লেখকের কথা/নিজের কথা
নি জে র ক থা
নিজের গল্প বাছাই করা বড়ই ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার। ঠিক যেন নিজের সব ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেছে নেবার চেষ্টা যে জীবন সমাজ সাহিত্য ইত্যাদি আসল পরীক্ষায় কে সবচেয়ে ভালোভাবে পাশ করেছে অর্থাৎ উৎরে গিয়েছে।
অনেক বছর ধরে অনেক গুণ্ডা ছেলেমেয়েকে জন্ম দেওয়া হয়ে থাকলে বাছাই করায় ঝঞ্ঝাট বা মুস্কিলটা সত্যই বিষম হয়ে দাঁড়ায়।
কোন নিয়মে বাছাই করবো? খ্যাঁদা নাক থ্যাবড়া গাল কালো রোগা নোংরা মেয়েটাই হয় তো বাপের সব চেয়ে আদুরে—জগৎ-সংসারে উলঙ্গ সত্যের নির্ভিক নিরাবরণ নিছক খাঁটি মহান প্রতীক হিসাবে হয় তো আর কোন তুলনা খুঁজে পাওয়াই সম্ভব নয় বাপের স্নেহান্ধ দৃষ্টি এবং বিচারে।
এটাই কি শেষ কথা?
মায়া?
কী হাস্যকর ভাবেই মায়াকে অস্বীকার করেন মায়াবাদী পণ্ডিতেরা! জীবনকে জানা আর জীবনকে মায়া করা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। একটাকে বড় করে অন্যটাকে তুচ্ছ করা জীবনদর্শীর পক্ষে বীভৎস অপরাধ।
অবাস্তব কথা টেনে আনলাম কি-বেদবেদান্ত উপনিষদের মূলতত্ত্ব?
তা নয়। বড় ব্যাপার সম্পর্কে হলেও কথাটা অতিশয় সহজ এবং সরল। জগৎ আর মানুষকে জানা আর ভালোবাসা যে একত্রীকৃত প্রক্রিয়া। একটা ছাড়া অন্যটা যে শুধু অসম্ভব নয়, অর্থহীনও বটে—এটুকু বোঝা আজকের দিনের মানুষের পক্ষে মোটেই কঠিন হওয়া উচিত নয়।
গল্প নির্বাচনে কোন্টা আগে লেখা কোন্টা পরে লেখা সে হিসাব কষিনি। গল্পের বিচারে ধারাবাহিকতার হিসাবটাই নিরর্থক।
দশজনে আমার যে গল্পকে যতটা সমাদর করেছেন মোটামুটি সেটাই আমি এই সঙ্কলনের জন্য গল্প নির্বাচনের মাপকাঠি ধরে নিয়েছি।
আমার বিচার হয় তো সকলের মনঃপূত হবে না। এ গল্পটা কেন নির্বাচন করলাম এবং ও গল্পটা কেন বাদ দিলাম তাই নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠবে।
সেটাও আমি কামনা করি—প্রশ্ন উঠুক, সমালোচনা হোক, দশজনে আমার বিচার বিবেচনার ভুলত্রুটি সংশোধন করে দিন। সাহিত্যিকের পক্ষে সেটা পরম সৌভাগ্যের কথা।