পলাতক তুফান
(বৈজ্ঞানিক রহস্য)
প্রথম পরিচ্ছেদ

 কয়েক বৎসর পূর্ব্বে এক অত্যাশ্চর্য্য ভৌতিক কাণ্ড ঘটিয়াছিল। তাহা লইয়া অনেক আন্দোলন হইয়া গিয়াছে এবং এ বিষয়ে ইউরোপ এবং আমেরিকার বিবিধ বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় অনেক লেখালেখি চলিয়াছে। কিন্তু এ পর্য্যন্ত কিছু মীমাংসা হয় নাই।

 ২৮ এ সেপ্টেম্বর তারিখে কলিকাতার ইংরাজী সংবাদপত্রে সিমলা হইতে এক তারের সংবাদ প্রকাশ হয়—

 সিমলা, হাওয়া আফিস ২৭এ সেপ্টেম্বর। “বঙ্গোপসাগরে শীঘ্রই ঝড় হইবার সম্ভাবনা।”

 ২৯এ তারিখের কাগজে নিম্নলিখিত সংবাদ প্রকাশিত হইল—হাওয়া আফিস আলিপুর। “দুই দিনের মধ্যেই প্রচণ্ড ঝড় হইবে। ডায়মণ্ড-হারবারে এই মর্ম্মে নিশান উত্থিত করা হইয়াছে।”

 ৩০এ তারিখে যে খবর প্রকাশিত হইল তাহা অতি ভীতিজনক—

 “আধঘণ্টার মধ্যে চাপমান যন্ত্র দুই ইঞ্চি নামিয়া গিয়াছে। আগামী কল্য ১০ ঘটিকার মধ্যে কলিকাতায় অতি প্রচণ্ড ঝড় হইবে; এরূপ তুফান বহু বৎসরের মধ্যে হয় নাই।”

 কলিকাতার অধিবাসীরা সেই রাত্রি কেহই নিদ্রা যায় নাই। আগামীকল্য কি হইবে তাহার জন্য সকলে ভীত চিত্তে প্রতীক্ষা করিতে লাগিল।

 ১লা অক্টোবর আকাশ ঘোর মেঘাচ্ছন্ন হইল। দুই-চার ফোঁটা বৃষ্টি পড়িতে লাগিল।

 সমস্ত দিন মেঘাবৃত ছিল, কিন্তু বৈকাল ৪ ঘটিকার সময় হঠাৎ আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেল। ঝড়ের চিহ্নমাত্রও রহিল না।

 তার পর দিন হাওয়া আপিস খবরের কাগজে লিখিয়া পাঠাইলেন—

 “কলিকাতায় ঝড় হইবার কথা ছিল, বোধ হয় উপসাগরের কূলে প্রতিহত হইয়া ঝড় অন্য অভিমুখে চলিয়া গিয়াছে।”

 ঝড় কোন্ দিকে গিয়াছে তাহার অনুসন্ধানের জন্য দিক্-দিগন্তরে লোক প্রেরিত হইল; কিন্তু তাহার কোন সন্ধান পাওয়া গেল না।

 তারপর সর্ব্বপ্রধান ইংরাজী কাগজ লিখিলেন—এত-দিনে বুঝা গেল যে, বিজ্ঞান সর্ব্বৈব মিথ্যা।

 অন্য কাগজে লেখা হইল, যদি তাহাই হয় তবে গরীব টেক্সদাতাদিগকে পীড়ন করিয়া হাওয়া আফিসের ন্যায় অকর্ম্মণ্য আফিস রাখিয়া লাভ কি?

 তখন বিবিধ সংবাদপত্র তারস্বরে বলিয়া উঠিলেন—উঠাইয়া দাও।

 গবর্ণমেণ্ট বিভ্রাটে পড়িলেন। অল্প দিন পূর্ব্বে হাওয়া আফিসের জন্য লক্ষাধিক টাকার ব্যারোমিটার, থার্মোমিটার আনান হইয়াছে। সেগুলি এখন ভাঙ্গা শিশি বোতলের মূল্যেও বিক্রয় হইবে না। আর হাওয়া আফিসের বড় সাহেবকে কি কার্য্যে নিয়োগ করা যাইতে পারে?

