ভোরাই

বর্ষার ঝুপঝাপ
থামলো রে থামলো,
আলোকের নির্ঝর
ঝর‍্ঝর্ নামলো।

পূর্ব গগন-কোণে
জাগে কার মুখটি?
ঝল‍্মল্ জ্বল‍্জ্বল্
উজ্জ্বল রূপটি।

ভোর হ’ল ভোর হ’ল—
কানাকানি লাগলো,
ডাক ছেড়ে লাখ পাখী
আগডালে জাগলো।



ঝুর ঝুর ধীর বায়
দূর দূর ছুটলো,
ভুর ভুর সৌরভে
ফুল-কলি ফুটলো।

কাশ-বুড়ো দুল্ দুল্
দোল খায় ক্ষেত্রে,
বুল‍্বুল্ গায় গান
ঢুল্ ঢুল নেত্রে।

দিক জুড়ে পিক-বধূ
গায় মহানন্দে;
তুল্ তুল্ ফুল-ঝাড়
গুলজার গন্ধে;

মৌচাকে মৌমাছি
ঝুম্ ঝুম্ নাচছে,
ভোম‍‍রার পাখনায়
রুম্ ঝুম্ বাজছে।

জাগলো রে জুঁই-কলি,
চোখ মেলে ঝুমকো,
কেতকীর ডালে ডালে
লাগে মহাধুম গো।

ঝাট‍্কায় ঝর্ ঝর্
শেফালিকা ঝর‍্ছে,
টুপ টাপ হিমজল
ঝিম খেয়ে পড়ছে।

আমলকি-আগডালে
থামলো কি সঙ্গীত?
ময়না বকুল-ডালে
গায় আজ কোন্ গীত?

ডুমুরের ডালে ডালে
ঝুমুরের নাচ‍্না,
ধান-শীষে ঝুম‍্ ঝুম্—
ঘুঙুরের বাজনা।

হিন্দোলে দোল খায়।
গাছপালা ঐ রে,
খাল-বিল বিলকুল
জল-থৈ-থৈ রে।

ঐ এলো ঐ এলো
শরতের রোদ্দ‌ুর—
বাদলের সাড়া নেই,
আজ তারা কদ্দুর?

ভোর হ’ল ভোর হ’ল—
চারদিকে বাজলো,
ঘর ছাড়ি নর-নারী
মাতলো রে মাতলো।

হাসলো আকাশ, আর
হাসলো রে পৃথ্বী;
জয় জয় শরতের
অতুলন কীর্তি॥