আত্মশক্তি/নেশন কি?
নেশন কি?
“নেশন ব্যাপারটা কি—” সুপ্রসিদ্ধ ফরাসী ভাবুক রেনাঁ এই প্রশ্নের আলোচনা করিয়াছেন। কিন্তু এ সম্বন্ধে তাহার মত ব্যাখ্যা করিতে হইলে, প্রথমে দুই একটা শব্দার্থ স্থির করিয়া লইতে হইবে।
স্বীকার করিতে হইবে, বাঙলায় ‘নেশন’-কথার প্রতিশব্দ নাই। চলিতভাষায় সাধারণতঃ জাতি বলিতে বর্ণ বুঝায়; এবং জাতি বলিতে ইংরাজিতে যাহাকে race বলে, তাহাও বুঝাইয়া থাকে। আমরা ‘জাতি’-শব্দ ইংরাজি ‘রেস’-শব্দের প্রতিশব্দরূপেই ব্যবহার করিব, এবং নেশনকে নেশনেই বলিব। নেশন ও ন্যাশনাল শব্দ বাঙলায় চলিয়া গেলে অনেক অর্থদ্বৈদ-ভাববৈধের হাত এড়ান যায়।
‘ন্যাশনাল কগ্রেস’ শব্দের তর্জমা করিতে আমরা ‘জাতীয় মহাসভা’ ব্যবহার করিয়া থাকি—কিন্তু জাতীয় বলিলে বাঙালী-জাতীয়, মারাঠী-জাতীয়, শিখজাতীয়, যে কোন জাতীয় বুঝাইতে পারে—ভারতবর্ষের সর্বজাতীয় বুঝায় না। মান্দ্রাজ ও বম্বাই, ‘ন্যাশনাল’শব্দের অনুবাদচেষ্টায় জাতিশব্দ ব্যবহার করেন নাই। তাঁহারা স্থানীয় ন্যাশনাল সভাকে মহাজনসভা ও সার্বজনিকসভা নাম দিয়াছেন— বাঙালী কোন প্রকার চেষ্টা না করিয়া ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ নাম দিয়া নিষ্কৃতিলাভ করিয়াছে। ইহাতে মারাঠী প্রভৃতি জাতির সহিত বাঙালীর যেন একটা প্রভেদ লক্ষিত হয়—সেই প্রভেদে বাঙালীর আন্তরিক ন্যাশনালত্বের দুর্ব্বলতাই প্রমাণ করে।
‘মহাজন’ শব্দ বাঙলায় একমাত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়, অন্য অর্থে চলিবে না। ‘সার্ব্বজনিক’ শব্দকে বিশেষ্য আকারে নেশন্ শব্দের প্রতিশব্দ করা যায় না। ‘ফরাসী সর্ব্বজন’ শব্দ ‘ফরাসী নেশন্’ শব্দের পরিবর্তে সঙ্গত শুনিতে হয় না।
‘মহাজন’ শব্দ ত্যাগ করিয়া ‘মহাজাতি’ শব্দ গ্রহণ করা যাইতে পারে। কিন্তু ‘মহৎ’শব্দ মহত্ত্বসূচক বিশেষরূপে অনেকস্থলেই নেশনশব্দের পূর্ব্বে আবশ্যক হইতে পারে। সেরূপ স্থলে ‘গ্রেট নেশন্’ বলিতে গেলে ‘মহতী মহাজাতি’ বলিতে হয় এবং তাহার বিপরীত বুঝাইবার প্রয়োজন হইলে ‘ক্ষুদ্র মহাজাতি’ বলিয়া হাস্যভাজন হইবার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু নেশন্-শব্দটা অবিকৃত আকারে গ্রহণ করিতে আমি কিছু মাত্র সঙ্কোচ বোধ করি না। ভাবটা আমরা ইংরাজের কাছ হইতে পাইয়াছি, ভাষাটাও ইংরাজি রাখিয়া ঋণ স্বীকার করিতে প্রস্তুত আছি। উপনিষদের ব্রহ্ম, শঙ্করের মায়া ও বুদ্ধের নির্ব্বাণ শব্দ ইংরাজি রচনায় প্রায় ভাষান্তরিত হয় না, এবং না হওয়াই উচিত।
