সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/ঘূর্নি হাওয়া চলে
ঘূর্নি হাওয়া চলে
গরম দুপর,
পথের উপর
ঘূর্নি হাওয়া চলে,—
পথিক আমি বস্নু এসে।
গাছের ছায়া-তলে।
তেঁতুল গাছের শীতল ছায়া—
জুড়িয়ে দিল শ্রান্ত কায়া;
ঘাসের উপর এলিয়ে দেহ
পড়েছিলাম ঢ’লে;
মাঠের পথে বন্বনিয়ে।
ঘূর্নি হাওয়া চলে।
পদ্ম-হারা পদ্ম-দীঘি সামনে আছে প’ড়ে,—
জীর্ণ-গাছের শুকনো পাতা পড়ছে ঝ'রে ঝ'রে;
ঘন-বাঁশের ঝাড়ে ঝাড়ে
কাক ডেকে যায় বারে বারে,
সারস এসে বসলো উড়ে
পদ্ম-দীঘির জলে;
শূন্যে ধুলোর নিশান তুলে
ঘূর্নি হাওয়া চলে।
শ্রান্ত আমি গাছের তলায়
এলিয়ে দিলাম দেহ—,
আগুন-ঝরা দুপুরবেলায়
সঙ্গীটি নাই কেহ।
কাঠ-বেড়ালী একটি দুটি
করছে কেবল ছুটোছুটি,
গঙ্গা-ফড়িং লাফিয়ে বেড়ায়
ঘাসেরই জঙ্গলে;
ঘুর ঘুর ঘুর ঘুরপাকেতে
ঘূর্নি হাওয়া চলে।
দমকা বাতাস গাছের মাথায় দোল দিয়ে যায় শুধু,
রোদে-রাঙা মধুভাঙার মাঠটি করে ধূ ধূ;—
বহুদিনের পথটি চেনা—
জানাশোনা কেউ হাঁটে না,
ছায়ার দিকে
গাং-শালিখে
উড়ছে দলে দলে;
দূর-নিরালায় দুপুরবেলায়
ঘূর্নি হাওয়া চলে।
বহুদিনের পরে এলাম
ছেলেবেলার গাঁয়ে,—
শ্রান্ত দেহ এলিয়ে দিলাম
তেঁতুলগাছের ছায়ে;
অতীত্ দিনের কতই স্মৃতি,
কতই খেলা, কতই গীতি
মনের-কোণে উঠছে ভেসে
আজকে পথে পথে;
দূরের বনে ঝড় দোলা দেয়,
ঘূর্নি হাওয়া চলে।
ছেলেবেলার গ্রামখানি মোর তেম্নি আজো আছে,—
হায় রে আমায় চিনলো না কেউ, ডাকলো না কেউ কাছে।
ছেলেবেলার সঙ্গী যারা, কোথায় গেছে আজকে তারা?
একটিও লোক নাইকো যে আজ
স্নেহের বাণী বলে,—
মনের মাঝেও আজকে আমার
ঘূর্নি হাওয়া চলে॥