 গবর্ণমেণ্ট নিরুপায় হইয়া কলিকাতা মেডিকেল কলেজে লিখিয়া পাঠাইলেন- “আমরা ইচ্ছা করি ভেষজবিদ্যার এক নূতন অধ্যাপক নিযুক্ত হইবেন। তিনি বায়ুর চাপের সহিত মানুষের স্বাস্থ্য-সম্বন্ধ বিষয়ে বক্তৃতা করিবেন।”

 মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ লিখিয়া পাঠাইলেন—“উত্তম কথা, বায়ুর চাপ কমিলে ধমনী স্ফীত হইয়া উঠে, তাহাতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয়। তাহাতে সচরাচর আমাদের যে স্বাস্থ্য-ভঙ্গ হইতে পারে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই তবে কলিকাতাবাসীরা আপাততঃ বহুবিধ চাপের নীচে আছে:—

১ম বায়ু প্রতি বর্গইঞ্চি ১৫ পাউণ্ড
২য় ম্যালেরিয়া   ২০
৩য় পেটেণ্ট ঔষধ   ৩০
৪র্থ ইউনিভার্সিটি   ৫০
৫ম ইন্‌কম ট্যাক্স   ৮০
৬ষ্ঠ মিউনিসিপাল ট্যাক্স   টন।

 বায়ুর ২/১ ইঞ্চি চাপের ইতর বৃদ্ধি ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’ স্বরূপ হইবে। সুতরাং কলিকাতায় এই নূতন অধ্যাপনা আরম্ভ করিলে বিশেষ যে উপকার হইবে এরূপ বোধ হয় না।

 তবে সিমলা পাহাড়ে বায়ুর চাপ ও অন্যান্য চাপ অপেক্ষাকৃত কম। সেখানে উক্ত অধ্যাপক নিযুক্ত হইলে বিশেষ উপকার দর্শিতে পারে।”

 ইহার পর গভর্ণমেণ্ট নিরুত্তর হইলেন। হাওয়া আফিস এবারকার মত অব্যাহতি পাইল।

 কিন্তু যে সমস্যা লইয়া এত গোল হইল তাহা পূরণ হইল না।

 একবার কোন বৈজ্ঞানিক বিলাতের ‘নেচার’ কাগজে লিখিয়াছিলেন বটে; তাঁহার থিয়োরী এই যে, কোন অদৃশ্য ধূমকেতুর আকর্ষণে আবর্ত্তমান বায়ুরাশি ঊর্দ্ধে চলিয়া গিয়াছে।

