চিঠিপত্র (দশম খণ্ড, ১৯৬৭)/দীনেশচন্দ্র সেনকে লিখিত/৩৪

৩৪

[জুন ১৯০৬]

ওঁ

প্রিয়বরেষু

 ক্লাসের ক্ষতি হইবে শুনিয়া অধ্যাপকদের এবং অরুণের অমতে অরুণকে পাঠাইতে দ্বিধা করিতেছিলাম— লোকেরও অভাব— কাহার সঙ্গে পাঠাই? আপনি আসিয়া যদি লইয়া যান তবে অল্পকালের জন্য তাহাকে ছুটি দেওয়া যায়।

 বঙ্গভাষার অনতিবৃহৎ ইতিহাস যদি লেখেন তবে নিশ্চয় তাহা পাঠ্যপুস্তকরূপে প্রচলিত হইবে। আমার বিশ্বাস জাতীয় শিক্ষা পরিষৎ এ গ্রন্থ ছাপিবার খরচ দিতে কার্পণ্য করিবেন না। গ্রন্থ প্রকাশের কোনো ফণ্ড যে সঞ্চিত হইয়াছিল বা হওয়া সম্ভব এমন ত আমার মনে হয় না।

 নৌকাডুবিকে নানা স্থানে খর্ব্ব করিয়া তাহাকে বেশ একটু আঁটসাঁট করিবার চেষ্টা করিয়াছি। এরূপ স্থলে তাহার অনেক সুরচিত সুপাঠ্য অংশও নিশ্চয়ই বাদ পড়িয়াছে। কিন্তু বাগান সাজাইতে হইলে আবশ্যক মত অনেক ভাল গাছও ছাঁটিয়া ফেলিতে হয়— এ সকল কাজ নিপুণভাবে করিতে হইলে নিষ্ঠুর ভাবেই করিতে হয়। নিজের লেখার সম্বন্ধে সুবিচার করা শক্ত— তাহার কারণ, অন্ধ মমত্ব বাধা দেয়— কিন্তু ছাঁটিবার বেলায় সেই মমত্ব অতি ছেদনের হাত হইতে রক্ষা করে। আমি যদি লেখক না হইয়া সমালোচক হইতাম হয়ত আরো অনেক বেশি কাটিতাম।

 এখানে আসিয়া শরীরটা কলিকাতার চেয়ে অনেক ভাল আছে।

 আপনাদের খবর ভাল ত? ইতি ১লা আষাঢ় ১৩১৩

ভবদীয়
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর