সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/মুড়ি-জংশনে সূর্যোদয়
মুড়ি-জংশনে সূর্যোদয়
সারাটা রাত জেগে কাটাই ছারপোকাদের দংশনে,—
ভোরের বেলা রেলের গাড়ি থামবে মুড়ি-জংশনে।
রাতের আঁধার ঝাপসা হ’ল, চলল গাড়ি মন্থরে,
জানলা দিয়ে ভোরের বাতাস পুলক জাগায় অন্তরে;
তন্দ্রা-ভরা চক্ষু আমার, হঠাৎ দেখে বিস্ময়ে—
পূর্ব-গগন-তোরণ-দ্বারে অপূর্ব এক দৃশ্য হে!
স্বপ্ন যেন সত্য হয়ে পড়ল ধরা অম্বরে,—
স্বর্গীয় এক ভাবের ধারা জাগল মহাড়ম্বরে।
চলন্ত সেই গাড়ির থেকে তাকিয়ে দেখি উল্লাসে,
আবছায়া এক পাহাড় জাগে, দুই চূড়া তার দুই পাশে।
তারই ফাঁকে ফাটল-ধরা মেঘের পাটল কোণ দিয়ে
বেরিয়ে এল স্বর্ণ-ঝোরা,—কোথায় ছিল বন্দী এ?
লালচে-হলুদ-কম্লা সোনা-জর্দা-আলোর রংঝারি—
অলক্ষ্যে কে ঢালছে যেন, উঠছে নভে সঞ্চারি’।
রঙীন আলোর ফুলঝুরি আজ উল্সে ওঠে পূৰ্বেতে,—
আলোর বীণায় কে দিল আজ সাতটি রঙীন সুর বেঁধে?
সেই সুরে আজ ধরল কাঁপন থির প্রকৃতির তন্ত্রীতে,—
অরূপ ভূষায় দাঁড়ায় উষা রাত্রি-দিবার সন্ধিতে।
পাহাড়-চুড়া উঠল হেসে ঝিল্মিলিয়ে রং মেখে;
আলোর ধারায় স্নান ক’রে আজ হাসছে তাহার সঙ্গে কে?
সাজল মেয়ে হৈমবতী নবারুণের টিপ দিয়ে;
চতুর্দিকে ঝরছে যে তার আঁচল-খসা দীপ্তি এ।
প্রণাম করে সকল প্রাণী জবাকুসুমসঙ্কাশে,—
শঙ্খ বাজায় বন-বিহগে, কে জানে তার সংখ্যা সে!
উদয়ছটা মিশ্ল আমার মনের গোপন রং সনে,
উঠল রবি, রেলের গাড়ি থামল মুড়ি-জংশনে।