লজ্জা

যাবার সময় নীলাঞ্জনা বলেছিল—
সে চলে আসবে।
বলেছিল—
আজ না গেলেই নয় ঠাক্‌মা!
তুমি দেখো, সন্ধ্যের মুখেই ফিরে আসব।
আমি'ত একা নই,
আরো কত লোকইত যাচ্ছে,
কোনো ভয় নেই।
পথঘাট সব চিনি,
তুমি ভাবনা কোরো না।
লাল টাঙাইল শাড়ী জুড়িয়ে
বেণী দুলিয়ে বলে গেল
ঠিক ফিরে আসব।

সেদিন সন্ধ্যায় নয়,
গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে
পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত কয়েকজন
নীলাঞ্জনাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেল তার বাড়ীর দরজায়।
হ্যারিকেনের আলোয় তার ক্ষতবিক্ষত মুখ আর দেহ দেখে
আঁতকে উঠলো ঠাক্‌মা।
চীৎকার করে উঠলো—
কারা এমন সর্বনাশ করলিরে বাপ—
ভষ্ম হয়ে যা তারা
বাজ পড়ুক তাদের মাথায়! অবিরাম কাঁদতে লাগলো ঠাক্‌মা।
যারা তাকে এনেছিল
অন্ধকারে তারা তেমনি করে পালিয়ে গেল।

এটুকু বলা হতে না হতেই
চৈত্রের আকাশ অন্ধকার করে ঘনিয়ে এলো মেঘ,
হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া উঠলো হু হু করে
অন্ধকার আকাশের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে
চমকে উঠলো বিদ্যুৎ! সঙ্গে সঙ্গে—
কড় কড় কড়াৎ করে প্রচণ্ড গর্জনে
কাছেই কোথাও বাজ পড়লো।

আমি দেখলাম,
বিশ্বাস কর,
আমি যেন দেখলাম
লালটুকটুকে টাঙাইল পরে নীলাঞ্জনা
চৈত্রের আকাশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত
ছুটে বেড়াচ্ছে মশাল জ্বালিয়ে।
দেখতে দেখতে আমার চোখ অন্ধ হয়ে এলো,
তারপর—
আমি সেই যে পালিয়ে এসেছি
আর যাইনি ঠাক্‌মার সামনে।

ঠাক্‌মা! তুমি কেমন আছ?
তোমার সামনে যেতে
আমার যে লজ্জা করে!