অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/দ্বিতীয় পর্ব/অধ্যায়: আট


অধ্যায় আট


সেঞ্চুরি—৭

 এটা একমাত্র অসম্পূর্ণ সেঞ্চুরি। এতে ১০০-র বদলে কবিতার সংখ্যা মাত্র ৪২। তাই পাঁচটার বদলে আমি এই সেঞ্চুরি থেকে বিশ্লেষণ করিছি মাত্র দুটো কবিতার।

সূচি :

 ১। কবিতা—৭ : ইসলামের পতন।

 ২। কবিতা—৪২ : একটি রাজহত্যার চক্রান্ত।

কবিতা—৭ (সেঃ—৭)

Sur le combat des grans cheveux legiers,
On criera le grand croissant confond :
De nuict tuer monts, habits de bergiers,
Ablismes rouges dans le fosse profond.

 এর অর্থ হল :

ঘোড়ায় ঘোড়ায় লাগবে মহাযুদ্ধ,
এই সময় অর্ধ-চন্দ্রকে শেষ করে দেবার দাবি উঠবে।
রাত্রে পাহাড়ের ওপর তারা হত্যা করতে আসবে মেষপালকের পোশাকে,
মাটির মাঝে গর্তগুলি হয়ে উঠবে এক একটি লাল সমুদ্র।

 ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : ইসলামের পতন

 ঘটনাটা এখনও ঘটেনি, তবে ঘটবে। এমন ধারণা এরিকার। ঘটনাটা হল ইসলামের সম্ভাব্য পতন। তবে কবে তা ঘটবে, তা বলতে পারেননি নস্ট্রাডামুস (অর্থাৎ এরিকা)।

 প্রথম লাইনে ঘোড়ার উল্লেখ কেন করা হল, তা ব্যাখ্যা করেননি এরিকা। দ্বিতীয় লাইনে যে অর্ধচন্দ্রের উল্লেখ আছে, সেই অর্ধচন্দ্র দ্বারা নস্ট্রাডামুস সম্ভবত ইসলাম-ধর্মকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন :—মন্তব্য করেছেন ব্যাখ্যাকার। অর্থাৎ ইসলামকে শেষ করার দাবি উঠবে। এরিকার ধারণা, ইসলামের পতন ঘটাবে একদল আক্রমণকারী, যাদের পরনে থাকবে মেষপালকের ছদ্মবেশ। চতুর্থ লাইনের ব্যাখ্যা হল এই যে, মাটির মাঝে গর্তগুলি ভরে যাবে মুসলমানদের তাজা রক্তে।

 যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :

 ঘটনাটা যেহেতু ঘটেনি এখনও, তাই তাকে খন্ডন করারও প্রশ্ন ওঠে না। তবু দু’একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। মেষপালকের পোশাক পরা কয়েকজন আক্রমণকারীর জন্য সারা বিশ্বে ইসলামের পতন ঘটবে,—এমন কথা কি বিশ্বাসযোগ্য?

 পাঠকরা কী মনে করেন? প্রথম লাইনেরই বা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক কী?

কবিতা—৪২ (সেঃ—৭)

 একেই এই সেঞ্চুরিতে কবিতা মাত্র ৪২টি। তার ওপর এরিকা আবার বেশিরভাগই ব্যাখ্যা করতে পারেননি। ব্যাখ্যা করা কবিতার সংখ্যা মাত্র ১৮। তাই আপনাদের কাছে পরিবেশন করার মতো ভালো কবিতা এই সেঞ্চুরি থেকে বিশেষ পেলাম না। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আরো একটি কথা—নস্ট্রাডামুসের সব কবিতার ব্যাখ্যা কিন্তু এখনও কেউ করেননি। অর্থাৎ এখনও গোঁজামিলের সূত্রগুলো আবিষ্কার করতে পারেননি।

Deux de poison saisiz nouveau venuz,
Dans la cuisine du grand Prince verser :
Par le souillard tous deux au faicts congneuz,

 এর অর্থ হল :

যে দুজন নতুন এসেছে, তারা বিষের পাত্র নেবে তুলে,
রাজার রান্নাঘরে যাবে সে বিষ-পাত্র নিয়ে :
যে বাসন পরিষ্কার করে, সে হাতেনাতে ধরবে তাদের,
নিয়ে আসবে রাজার সামনে একজনকে, পালাবে অন্যজন।

 ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : একটি রাজহত্যার চক্রান্ত

 ঘটনাটাকে ব্যাখ্যা করার বিশেষ প্রয়োজন নেই, কেননা কবিতার বক্তব্য স্পষ্ট।—বলেছেন চিটহ্যাম। তবে ঘটনাটা কোথায়, কবে ঘটবে, তা বলতে পারেননি।

 যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :

 ঘটনাটা ঘটেনি, তাই অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী? তবে খেয়াল করুন, ঘটনাটা এমনই, যা নস্ট্রাডামুসের সময়ে, বা তার আগে প্রচুর ঘটত। আমাদের দেশেও রাজা, সম্রাটদের আমলে এ ধরনের ঘটনা, অর্থাৎ খাবারে বিষ মিশিয়ে রাজহত্যার চক্রান্ত ঘটত। নস্ট্রাডামুস নিজেও এখানে বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। কেননা তাঁর নিশ্চয়ই মনে হয়েছিল পৃথিবীর কোনো না কোনো দেশে, কোনো না কোনো দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। তাই তা উল্লেখ করে এ কবিতা লিখেছেন।

 কিন্তু এরিকা বলেছেন যে, এ ধরনের ঘটনা কোথাও এখনও ঘটেনি। আমার মনে হয় এরিকা আর একটু খাটলে, আর একটু ইতিহাস-বই ঘাঁটাঘাঁটি করলে এর সঙ্গে ‘জুড়ে দেবার’ মতো অনেক ঘটনাই পেয়ে যেতেন।

 আর একটা কথা। রাজাদের দিন কিন্তু প্রায় শেষ হয়েছে। অতএব এই কবিতার ভবিষ্যতে সাফল্যলাভের সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ কেননা এতে একজন ‘রাজা’কে হত্যার চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।