 এসব অনুমান মাত্র। এখনও এ বিষয় লইয়া বৈজ্ঞানিক জগতে ঘোরতর আন্দোলন চলিতেছে। অক্সফোর্ডে যে ব্রিটিশ এসোসিয়েসনের অধিবেশন হইয়াছিল তাহাতে এক অতি বিখ্যাত জার্ম্মাণ অধ্যাপক “পলাতক তুফান” সম্বন্ধে অতি পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রবন্ধ পাঠ করিয়া সমবেত বৈজ্ঞানিকমণ্ডলীর বিস্ময় উৎপাদন করিয়াছিলেন। প্রবন্ধারম্ভে অধ্যাপক বলিলেন, তুফান বায়ুমণ্ডলের আবর্ত্তমাত্র। সর্ব্বাগ্রে দেখা যাউক, কিরূপে বায়ুমণ্ডলের উৎপত্তি হইয়াছে। পৃথিবী যখন ফুটন্ত ধাতুপিণ্ডরূপে সূর্য্য হইতে ছুটিয়া আসিল তখন বায়ুর উৎপত্তি হয় নাই। কী করিয়া অম্লজান, দ্ব্যম্লজান ও উদ্‌জানের উৎপত্তি হইল তাহা সৃষ্টির এক গভীর প্রহেলিকা! যবক্ষারজানের উৎপত্তি আরও বিস্ময়কর। ধরিয়া লওয়া যাউক, কোন প্রকারে বায়ুরাশি উৎপন্ন হইয়াছে। গুরুতর সমস্যা এই যে, কি কারণে বায়ু শূন্যে মিলাইয়া যায় না। ইহার মূল কারণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। আপেক্ষিক গুরুত্ব অনুসারে পদার্থের উপর পৃথিবীর আকর্ষণ বেশী কিম্বা কম। যাহা গুরু তাহার উপরেই টান বেশী এবং তাহা সেই পরিমাণে আবদ্ধ। হাল্কা জিনিষের উপর টান কম, তাহা অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত। এই কারণে তৈল ও জল মিশ্রিত করিলে লঘু তৈল উপরে ভাসিয়া উঠে। উদ্‌জান হাল্কা গ্যাস বলিয়া অনেক পরিমাণে উন্মুক্ত এবং উপরে উঠিয়া পলাইবার চেষ্টা করে; কিন্তু মাধ্যাকর্ষণের টান একেবারে এড়াইতে পারে না। আপেক্ষিক গুরুত্ব সম্বন্ধে যে বৈজ্ঞানিক সত্য বর্ণিত হইল তাহা যে পৃথিবীর সর্ব্বস্থানে প্রযুজ্য এ সম্বন্ধে সন্দেহ আছে; কারণ ইণ্ডিয়া নামক দেশে যদিও পুরুষজাতি গুরু তথাপি তাহারা উন্মুক্ত, আর লঘু স্ত্রীজাতিই সে দেশে আবদ্ধ!

 সে যাহা হউক, পদার্থমাত্রেই মাধ্যাকর্ষণবলে ভূপৃষ্ঠে আবদ্ধ থাকে। পদার্থের মৃত্যুর পর স্বতন্ত্র কথা। মানুষ মরিয়া যখন ভূত হয় তখন তাহার উপর পৃথিবীর আর কোন কর্ত্তৃত্ব থাকে না। কেহ কেহ বলেন, মরিয়াও নিষ্কৃতি নাই; কারণ ভূতদিগকেও থিয়োসফিক্যাল সোসাইটির আজ্ঞানুসারে চলাফেরা করিতে হয়। পদার্থও পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হইয়া থাকে—পদার্থ সম্বন্ধে পঞ্চত্ব কথা প্রয়োগ করা ভুল; কারণ রেডিয়ামের গুতা খাইয়া পদার্থ ত্রিত্ব প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ আলফা, বিটা ও গামা এই তিন ভূতে পরিণত হয়। এইরূপে পদার্থের অস্তিত্ব যখন লোপ হয় তখন অপদার্থ শূন্যে মিলিয়া যায়। কিন্তু যতদিন পার্থিব পদার্থ জীবিত থাকে ততদিন পৃথিবী ছাড়িয়া পলায়ন করিতে পারে না।

 যদিও অধ্যাপক মহাশয়, পদার্থ কেন পলায়ন করে না, এ সম্বন্ধে অকাট্য বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রয়োগ করিলেন, তথাপি তুফান কেন পলায়ন করিল, এ সম্বন্ধে কিছুই বলিলেন না।

 এই ঘটনার প্রকৃত তত্ত্ব পৃথিবীর মধ্যে একজন মাত্র জানে—সে আমি।

 পরের অধ্যায়ে ইহা বিস্তৃতরূপে বর্ণিত হইবে।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

 গত বৎসর আমার বিষম জ্বর হইয়াছিল। প্রায় মাসেক কাল শয্যাগত ছিলাম।

 ডাক্তার বলিলেন—সমুদ্রযাত্রা করিতে হইবে, নতুবা পুনরায় জ্বর হইলে বাঁচিবার সম্ভাবনা নাই। আমি জাহাজে লঙ্কাদ্বীপ যাইবার জন্য উদ্যোগ করিলাম।