রেনাঁ বলেন, প্রাচীনকালে ‘নেশন্’ ছিল না। ইজিপ্ট, চীন, প্রাচীন কাল্ডিয়া, ‘নেশন্’ জানিত না। আসিরিয়, পারসিক ও আলেক্জাণ্ডারের সাম্রাজ্যকে কোন নেশনের সাম্রাজ্য বলা যায় না।
রোমসাম্রাজ্য নেশনের কাছাকাছি গিয়াছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ নেশন্ বাঁধিতে না বাঁধিতে বর্ব্বরজাতির অভিঘাতে তাহা ভাঙিয়া টুকরা হইয়া গেল। এই সকল টুকরা বহুশতাব্দী ধরিয়া নানাপ্রকার সংঘাতে ক্রমে দানা বাঁধিয়া নেশন্ হইয়া দাঁড়াইয়াছে, এবং ফ্রান্স,, ইংলণ্ড, জর্ম্মাণি ও রাশিয়া সকল নেশনের শীর্ষস্থানে মাথা তুলিয়াছে।
কিন্তু ইহারা নেশন্ কেন? সুইজর্লাণ্ড্ তাহার বিবিধ জাতি ও ভাষাকে লইয়া কেন নেশন্ হইল, অষ্ট্রীয়া কেন কেবলমাত্র রাজ্য হইল, ‘নেশন্’ হইল না?
কোন কোন রাষ্ট্রতত্ত্ববিদ বলেন, নেশনের মূল রাজা। কোন বিজয়ী বীর প্রাচীনকালে লড়াই করিয়া দেশ জয় করেন, এবং, দেশের লোক কালক্রমে তাহা ভুলিয়া যায়; সেই রাজবংশ কেন্দ্ররূপী হইয়া নেশন্ পাকাইয়া তোলে। ইংলণ্ড, স্কট্লণ্ড্, আয়র্লণ্ড্, পূর্ব্বে এক ছিল না, তাহাদের এক হইবার কারণও ছিল না, রাজার প্রতাপে ক্রমে তাহারা এক হইয়া আসিয়াছে। নেশন্ হইতে ইটালির এত বিলম্ব করিবার কারণ এই যে, তাহার বিস্তর ছোট ছোট রাজার মধ্যে কেহ একজন মধ্যবর্ত্তী হইয়া সমস্ত দেশে ঐক্যবিস্তার করিতে পারেন নাই।
কিন্তু এ নিয়ম সকল জায়গায় খাটে নাই। যে সুইজর্লাণ্ড্ ও আমেরিকার য়ুনাইটেড্ ষ্টেট্স্ ক্রমে ক্রমে সংযোগ সাধন করিতে করিতে বড় হইয়া উঠিয়াছে, তাহারা ত রাজবংশের সাহায্য পায় নাই।
রাজশক্তি নাই নেশন্ আছে, রাজশক্তি ধ্বংশ হইয়া গেছে নেশন্ টিকিয়া আছে, এ দৃষ্টান্ত কাহারো অগোচর নাই। রাজার অধিকার সকল অধিকারের উচ্চে, এ কথা এখন আর প্রচলিত নহে; এখন স্থির হইয়াছে, ন্যাশনাল অধিকার রাজকীয় অধিকারের উপরে। এই ন্যাশনাল্ অধিকারের ভিত্তি কি, কোন্ লক্ষণের দ্বারা তাহাকে চেনা যাইবে?
