আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ)/ধর্ম্মশীলতার পুরস্কার
ধর্ম্মশীলতার পুরস্কার
কণ্টাই রাজকুমার, ১৭৩৪ খৃষ্টাব্দে, ফিলিপস্বর্গ অবরুদ্ধ করিয়াছিলেন, ঐ সময়ে, এক সৈনিক-পুরুষ নিরতিশয় সাহস ও পরাক্রম প্রদর্শিত করাতে, রাজকুমাব, সাতিশয় প্রীত হইয়া, একটি স্বর্ণমুদ্রার থলি বহিষ্কৃত করিয়া, তাহার হস্তে দিলেন, এবং বলিলেন, তুমি যেরূপ ক্ষমতাপ্রকাশ করিয়াছ, ইহা, কোনও অংশে তাহার যথোপযুক্ত পুরস্কার নহে। সৈনিক-পুরুষ, পুরস্কাব প্রাপ্ত হইয়া, সাতিশয় আহ্লাদিত হইল, এবং যথোচিত বিনয় ও ভক্তিযোগ সহকারে, নমস্কার করিয়া, চলিযা গেল।
পরদিন, প্রাতঃকালে, ঐ সৈনিক-পুরুষ, দুইটি হীরকমণ্ডিত অঙ্গুরীয ও কতিপয় মহামূল্য রত্ন হস্তে করিয়া, রাজকুমারের নিকটে উপস্থিত হইল; এবং নিবেদন করিল, মহাশয়, থলির মধ্যে যে সমস্ত স্বর্ণমুদ্রা ছিল, সেই গুলি, আমায় দেওয়াই আপনার অভিপ্রেত। কিন্তু, সেই থলির মধ্যে এই গুলিও ছিল, এ গুলি আমায় দেওয়া আপনার অভিপ্রেত ছিল, আমার এরূপ বোধ হইতেছে না; সুতরাং এ গুলিতে আমার অধিকার নাই। এজন্য, আমি এ গুলি আপনাকে ফিরিয়া দিতে আসিয়াছি। এই বলিয়া, সেই হীরকমণ্ডিত অঙ্গুরীয় প্রভৃতি রাজকুমারের সম্মুখে রাখিয়া দিল।
রাজকুমার, সেই সৈনিক-পুরুষের অসাধারণ সাহস ও পরাক্রম দর্শনে, যত প্রীত ও প্রসন্ন হইযাছিলেন, এক্ষণে, তাহার অসাধারণ ধর্ম্মশীলতা দর্শনে, তদপেক্ষা অনেক অধিক প্রীত ও প্রসন্ন হইলেন, এবং প্রীতিপ্রফুল্ল লোচনে বলিলেন, কল্য তোমার সাহস ও পরাক্রমের যৎকিঞ্চিৎ পুরস্কারস্বরূপ, স্বর্ণমুদ্রা গুলি দিয়াছিলাম, অদ্য, তোমার ধর্ম্মশীলতার যৎকিঞ্চিৎ পুরস্কারস্বরূপ, এই দিলাম, তুমি লইয়া যাও। ইহা বলিয়া, তিনি তাহাকে বিদায় করিলেন। সৈনিক-পুরুষ, রাজকুমারেব এতাদৃশ বদান্যতা ও উদারচিত্ততা দর্শনে, যৎপরোনাস্তি প্রীত ও চমৎকৃত হইয়া, ভক্তিপূর্ব্বক প্রণাম করিয়া, প্রস্থান করিল।