 এতদিন জ্বরের পর আমার মস্তকের ঘন কুন্তলরাশি একান্ত বিরল হইয়াছিল। একদিন আমার অষ্টমবর্ষীয়া কন্যা আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, দ্বীপ কাহাকে বলে?” আমার কন্যা ভূগোল-তত্ত্ব পড়িতে আরম্ভ করিয়াছিল। আমার উত্তর পাইবার পূর্ব্বেই বলিয়া উঠিল “দ্বীপ”—ইহা বলিয়া প্রশান্ত সমুদ্রের ন্যায় আমার বিরল-কেশ মসৃণ মস্তকে দুই এক গোছা কেশের মণ্ডলী দেখাইয়া দিল।

 তারপর বলিল, “তোমার ব্যাগে এক শিশি ‘কুন্তল-কেশরী’ দিয়াছি; জাহাজে প্রত্যহ ব্যবহার করিও, নতুবা নোনা জল লাগিয়া এই দুই একটি দ্বীপের চিহ্নও থাকিবে না।” ‘কুন্তল-কেশরী’র আবিষ্কার এক রোমাঞ্চকর ঘটনা। সার্কাস দেখাইবার জন্য বিলাত হইতে এদেশে এক ইংরেজ আসিয়াছিল। সেই সার্কাসে কৃষ্ণ কেশর-ভূষিত সিংহই সর্ব্বাপেক্ষা আশ্চর্য দৃশ্য ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে জাহাজে আসিবার সময় আণুবীক্ষণিক কীটের দংশনে সমস্ত কেশরগুলি খসিয়া যায় এবং এদেশে পৌঁছিবার পর সিংহ এবং লোমহীন কুকুরের বিশেষ পার্থক্য রহিল না। নিরুপায় হইয়া সার্কাসের অধ্যক্ষ এক সন্ন্যাসীর শরণাপন্ন হইল এবং পদধূলি লইয়া জোড়হস্তে বর প্রার্থনা করিল। একে ম্লেচ্ছ, তাহাতে সাহেব! ভক্তের বিনয় ব্যবহারে সন্ন্যাসী একেবারে মুগ্ধ হইলেন এবং বরস্বরূপ স্বপ্নলব্ধ অবধৌতিক তৈল দান করিলেন। পরে উক্ত তৈল ‘কুন্তল-কেশরী’ নামে জগৎ-বিখ্যাত হইয়াছে। তৈল প্রলেপে এক সপ্তাহের মধ্যেই সিংহের লুপ্ত কেশর জাগিয়া উঠিল। কেশহীন মানব এবং তস্য ভার্য্যার পক্ষে উক্ত তৈলের শক্তি অমোঘ লোকহিতার্থেই এই শুভ সংবাদ দেশের সমস্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এমন কি, অতি বিখ্যাত মাসিক পত্রিকার সর্ব্বপ্রথম পৃষ্ঠায় এই অদ্ভুত আবিষ্কার বিঘোষিত হইয়া থাকে।

 ২৮এ তারিখে আমি চুসান জাহাজে সমুদ্রযাত্রা করিলাম। প্রথম দুইদিন ভালরূপেই গেল। ১লা তারিখ প্রত্যুষে সমুদ্র এক অস্বভাবিক মূর্ত্তি ধারণ করিল, বাতাস একেবারে বন্ধ হইল। সমুদ্রের জল পর্য্যন্ত সীসার রঙের ন্যায় বিবর্ণ হইয়া গেল।

 কাপ্তানের বিমর্ষ মুখ দেখিয়া আমরা ভীত হইলাম। কাপ্তান বলিলেন, “যেরূপ লক্ষণ দেখিতেছি, অতি সত্বরই প্রচণ্ড ঝড় হইবে। আমরা কূল হইতে বহু দূরে—এখন ঈশ্বরের ইচ্ছা।”

