চিঠিপত্র (দশম খণ্ড, ১৯৬৭)/দীনেশচন্দ্র সেনকে লিখিত/৩৩

[এপ্রিল ১৯০৬]

ওঁ

বোলপুর

প্রিয়বরেষু

 আর কাজের কথা তুলিবেন না— আমার এখন ছুটি। লিখিবার কথা আমার মনেও নাই— দেশ যে আমার কোনো কথার জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছে এমন আমার ধারণা হইতেছেনা। এখানে খোলা মাঠের বিপুল রৌদ্রের মধ্যে মনটাকে একেবারে মুক্তি দিয়া চুপ করিয়া তপ্ত হাওয়ায় পড়িয়া আছি। কখনো বা নিতান্ত আলস্য ভরে অর্ধশয়ান অবস্থায় দুটো একটা বাজে কবিতা লিখিতেছি। সত্য কথা বলিতে কি [মহা]শয় আমি আমার অন্তরের অন্তরে জাতীয়তা স্বদেশিতা প্রভৃতি কথার···হইতে মুক্ত। যখনি অবকাশ পাই তখনি নিজের এই পরিচয় আমার কাছে পরিস্ফুট হইয়া উঠে। এ সম্বন্ধে আমি যাহা কিছু বলিয়াছি নিশ্চয়ই তাহা অনেক মিথ্যায় বিজড়িত— তাহার মধ্যে শেখা বুলির ভাগই বিস্তর। আত্মার স্বাধীনতা ছাড়া আর কোনো স্বাধীনতা নাই— আমরা নূতন বন্ধনকেই মুক্তি বলিয়া ভ্রম করি। আমি এ সমস্ত জঞ্জালের মধ্যে নিজেকে জড়াইয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হইতে চাইনা— আগে বেশ একটু নিরালায় ভাল করিয়া নিজের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করিয়া লই আগে নির্ম্মল অন্তঃকরণে সমস্ত জিনিসটাকে তলাইয়া দেখি— তার পরে যদি কথা বলার আবশ্যক থাকে ত কথা বলিব। আমি এখন লোকলোচনের অন্তরালে থাকিতে ইচ্ছা করি— আমার আর যশোমানে কাজ নাই। ভিড়ের মধ্যেই যদি দিন কাটাই তবে ঘরের কাজ কখন করিব? অতএব এবারে আমি সরিয়া পড়িলাম। মহিমকে আজই একটা তাগিদ পত্র পাঠাইব। আপনি আমার বৎসর ফল গণনার জন্য ব্যস্ত হইবেন না।

 পরীক্ষার কাজ শেষ হইয়া গেলে একবার না হয় বোলপুরে বেড়াইয়া যাইবেন। জায়গাটা দার্জ্জিলিং নয় সে কথা সত্য কিন্তু আমি দেখিয়াছি মানুষ গরম গরম বলিতে বলিতে অত্যুক্তি দ্বারা নিজেকে অধীর করিয়া তুলে। বোলপুরের গরম আমার কাছে একদিনও অসহ্য বোধ হয় নাই।

 আশা করি আপনাদের সমস্ত মঙ্গল। ইতি ৯ই বৈশাখ ১৩১৩

আপনার
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 ...চিহ্নিত অংশ কীটদষ্ট