সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/নৌকা চলে নৌকা চলে
নৌকা চলে নৌকা চলে
নৌকা চলে নৌকা চলে
মাঝ-নদীতে অথই জলে।
বৈঠা মারি’ মাল্লা মাঝি
‘বদর বদর’ চেঁচায় আজি,
সবাই মিলে হল্লা তোলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
রইল দূরে কূল কিনারা,
পল্লীখানি ঝাপসা-পারা,
ঝপাস ঝপাস— শব্দ জলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
শুভ্র পালে বাতাস লেগে
নৌকা ছোটে তীব্র বেগে,
দূর-গগনে সূর্য ঢলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
ঝাপ্টে ডানা বকের সারি
আকাশপথে দিচ্ছে পাড়ি;
ফিরছে নীড়ে বিহগ দলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
আকাশখানি রক্ত-রাঙা;
ধোঁয়ায় ছাওয়া দূরের ডাঙা,
নামলো রবি অস্তাচলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
দূরের ঘাটে নাই রে প্রাণী,
নীরব নিঝুম পল্লীখানি;
ফিরছে ঘরে ওই সকলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
গাছের ডালে পাতার ফাঁকে
উদাস সুরে কোকিল ডাকে,
আঁধার ঝোপে জোনাক জ্বলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
ঝিল্লীগুলো ডুকরে ওঠে—
দম্কা-হাওয়া চম্কে ছোটে,
স্রোতের মাঝে নৌকা দোলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
সাঁঝের তারা ঐ আকাশে
মিট্-মিটিয়ে মুচকি হাসে,
দেখছে যেন কৌতুহলে
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
আচম্বিতে সঙ্গোপনে
ঝলমলিয়ে পূবের কোণে
উঠলো চাঁদা গগনতলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
নৌকা চলে নীরব-সাঁঝে
নদীর জলে স্রোতের মাঝে,
চাঁদের আলোর ঝলক ঝলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
আঁধার ঠেলে জ্যোৎস্না নামে,
নৌকা চলে দূরের গ্রামে,
‘বদর বদর’ মাল্লা বলে
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
মাল্লা মাঝি আকুল প্রাণে
উঠছে মেতে বাউল গানে,
বৈঠা মারে গায়ের বলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
যাচ্ছে বধু শ্বশুরঘরে
জলের পথে নৌকা চ’ড়ে,
অশ্রু ঝরে ওই বিরলে;
নৌকা চলে
নৌকা চলে।
নৌকা চলে জ্যোৎস্না-রাতে,
নৌকা চলে মন্দ বাতে,
অথই জলে অঠাঁই জলে
নৌকা চলে
নৌকা চলে।