অনেকে বলেন, জাতির অর্থাৎ raceএর ঐক্যই তাহার লক্ষণ। রাজা, উপরাজ ও রাষ্ট্রসভা কৃত্রিম এবং অধ্রুব,—জাতি চিরদিন থাকিয়া যায়, তাহারই অধিকার খাঁটি।
কিন্তু জাতিমিশ্রণ হয় নাই য়ুরোপে এমন দেশ নাই। ইংলও, ফ্রান্স,, জর্ম্মাণি, ইটালি, কোথাও বিশুদ্ধ জাতি খুঁজিয়া পাওয়া যায় না, এ কথা সকলেই জানেন। কে টিউটন্, কে কেল্ট্, এখন তাহার মীমাংসা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রনীতিতন্ত্রে জাতিবিশুদ্ধির কোন খোঁজ রাখে না। রাষ্ট্রতন্ত্রের বিধানে যে জাতি এক ছিল, তাহারা ভিন্ন হইয়াছে, যাহারা ভিন্ন ছিল, তাহারা এক হইয়াছে।
ভাষাসম্বন্ধেও ঐ কথা খাটে। ভাষার ঐক্যে ন্যাশনাল্ ঐক্যবন্ধনের সহায়তা করে, সন্দেহ নাই; কিন্তু তাহাতে এক করিবেই, এমন কোন জবরদস্তি নাই। য়ুনাইটেড্ ষ্টেট্স্ ও ইংলণ্ডের ভাষা এক, স্পেন্ ও স্পানীয় আমেরিকার ভাষা এক, কিন্তু তাহারা এক নেশন্ নহে। অপর পক্ষে সুইজর্ল্যাণ্ডের তিনটা চারিটা ভাষা আছে, তবু সেখানে এক নেশন্। ভাষা অপেক্ষা মানুষের ইচ্ছাশক্তি বড়;—ভাষাবৈচিত্রসত্ত্বেও সমস্ত সুইজর্ল্যাণ্ডের ইচ্ছাশক্তি তাহাকে এক করিয়াছে।
তাহা ছাড়া, ভাষায় জাতির পরিচয় পাওয়া যায়, এ কথাও ঠিক নয়। প্রসিয়া আজ জর্ম্মণ বলে, কয়েক শতাব্দী পূর্ব্বে স্লাভোনিক্ বলিত, ওয়েল্স্ ইংরাজি ব্যবহার করে, ইজিপ্ট আরবী ভাষায় কথা কহিয়া থাকে।
নেশন্ ধর্ম্মমতের ঐক্যও মানে না। ব্যক্তিবিশেষ ক্যাথলিক্, প্রটেষ্টাণ্ট্ য়িহুদী অথবা নাস্তিক, যাহাই হউক না কেন, তাহার ইংরাজ, ফরাসী বা জর্ম্মণ হইবার কোন বাধা নাই।
বৈষয়িক স্বার্থের বন্ধন দৃঢ়বদ্ধন, সন্দেহ নাই। কিন্তু রেনাঁর মতে সে বন্ধন নেশন্ বাঁধিবার পক্ষে যথেষ্ট নহে। বৈষয়িক স্বার্থে মহাজনের পঞ্চায়েৎ-মণ্ডলী গড়িয়া তুলিতে পারে বটে; কিন্তু ন্যাশনালত্বের মধ্যে একটা ভাবের স্থান আছে—তাহার যেমন দেহ আছে, তেমনি অন্তঃকরণেরও অভাব নাই। মহাজনপটিকে ঠিক মাতৃভূমি কেহ মনে করে না।
ভৌগোলিক অর্থাৎ প্রাকৃতিক সীমাবিভাগ নেশনের ভিন্নতাসাধনের একটা প্রধান হেতু, সে কথা স্বীকার করিতেই হইবে। নদীস্রোতে জাতিকে, বহন করিয়া লইয়া গেছে, পর্ব্বতে তাহাকে বাধা দিয়াছে। কিন্তু তাই বলিয়া কি কেহ ম্যাপে আঁকিয়া দেখাইয়া দিতে পারে, ঠিক কোন্ পর্য্যন্ত কোন্ নেশনের অধিকার নির্দ্দিষ্ট হওয়া উচিত। মানবের ইতিহাসে প্রাকৃতিক সীমাই চূড়ান্ত নহে। ভূখণ্ডে, জাতিতে, ভাষায়, নেশন্ গঠন করে না। ভূখণ্ডের উপর যুদ্ধক্ষেত্র ও কর্ম্মক্ষেত্রের পত্তন হইতে পারে, কিন্তু নেশনের অন্তঃকরণটুকু ভূখণ্ডে গড়ে না। জনসম্প্রদায় বলিতে যে পবিত্র পদার্থকে বুঝি, মনুষ্যই তাহার শ্রেষ্ঠ উপকরণ। সুগভীর-ঐতিহাসিক-মহনজাত ‘নেশন্’ একটি মানসিক পদার্থ, তাহা একটি মানসিক পরিবার, তাহা ভূখণ্ডের আকৃতির দ্বারা আবদ্ধ নহে।
দেখা গেল, জাতি, ভাষা, বৈষয়িক স্বার্থ, ধর্ম্মের ঐক্য ও ভৌগলিক সংস্থান, নেশন-নামক মানসপদার্থ সৃজনের মূল উপাদান নহে। তবে তাহার মূল উপাদান কি?
