সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/অপরূপ-কথা
অপরূপ-কথা
এক যে ছিল রাজার ছেলে, তার ছিল এক তলোয়ার,
ধার ছিল না একটুও তার, তোমরা যতই বলো আর;
সেই তলোয়ার ঘুরিয়ে
রঙিন নিশান উড়িয়ে,
ঠ্যাং-খোঁড়া এক ঘোড়ায় চ’ড়ে চলত কুমার হুঁশিয়ার,
অবাধ, স্বাধীন ঘোরার নেশায়—মনটা হ’ত খুশি তার।
উধাও হয়ে ছুটত ঘোড়া,— কোথাও যেতে মানা নাই,
পঙক্ষীরাজের সামিল সে যে, কিন্তু পিঠে ডানা নাই;
গ্রীষ্ম, বাদল, কি শীতে,
সকাল দুপুর নিশীথে,
খেয়াল-মত চলত কুমার যেথায় খুশি অনিবার,
মানত না সে ত্র্যহস্পর্শ, বারবেলা কি শনিবার।
একদিন এক জ্যোৎস্না-রাতে—চাঁদ ওঠে নি আকাশেই,
ধু-ধু করে তেপান্তরের প্রান্তখানি ফাঁকা সেই;
কী দেখেছে স্বপনে,
রাজার কুমার গোপনে
গহন রাতে ছাড়ল পুরী, কেউ পেলে না দিশা হায়,
হু-হু ক’রে ছুটল ঘোড়া রাজকুমারের ইশারায়।
রাজার কুমার শ্রান্ত যবে হাজার যোজন চলাতে,
থামল এসে অচিন দেশে প্রাচীন অশথ-তলাতে;
সেই অশথের বুকেতে
বসত করে সুখেতে
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীরা, সাত সাগরের সীমানায়।
বললে, “ছি, ছি, রাজকুমারে গাছের তলে কি মানায়?”
রাজার কুমার অবাক হয়ে গাছের পানে তাকাতেই
দেখলে দুটি আজব পাখী উচ্চ গাছের শাখাতেই;
বললে কুমার—“তোরা কে?
আমায় এবং ঘোড়াকে—
একটু যদি পথের খবর বলতে পারিস্ এখানেই,—
বড়ই তবে কৃতার্থ হই, কিছুই হেথা দেখা নেই।”
ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীরা সঙ্গোপনে দুটিতে—
বললে—“আছে রাজার মেয়ে রাক্ষসদের কুঠিতে;
দেখতে বিকট তাহারা,
দিচ্ছে সদাই পাহারা,
সন্ধ্যা-বেলায় কেউ থাকে না—যাও যদি ঠিক বুঝিয়া—
অনায়াসেই পাবে সেথায় রাজকন্যায় খুঁজিয়া।”
ঠ্যাং-খোঁড়া সেই ঘোড়ায় চ’ড়ে ঠিক সন্ধ্যা-বেলাটায়,
হাজির হ’ল রাজার ছেলে রাক্ষসদের এলাকায়;
রাজপুত্রে শাসাতে
কেউ ছিল না বাসাতে,
রাজকুমারীর সাথে হ’ল রাজকুমারের পরিচয়,—
মালা বদল ক’রে তাদের হ’ল গোপন পরিণয়।
ফিরে এল রাজার কুমার নিজের দেশে পুলকে,—
বৌকে দেখে চৌদিকেতে ঠাট্টা করে কু-লোকে;
“ওমা, ওমা একি রে—
আজব ব্যাপার দেখি রে,
রাজকুমারীর হাত দুটো নেই”—সবাই বলে আসিয়া;
“আমারো তো ঠ্যাং দুটি নেই,”—কুমার বলে হাসিয়া॥