 এই সংবাদ শুনিয়া জাহাজে যেরূপ ঘোর ভীতিসূচক কলরব হইল তাহা বর্ণনা করা অসম্ভব।

 দেখিতে দেখিতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া গেল। চারিদিক মুহূর্ত্তের মধ্যে অন্ধকার হইল এবং দূর হইতে এক এক ঝাপটা আসিয়া জাহাজখানাকে আন্দোলিত করিতে লাগিল।

 তারপর মুহূর্ত্তমধ্যে যাহা ঘটিল তাহার সম্বন্ধে আমার কেবল এক অপরিষ্কার ধারণা আছে। কোথা হইতে যেন রুদ্ধ দৈত্যগণ একেবারে নির্ম্মুক্ত হইয়া পৃথিবী সংহারে উদ্যত হইল।

 বায়ুর গর্জ্জনের সহিত সমুদ্র স্বীয় মহাগর্জ্জনের সুর মিলাইয়া সংহার মূর্ত্তি ধারণ করিল।

 তারপর অনন্ত ঊর্ম্মিরাশি, একের উপর অন্যে আসিয়া একেবারে জাহাজ আক্রমণ করিল।

 এক মহা ঊর্ম্মি জাহাজের উপর পতিত হইল এবং মাস্তুল, লাইফ-বোট ভাঙ্গিয়া লইয়া গেল।

 আমাদের অন্তিমকাল উপস্থিত। মুমূর্ষু সময়ে জীবনের স্মৃতি যেরূপ জাগিয়া উঠে, সেইরূপ আমার প্রিয়জনের কথা মনে হইল। আশ্চর্য্য এই, আমার কন্যা আমার বিরল কেশ লইয়া যে উপহাস করিয়াছিল, এই সময়ে তাহা পর্য্যন্ত স্মরণ হইল—

 “বাবা, এক শিশি ‘কুন্তল-কেশরী’ তোমার ব্যাগে দিয়াছি।”

 হঠাৎ এক কথায় আর এক কথা মনে পড়িল। বৈজ্ঞানিক কাগজে ঢেউয়ের উপর তৈলের প্রভাব সম্প্রতি পড়িয়াছিলাম। তৈল যে চঞ্চল জলরাশিকে মসৃণ করে, এ বিষয়ে অনেক ঘটনা মনে হইল।

 অমনি আমার ব্যাগ হইতে তৈলের শিশি খুলিয়া অতি কষ্টে ডেকের উপর উঠিলাম। জাহাজ টলমল করিতেছিল।

 উপরে উঠিয়া দেখি, সাক্ষাৎ কৃতান্তসম পর্ব্বতপ্রমাণ ফেনিল এক মহা ঊর্মি জাহাজ গ্রাস করিবার জন্য আসিতেছে।

 আমি ‘জীব আশা পরিহরি’ সমুদ্র লক্ষ্য করিয়া ‘কুন্তল-কেশরী’ বাণ নিক্ষেপ করিলাম। ছিপি খুলিয়া শিশি সমুদ্রে নিক্ষেপ করিয়াছিলাম; মুহূর্ত্ত মধ্যে তৈল সমুদ্রে ব্যাপ্ত হইয়াছিল।

 ইন্দ্রজালের প্রভাবের ন্যায় মুহূর্তমধ্যে সমুদ্র প্রশান্ত মূর্ত্তি ধারণ করিল। কমনীয় তৈল স্পর্শে বায়ুমণ্ডল পর্য্যন্ত শান্ত হইল। ক্ষণ পরেই সূর্য্য দেখা দিল।

 এইরূপে আমরা নিশ্চিত মরণ হইতে উদ্ধার পাই এবং এই কারণেই সেই ঘোর ব্যাত্যা কলিকাতা স্পর্শ করে নাই। কত সহস্র সহস্র প্রাণী যে এই সামান্য এক বোতল তৈলের সাহায্যে অকাল মৃত্যু হইতে রক্ষা পাইয়াছে, কে তাহার সংখ্যা করিবে?