সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/পথ-চলার গান
পথ-চলার গান
[সাঁওতালী ভাবে]
তাজা প্রাণে মাদল বাজা উদাস দুপুরে,
ঝিমায় কে হায় এই অবেলায় দাওয়ার উপুরে,—
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা—
‘ঝুমুর ঝুমুর’ বাজবে ঘুঙুর পায়ের নুপুরে;
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা।
রইব না আজ চুপটি ক’রে একলা কুটিরে,
মাঠের বাঁকা পথটি ধরে চলব ছুটি’ রে—
মটর ক্ষেতের মধ্য দিয়ে
চলব মোরা হন্হনিয়ে—
মুঠো মুঠো তুলব ক্ষেতের মটর-শুঁটি রে।
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা।
আকুল কোকিল ঢালবে অঢেল গানের সুধা রে,
‘সুন সুনিয়া’র হল্দে কুসুম দুলবে দু’ধারে—।
আমরা দু’জন উঠব মেতে,
চলব পথে উল্লাসেতে—
ভুলব মোরা বিল্কুলি আজ পিয়াস-ক্ষুধা রে।
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা।
চলব মোরা দুল্কি চালে আল্তো চরণে,
হল্দে কাপড় আঁট করে ভাই থাকবে পরনে,
দূরে—দূরে গনতলে
দিনের চিতা উঠবে জ্ব’লে—
পাটা সুরে গান গা’ব ফের নতুন ধরনে।
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা।
সাঁঝের প্রদীপ উঠবে জ্ব’লে সকল কুটিরে,
ফিরবে সবাই, ফিরব না আর আমরা দু’টি রে;—
সূর্যি মামা অস্ত যাবে,
অন্ধকারে পথ মিলাবে,
আমরা তবু চলব দু’টি গুটিগুটি রে।
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা।
বন-মেহেদীর জংলা গাছে ডাকবে পাপিয়া,
ওই সুরে ফের জাগবে গীতি পরান ছাপিয়া;
ঝাপসা নিঝুম নদীর ধারে
চলব রে ঐ নীল পাহাড়ে—
আ মোলো, তোর চলতে চরণ উঠছে কাঁপিয়া।
বাজা বাজা মাদল বাজা,
আজকে মোরা গানের রাজা।
(মাদল—ধিতাং ধিতাং তুর্র ধিতাং••••••
বাঁশি—তুতু-তু-আ তু-উ-উ-উ••••••)