববাবুকে মোটা টাকা আগম দিয়েছে, ব্যবস্থার জন্য খরচও করছে অনেক টাকা। এখন কি তাকে ডোবানো যায়!

 নাগার দৃষ্টিকে ফাকি দিয়ে এবার সমুদ্র গাঢ় অন্ধকারে আত্মগৈাপন করে থাকে, লঞ্চের আলোয় শুধু দেখায় তার কয়েকটা ঢেউ আর লঞ্চকে দোলা দিয়ে জানিয়ে দেয় নিজের অস্তিত্ব। দূরে তাকিয়ে লঞ্চের দোলনে নাগার মনে হয়, সমুদ্র আর অন্ধকার যেন এক হয়ে জমাট “বেঁধে ক্রমাগত উঠছে আর, নামছে। মেঘনার মোহনার কাছে জল এবার একটু বেশী ঘোলাটে মনে হয়েছিল, তা ছাড়া সমস্ত বর্ষাকালের অফুরন্ত বৃষ্টিপাত সমুদ্রে কোন রকম পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে টের পাওয়া যায় নি। কল্পনার * সঙ্গে না মেলায় নাগা একটু ক্ষুন্ন হয়েছিল। কিন্তু ঝড়ের সম্ভাবনা আর ভিমনার গম্ভীর মুখ তার মধ্যে যে উত্তেজনা জাগিয়ে তুলল তাতে সমস্ত ক্ষোভ চাপা পড়ে গেল। সমুদ্রের বদলে এখন শুধু অন্ধকার দেখেও তার মন খারাপ হয়ে গেল না, বরং তার ভয়ঙ্করের প্রত্যাশার সঙ্গে এই ঘন অন্ধকারকেই যেন মানান-সই মনে হতে লাগল।

 আজও বহুদূরে কুতুবদিয়ার লাইটহাউসের আলো দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে পূবে পাশের দিকে সরে যেতে থাকে। নাগা ভাবে, আজ তো তারা নেই আকাশে, আজ ভিমনা জাহাজের পাত্ত পাবে কি করে? ভিমনার। মুখ দেকে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে নাগা ভরসা পায় না, কৌতুকটা চেপে যায়।

 পঞ্চর মুখ অনেকক্ষণ থেকে পাংশু দেখাচ্ছিল, সে জিজ্ঞাসা কুর, ঝড়। উঠবে নাকি রে নাগা?”

 নাগা বলে, “কে জানে।”

 তার পর এক সময় লঞ্চের গতিবেগ হঠাৎ কমে যায়, কিন্তু সেদিনের মত লঞ্চ চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে জাহাজের জন্য অপেক্ষা করে না। জাহাজ আজ আগে এসে পৌছেছে, খানিক তফাতে আলো দেখা যাচ্ছে।

 সেদিনের মত আজও জাহাজের বোট মাল ও মানুষ পৌছে দিয়ে গেল। এবার মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু মালের পরিমাণ বেশী। কাঠের বাক্সই এবার এল প্রায় দু'ডজন এবং ওয়াটার-প্রাফ কাপড়ে মোড়া মাল আগের বারের প্রায় দ্বিগুণ। জাহাজের সেই জাপানী অফিসারটি এসে হাসিমুখে ডেনিস ও যাদববাবুর হাতে হাত মেলানো বিলাতী ভদ্রতা করে নোটের তাড়া পকেটে নিয়ে ফিরে গেল।

 যাওয়ার আগে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজীতে বলে গেল, “তাড়াতাড়ি ফিরে যাও, তোমাদের এই খেলনা জাহাজ ঝড়ে টিকবে না।”

 বন্দরের দিকে লঞ্চের মুখ ফিরিয়ে ভিমনা বলল, “ব্যাপার সুবিধে লাগে। না কর্তা। আইজ বন্দরে থোকন লাগিব সন্দ করি।”

 যাদববাবু বললেন, “থাকন লাগে থাকুম।”