অন্নদামঙ্গল/শিব বিবাহ যাত্রা
শিব বিবাহ যাত্রা।
শিবের বিবাহ পরম উৎসাহ সবে হৈল যত্নবান।
পরম সন্তোষে দুন্দুভি নির্ঘোষে ইন্দ্র হৈল আগুয়ান॥
নিজগণ লয়ে বর যাত্র হয়ে চলিলা যত অমর।
অপ্সর নাচিছে কিন্নর গাইছে পুলকিত মহেশ্বর॥
ব্রহ্মা পুরোহিত চলিলা ত্বরিত বরকর্ত্তা নারায়ণ।
ইন্দ্রের শাসনে মরুত ভুবনে চলে যত রাজগণ॥
কুবের ভাণ্ডারি যক্ষগণ ভারি নানা আয়োজন সাজি।
বায়ু করি বল আপনি অনল হইলা আতস বাজি॥
নারদ রসিয়া হাসিয়া হাসিয়া সাজাইতে গেলা বর।
বসি ছিলা হর উঠিলা সত্বর নারদ কহে তৎপর॥
জটাজূটে চূড়া সাপে বান্ধ খুড়া মুক্কুটে কি দিবে শোভা।
কি কাজ মুক্তায় হাড়ের মালায় কন্যার মা হবে লোভা॥
কস্তূরী কেশরে চন্দনে কি করে ঘন করে মাখ ছাই।
কি করে মণিতে যে শোভা ফণিতে হেন বর কোথা পাই॥
ফুলমালা যত শোভা দিবে কঁত যে শোভা মুণ্ডের মালে।
কাপড়ে কি শোভা জগমনলোভা যে শোভা বাঘের ছালে॥
রথ হস্তী আর কি কাজ তোমার যে বুড়া বলদ আছে।
তোমার যে গুণ কব কোটি গুণ আমি মেনকার কাছে॥
অধিক করিয়া সিদ্ধি মিশাইয়া ধুতূরা খাইতে হবে।
যাবত বিবাহ না হবে নির্ব্বাহ উপবাস তবে সবে॥
এরূপ করিয়া বর সাজাইয়া হর লয়ে মুনি যায়।
প্রেত ভূতগণ ধায় অগণন আন্ধার কৈল ধূলায়॥
ঝুপ ঝুপ ঝাপ দুপ দুপ দাপ লম্ফ ঝম্প দিয়া চলে।
মহা ধূম ধাম হাঁকে হূম হাম জয় মহাদেব বলে॥
সহজে সবার বিকট আকার সহিতে না পারে আল।
থাবায় থাবায় মসাল নিবায় আন্ধারে শোভিল ভাল॥
করতালী দিয়া বেড়ায় নাচিয়া হাসে হিহি হিহি হিহি।
দন্ত কড়মড়ি করে জড়াজড়ি লক লক লক জিহি॥
করে চড়াচড়ি ধায় রড়ারড়ি কিলাকিলি গণ্ডগোল।
কেকারে আছাড়ে কেকারে পাছাড়ে কে মানে কাহার বোল॥
তরু উপাড়িয়া গিরি উখাড়িয়া কৈল প্রলয়ের ঝড়।
বরযাত্রগণ লইয়া জীবন পলাইল দিয়া রড়॥
ইন্দ্রাদি পলায় অন্য কেবা তায় দেখিয়া আনন্দ হরে।
আগে ভাগে হরি বিধি সঙ্গে করি গেল হেমন্তের ঘরে॥
হিমগিরিরাজ করিয়া সমাজ বসি পুরোহিত সাথ।
বলদে চড়িয়া শিঙ্গা বাজাইয়া এল বর ভূতনাথ॥
যত কন্যা যাত্র দেখিয়া সুপাত্র বলে এ কেমন বর।
বরযাত্রগণে দেখি ভয় মনে না সরে কার উত্তর॥
কৃষ্ণচন্দ্র রায় রাজা ইন্দ্রপ্রায় অশেষ গুণসাগর।
তার অভিমত রচিলা ভারত কবি রায় গুণাকর॥