সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/পটলবাবুর কন্যাদায়
পটলবাবুর কন্যাদায়
কোটালপুরের পটলবাবু ভালমানুষ বড়,
হঠাৎ হ’ল বিপদ গুরুতর।
মেয়ের বিয়ে, কথা ছিল বরযাত্রী আসবে জনা-ষোলা,
হায় রে, তবে এ কী ব্যাপার হ’ল?
সত্তর জন বরযাত্রী হল্লা ক’রে উঠলো এসে পটলবাবুর বাড়ি,
বিপদ হ’ল ভারি।
পটলবাবু ভয়ের চোটে পটল তোলেন বুঝি।
উপায় কিছু পান না তিনি খুঁজি’।
গরিব মানুষ নেহাৎ তিনি, থাকেন গাঁয়ের দেশে,
অনেক ক’রে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন শেষে।
জনা-কুড়ির ব্যবস্থাটা করেছিলেন পাকা,—
নাইকো বেশি টাকা।
কোনো রকম জোগাড় ক’রে শাঁখা-সিঁদূর দিয়ে
ইচ্ছা ছিল, দেবেন মেয়ের বিয়ে।
সেই রকমই হয়েছিল রফা,—
যোলোর স্থানে সত্তর জন হাজির হ’ল বরযাত্রী,—
সারলো বুঝি দফা।
ভাগ্নে হরু বললে-“মামা, ব্যস্ত হয়ো নাকো,
তুমি শুধু চুপটি ক’রে থাকো।
বিয়ের ব্যাপার চলতে থাকুক, আমি এদিকটাতে
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাটা নিচ্ছি নিজের হাতে।
চিন্তা তুমি ছাড়ো,—
তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যাপার সারো।”
এ ধারেতে বসলো খেতে বরযাত্রী-দলে,
আসর জুড়ে হল্লা হাসি চলে।
রোগা-মোটা, লম্বা-বেঁটে, গুঁপো-টেকো-খাঁদা,
কেউ বা ফাজিল, কেউ বা বাচাল, কেউ বা নিরেট হাঁদা,
হরেক রকম বরযাত্রী বসলো সারি সারি;
পড়লো পাতে লুচি ও তরকারি।
কুড়ি জনের জন্যে যত লুচি পোলাও তৈরি ছিল ঘরে,
সবার পাতে কিছু কিছু দেওয়া হ’ল ভাগাভাগি ক’রে।
ফুরিয়ে যখন এসেছে তা—এমন সময় হরু
গোয়াল থেকে ছেড়ে দিল সভার মাঝে সবার চেয়ে
দুরন্ত এক গরু।
লেজ উঁচিয়ে, শিং বাঁকিয়ে আসলো গরু তেড়ে—
“ও বাবা রে, ফেললে বুঝি মেরে—”
খাওয়া ফেলে সবাই পালায়, গরুর গুঁতোয় অক্কা পাবে পাছে;
হরু তখন চেঁচিয়ে বলে—“বসুন, বসুন, দই-সন্দেশ আছে!”
শুনবে কে আর হরুর কথা, গরুর তাড়া খেয়ে
এক্কেবারে উঠলো সবাই ইষ্টিশানে যেয়ে।
এদিকেতে হয়ে গেল মেয়ের বিয়ে শুভ-লগ্ন দেখে,
পটলবাবু বেঁচে গেলেন কন্যাদায়ের থেকে।
হাসতে হাসতে হরু,
গোয়ালঘরে আটকালো ফের দুরন্ত সেই গরু॥