অগ্নি-বীণা/প্রলয়োল্লাস
প্রলয়ােল্লাস
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্।
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বােশেখীর ঝড়।
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্।
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল
সিন্ধু-পারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
মৃত্যু-গহন অন্ধ-কূপে
মহাকালের চণ্ড-রূপে
ধূম্র ধূপে
বজ্র শিখার মশাল জেলে আস্ছে ভয়ঙ্কর—
ওরে ঐ হাস্ছে ভয়ঙ্কর!
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
ঝামর তাহার কেশের দোলার ঝাপ্টা মেরে গগন দুলায়
সর্ব্বনাশী জ্বালা-মুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!
বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে
রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে
দোদুল দোলে!
অট্টরোলের হট্টগােলে স্তব্ধ চরাচর—
ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর!
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
বিন্দু তাহার নয়ন-জলে
সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
কপােল-তলে!
বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর পর—
হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ঙ্কর!”
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তােরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
মাভৈঃ মাভৈঃ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ লুকানো ঐ বিনাশে!
এবার মহা-নিশার শেষে
আস্বে উষা অরুণ হেসে
করুণ বেশে!
দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাঁদের কর—
আলো তার ভর্বে এবার ঘর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
ঐ সে মহাকাল-সারথি রক্ত-তড়িত-চাবুক হানে,
রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন বজ-গানে ঝড়-তুফানে!
ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!
গগন-তলের নীল খিলানে।
অন্ধ কারার বন্ধ কূপে
দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যুপে
পাষাণ-স্তূপে!
এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর—
শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?—প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন, জীবন-হারা অ-সুন্দরে কর্তে ছেদন!
তাই সে এমন কেশে বেশে
প্রলয় বয়েও আস্ছে হেসে—
মধুর হেসে!
ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চির-সুন্দর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
ঐ ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!—
বধূরা প্রদীপ তুলে ধর্!
কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!—
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর্!!