আকাশ-প্রদীপ/তর্ক
তর্ক
নারীকে দিবেন বিধি পুরুষের অন্তরে মিলায়ে
সেই অভিপ্রায়ে
রচিলেন সূক্ষ্ম শিল্প-কারুময়ী কায়া,
তারি সঙ্গে মিলালেন অঙ্গের অতীত কোন্ মায়া
যারে নাহি যায় ধরা,
যাহা শুধু জাদুমন্ত্রে ভরা,
যাহারে অন্তরতম হৃদয়ের অদৃশ্য আলোকে
দেখা যায় ধ্যানাবিষ্ট চোখে,
ছন্দোজালে বাঁধে যার ছবি
না-পাওয়া বেদনা দিয়ে কবি।
যার ছায়া সুরে খেলা করে
চঞ্চল দিঘির জলে আলোর মতন থরথরে।
নিশ্চিত পেয়েছি ভেবে যারে
অবুঝ আঁকড়ি রাখে আপন ভোগের অধিকারে,
মাটির পাত্রটা নিয়ে বঞ্চিত সে অমৃতের স্বাদে,
ডুবায় সে ক্লান্তি অবসাদে
সোনার প্রদীপ শিখা-নেভা।
দূর হতে অধরাকে পায় যে বা
চরিতার্থ করে সেই কাছের পাওয়ারে
পূর্ণ করে তারে॥
নারীস্তব শুনালেম। ছিল মনে আশা
উচ্চতত্ত্বে ভরা এই ভাষা
উৎসাহিত করে দেবে মন ললিতার,
পাব পুরস্কার।
হায়রে, দুগ্রর্হগুণে
কাব্য শুনে
- বানানো কথার ঘট । সদরেতে যত বড়ো, অন্দরেতে ততখানি ফাকি। জানি না কি দূর হতে নিরামিষ সাত্ত্বিক মৃগয়া নুই পুরুষের হাড়ে অমায়িক বিশুদ্ধ এ দয়া।” আমি শুধালেম, “আর তোমাদের ?” সে কহিল, “আমাদের চারিদিকে শক্ত আছে ঘের পরশ-বাচানো, সে তুমি নিশ্চিত জানো।” আমি শুধালেম “তার মানে ?” সে কহিল, “আমরা পুষি না মোহ প্রাণে, কেবল বিশুদ্ধ ভালোবাসি।” কহিলাম হাসি’ “আমি যাহা বলেছিমু সে কথাটা মস্ত বড়ো বটে কিন্তু তবু লাগে না সে তোমার এ স্পধর্ণর নিকটে। মোহ কি কিছুই নেই রমণীর প্রেমে।” সে কহিল একটুকু থেমে— “নেই বলিলেই হয় এ কথা নিশ্চিত ।
(?? জোর করে বলিবই
আমরা কাঙাল কভু নই।”
আমি কহিলাম,”ভদ্রে, তাহলে তো পুরুষের জিত।”
“কেন শুনি”
মাথাটা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলিল তরুণী।
আমি কহিলাম, “যদি প্রেম হয় অমৃত কলস,
মোহ তবে রসনার রস।
সে সুধার পূর্ণ স্বাদ থেকে
মোহহীন রমণীরে প্রবঞ্চিত বলো করেছে কে।
আনন্দিত হই দেখে তোমার লাবণ্যভরা কায়া,
তাহার তো বারো আনা আমারি অন্তরবাসী মায়া।
প্রেম আর মোহে
একেবারে বিরুদ্ধ কি দোঁহে?
আকাশের আলো
বিপরীতে ভাগ করা সে কি সাদা কালো।
ঐ আলো আপনার পূর্ণতারে চূর্ণ করে
দিকে দিগন্তরে,
বর্ণে বর্ণে
তৃণে শস্যে পুষ্পে পর্ণে,
পাখির পাখায় আর আকাশের নীলে,
চোখ ভোলাবার মোহ মেলে দেয় সর্বত্র নিখিলে।
অভাব যেখানে এই মন ভোলাবার
সেইখানে সৃষ্টিকর্তা বিধাতার হার।
এমন লজ্জার কথা বলিতেও নাই তোমরা ভোলো না শুধু ভুলি আমরাই। - এই কথা স্পষ্ট দিলু কয়ে স্বষ্টি কভু নাহি ঘটে একেবারে বিশুদ্ধেরে লয়ে। পূর্ণতা আপন কেন্দ্রে স্তব্ধ হয়ে থাকে কারেও কোথাও নাহি ডাকে। অপূর্ণের সাথে দ্বন্দ্বে চাঞ্চল্যের শক্তি দেয় তারে, রসে রূপে বিচিত্র আকারে । এরে নাম দিয়ে মোহ যে করে বিদ্রোহ— এড়ায়ে নদীর টান সে চাহে নদীরে, পড়ে থাকে তীরে । পুরুষ যে ভাবের বিলাসী মোহতরী বেয়ে তাই সুধাসাগরের প্রান্তে আসি’ আভাসে দেখিতে পায় পরপারে অরূপের মায়া, অসীমের ছায়া । অমৃতের পাত্র তার ভরে ওঠে কানায় কানায় স্বল্প জানা ভূরি অজানায়।” কোনো কথা নাহি ব’লে সুন্দর ফিরায়ে মুখ দ্রুত গেল চলে। পরদিন বটের পাতায় গুটিকত সঙ্কফোটা বেলফুল রেখে গেল পায়। や〉 আকাশ-প্রদীপ বলে গেল “ক্ষমা করাে, অবুঝের মত মিছেমিছি বকেছি কত।” ঢেলা আমি মেরেছিনু চৈত্রে ফোটা কাঞ্চনের ডালে, তারি প্রতিবাদে ফুল ঝরিল এ স্পর্ধিত কপালে। নিয়ে এই বিবাদের দান এ বসন্তে চৈত্র মাের হােলাে অবসান।