সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/পূজার বাজার
পূজার বাজার
আজি এই পূজার দিনে,
যা খুশি আনতে কিনে
মা দিলেন পয়সা আমায়,—
নিয়ে তাই রাস্তা চলি—
আমি আজ কৌতূহলী
কি কিনি ভাবছি তা ঠায়।
বাজারে গেলাম চ’লে—
দেখি ভাই সদল-বলে
কত লোক করছে বাজার,—
কত কি কিনছে আসি’—
খেলেনা পুতুল-বাঁশি,
কত সব হাজার হাজার।
কেহ বা কিনছে সরেশ
বুঁদিয়া ক্ষীর দরবেশ—
কত কি কিনছে মিঠাই;
আমারে সামনে দেখে’
দোকানী বলছে হেঁকে—
‘বাবু-সা’ব, তোমার কি চাই?’
কি কিনি ভাবছি আমি,
কত কি সস্তা দামী,
দেখে’ সব চক্ষু ধাঁধায়।
ঝমাঝম্ বাজছে কাঁসর,
জমেছে মায়ের আসর,
আবেগে গড় করি মা’য়।
ও পাড়ার হাবুল গানুশ
কিনেছে লাট্টু ফানুস,
আমারে দেখায় এসে।
বোঁ ক’রে লাট্টু ঘুরায়,
নিমেষে ফানুস উড়ায়,
দেখে’ সব মরছে হেসে।
অদূরে একটি ছেলে—
সকরুণ চোখটি মেলে—
রয়েছে মুখটি নীচু।
মিনতির কাঁদন সুরে
বলে সে হাতটি জুড়ে’
‘বাবু, দে ভিক্ষে কিছু!
সারাদিন খাইনি যে গো—
দু’ মুঠি ভিক্ষে দে গো,
মরি যে ক্ষুধার জ্বালায়—’
আহা, তার শরীর কাঁপে,
আঁখি-জল নয়ন ছাপে,
কথা তার কাঁপছে যে হায়।
গায়ে তার ছিন্ন বসন,
অঝোরে ঝরছে নয়ন,
মেখেছে পথের ধূলি;
দেখে তাই ভিড় ঠেলে, ভাই,
আমি তার সামনেতে যাই;
দিনু তায় পয়সাগুলি।
কিনে আজ খেলনা শত
যেটুকু স্ফূর্তি হ’ত
সেটুকুর মূল্য কি ভাই?
আজি এই ক্ষুদ্র দানে
যা প্রীতি জাগছে প্রাণে,
আহা, তার মূল্য যে নাই!
শুনে মা উল্লাসে কয়—
‘ওরে, তুই আমার তনয়—
এ কথা ভাবতে মনে
পুলকে বুক ভ’রে যায়,
ওরে তুই আয় বুকে আয়,
পেয়েছি শুভক্ষণে।’