গোরা wවIV পাইল । হারানবাবুর মুখের অপ্রসন্নতা লক্ষ্য করিয়া কহিল, "অনেক দিন আসি নি বলে রাগ করেছেন বুঝি !” হারানবাবু পরিহাসে যোগ দিবার চেষ্টা করিদ্ধা কহিলেন, “রাগ করবারই কথা বটে। কিন্তু আজ আপনি একটু অসময়ে এসেছেন— স্বচরিতার সঙ্গে আমার একটা বিশেষ কথা হচ্ছিল ।” বিনয় শশব্যস্ত হইয়া উঠিল ; কহিল, “ওই দেখুন, আমি কখন এলে যে অসময়ে আসা হয় না তা আমি আজ পর্যন্ত বুঝতেই পারলুম না! এই জন্যই আসতে সাহসই হয় না।” বলিয়া বিনয় বাহির হইয়া যাইবার উপক্রম করিল ! স্বচরিতা কহিল, “বিনয়বাবু, যাবেন না। আমাদের যা কথা ছিল শেষ হয়ে গেছে। আপনি বস্থন ।” w বিনয় বুঝিতে পারিল সে আসাতে স্বচরিতা একটা বিশেষ সংকট হইতে পরিত্রাণ পাইয়াছে। খুশি হইয়া একটা চেকিতে বসিয়া পড়িল এবং কহিল, “আমাকে প্রশ্রয় দিলে আমি কিছুতেই সামলাতে পারি নে। আমাকে বসতে বললে আমি বসবই এইরকম আমার স্বভাব । অতএব, দিদির প্রতি নিবেদন এই যে, এ-সব কথা যেন বুঝেস্বঝে বলেন, নইলে বিপদে পড়বেন ।” হারানবাবু কোনো কথা না বলিয়া আসন্ন ঝড়ের মতে স্তব্ধ হইয়া রছিলেন । তিনি নীরবে প্রকাশ করিলেন— আচ্ছা বেশ, আমি অপেক্ষা করিয়া বসিয়া রছিলাম, আমার যা কথা আছে তাহা শেষ পর্যন্ত বলিয়া তবে আমি উঠিব ।’ স্বারের বাহির হইতে বিনয়ের কণ্ঠস্বর শুনিয়াই ললিতার বুকের ভিতরকার সমস্ত রক্ত যেন চমক খাষ্টয়া উঠিয়াছিল । সে বহুকষ্টে আপনার স্বাভাবিক ভাব রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু কিছুতেই পারিল না। বিনয় যখন ঘরে প্রবেশ করিল ললিতা বেশ সহজে তাহীদের পরিচিত বন্ধুর মতো তাহাকে কোনো কথা বলিতে পারিল না। কোন দিকে চাহিবে, নিজের হাতখানা লইয়া কী করিবে, সে যেন একটা ভাবনার বিষয় হইয়া পড়িল ৷ একবার উঠিয়া যাইবার চেষ্টা করিয়াছিল কিন্তু মুচরিতা কোনোমতেই তাহার কাপড় ছাড়িল না । বিনয়ও যাহা-কিছু কথাবার্তা সমস্ত স্বচরিতার সঙ্গেই চালাইল, ললিতার নিকট কোনো কথা ফাদা তাহার মতো বাকৃপটু লোকের কাছেও আজ শক্ত হইয়া উঠিল । এইজস্তই সে যেন ভবল জোরে স্বচরিতার সঙ্গে আলাপ করিতে লাগিল, কোথাও কোনো ফাক পড়িতে দিল না । কিন্তু হারানবাবুর কাছে ললিতা ও বিনয়ের এই নূতন সংকোচ অগোচর রহিল
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।