সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/খোকা-কবি
খোকা-কবি
খোকা-কবি লেখে কবিতা-গান
নীল পেন সিলে, লাল খাতায়,
কিন্তু হায় তা শুনবে কে!
খাতা ভ’রে ওঠে গান-গাথায়।
বাবা বলে—‘চুপ, সময় নাই।’
মা বলেন—‘থাম, অনেক কাজ।’
দিদি বলে—‘হবে অন্য দিন,
পড়াশোনা আছে অনেক আজ।’
দাদা বলে –‘তোর ন্যাকামি রাখ,
ধর দেখি সূতা, মাঞ্জা দেই।’
মামা বলে—‘চোপ, ইস্টুপিড,
গাঁট্টার চোটে প্রাণ যাবেই।’
হায় রে, কবিতা শুনবে কে—
মুগ্ধ হবে কি গুণ দেখে!
ও পাড়ার নীলি যায় কোথায়?
খোক ডেকে বলে—‘শুনবি আয়।’
বকুলের ছায়ে নিরিবিলি
খোকা-কবি আর নীলি মিলি’
স্তব্ধ দুপুরে একমনে
খোকা পড়ে আর নীলি শোনে।
খোকা প’ড়ে যায় কবিতা তার,
কত ইতিহাস চাঁদ-তারার,
কত শত কথা অপ্সরীর;
জ্যোৎস্নায় নাওয়া সব পরীর,
বাতাসের দোলা ফুল-বনেই,
পাখীদের গান বন-কোণেই,
স্বপনের দেশে কেমনে যায়
কোন্ মন্তরে মন-ভেলায়।
এই সব শুনে’ কবিতা-গান
গেঁয়ো নীলিটার মুগ্ধ প্রাণ।
মা-মরা মেয়ে সে, কথা না কয়,
ফ্যাল্ ফ্যাল্ ক’রে তাকিয়ে রয়।
হাঁ ক’রে খোকার মুখ চাহে
খোকা প’ড়ে যায় উৎসাহে।
··· ··· ···
খোঁজ্ খোঁজ্ খোঁজ্ নীলিটা কই,—
সৎমা এসেছে সন্ধানে;
মামা ছুটে আসে করিতে খোঁজ,
খোকা-ছোঁড়া গেছে কোন্খানে।
খাতা ছুঁড়ে ফেলে হায় খোকার,
দুম-দাম পিঠে কীল পড়ে;
সৎ-মা গালিতে ভূত ভাগায়,
নিলো নীলিটার চুল ধ’রে।