সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/রামার কাণ্ড
রামার কাণ্ড
আসুন, আসুন বটুকবাবু, কী সৌভাগ্য আমার!
ওরে রামা কোথায় গেলি? সাড়া যে নাই রামার!
ওরে রামা চা করে আন্ হাঁ, বলছি আবার,
বটুকবাবু হেথায় এলেন, আন্ কিছু জলখাবার।
বসুন, বসুন বটুকবাবু, শুভাগমন ভোরেই,
মহামান্য অতিথি আজ এলেন আমার দোরেই।
সিমলা থেকে এলেন কবে? ভালো তো সব খবর?
স্বাস্থ্য দেখি ফিরেছে বেশ, মোটা হলেন জবর;
চালের কি দর? কাপড়-চোপড় পাওয়া কি যায় প্রচুর?
মোদের কথা বলবার নয়, ব্যবস্থা সব কচুর।
কোনো রকম প্রাণটা নিয়ে বেঁচে আছি মশাই,
আধ-পেটা আর আধ-কাপড়ে দেখুন না কী দশাই!
একমাত্র ভেজাল খাঁটি, আর যে ঝুঁটো সকল,
ডামাডোলে ঘুলিয়ে গেছে আসল এবং নকল।
খাদ্যে ভেজাল, পথ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে সব ইতর,
হুঁ’কোর জলের গন্ধ আসে ডাবের জলের ভিতর।
এবার ধোপে টিকলে বাঁচি, অবস্থা যা আয়ের,—
আরে রামা কোথায় গেলি? ব্যবস্থা কর চায়ের।
এই যে রামা চা এনেছিস্! আসুন্, বটুক গোসাঁই,—
জীবন-নাটক হয়েছে আজ প্রহসন যে মশাই।
এই মরেছে,—ওরে রামা, চায়ে গন্ধ কিসের?
হ্যাক থু রামো, সক্রেটিসের এযে ভাণ্ড বিষের॥
বটুকবাবুর আসছে বমি,—দামড়া, পাঁঠা, ছাগল,—
হদ্দ বোকা, লাগাস্ ধোঁকা, করলি আমায় পাগল!
কী বললি? চা ছেঁকেছিস মোজা দিয়ে আমার॥
হারামজাদা, বেকুব হাঁদা, গবেট্-গাধা, চামার।
কইব কত দুখের কথা, সইব কত ধকল,
নতুন মোজা নষ্ট করে পণ্ড করি সকল?
হতচ্ছাড়ার ভঙ্গী দেখে যাচ্ছি ক্রমে চটেই,
এ্যাঁ কী বলিস? নতুন মোজায় হাত দিসনি মোটেই?
আর-বছরের নোংড়া-ছোঁড়া বাতিল-করা মোজায়—
চা ছেঁকেছিস্? গন্ধ যে তাই আসছে চায়ে সোজায়,
বটুকবাবু, করুন ক্ষমা, কী করব মশাই,
ইচ্ছা করে ভণ্ড ব্যাটার মুণ্ডুটা আজ খসাই;
গরম চায়ে চুমুক দিয়ে মেজাজ হ’ল গরম,
রামায় নিয়ে চিরটাকাল সুখেই আছি পরম॥