নেশন একটি সজীব-সত্তা, একটি মানস পদার্থ। দুইটি জিনিষ এই পদার্থের অন্তঃপ্রকৃতি গঠিত করিয়াছে। সেই দুটি জিনিষ বস্তুত একই। তাহার মধ্যে একটি অতীতে অবস্থিতি, আর একটি বর্ত্তমানে। একটি হইতেছে—সর্ব্বসাধারণের প্রাচীন স্মৃতিসম্পদ্; আর একটি, পরস্পর সম্মতি, একত্রে বাস করিবার ইচ্ছা,—যে অথণ্ড উত্তরাধিকার হস্তগত হইয়াছে, তাহাকে উপযুক্ত ভাবে রক্ষা করিবার ইচ্ছা। মানুষ উপস্থিতমত নিজেকে হাতে হাতে তৈরি করে না। নেশনও সেইরূপ সুদীর্ঘ অতীতকালের প্রয়াস, ত্যাগস্বীকার এবং নিষ্ঠা হইতে অভিব্যক্ত হইতে থাকে। আমরা অনেকটা পরিমাণে আমাদের পূর্ব্বপুরুষের দ্বারা পূর্ব্বেই গঠিত হইয়া আছি। অতীতের বীর্য্য, মহত্ত্ব, কীর্ত্তি, ইহার উপরেই ন্যাশন্যাল্ ভাবের মূলপত্তন। অতীতকালে সর্ব্বসাধারণের এক গৌরব, এবং বর্তমানকালে সর্ব্বসাধারণের এক ইচ্ছা; পূর্ব্বে একত্রে বড় কাজ করা, এবং পুনরায় একত্রে সেইরূপ কাজ করিবার সঙ্কল্প; ইহাই জনসম্প্রদায়গঠনের ঐকান্তিক মূল। আমরা যে পরিমাণে ত্যাগস্বীকার করিতে সম্মত হইয়াছি এবং যে পরিমাণে কষ্ট সহ্য করিয়াছি, আমাদের ভালবাসা সেই পরিমাণে প্রবল হইবে। আমরা যে বাড়ী নিজেরা গড়িয়া তুলিয়াছি এবং উত্তরবংশীয়দের হস্তে সমর্পণ করিব, সে বাড়ীকে আমরা ভালবাসি। প্রাচীন স্পার্টার গানে আছে—“তোমরা যাহা ছিলে, আমরা তাহাই; তোমরা যাহা, আমরা তাহাই হইব।”—এই অতি সরল কথাটি সর্ব্বদেশের ন্যাশ্যাল্-গাথাস্বরূপ।
অতীতের গৌরবময়-স্মৃতি ও সেই স্মৃতির অনুরূপ ভবিষ্যতের আদর্শ; একত্রে দুঃখ পাওয়া, আনন্দ করা, আশা করা; এইগুলিই আসল জিনিষ, জাতি ও ভাষার বৈচিত্র্যসত্ত্বেও এগুলির মাহাত্ম্য বোঝা যায়—একত্রে মাগুলখানা স্থাপন বা সীমান্তনির্ণয়ের অপেক্ষা ইহার মূল্য অনেক বেশি। একত্রে দুঃখ পাওয়ার কথা এইজন্য বলা হইয়াছে যে, আনন্দের চেয়ে দুঃথের বন্ধন দৃঢ়তর।
অতীতে সকলে মিলিয়া ত্যাগদুঃখ-স্বীকার এবং পুনর্ব্বার সেইজন্য সকলে মিলিয়া প্রস্তুত থাকিবার ভাব হইতে জনসাধারণকে যে একটি একীভূত নিবিড় অভিব্যক্তি দান করে, তাহাই নেশন্। ইহার পশ্চাতে একটি অতীত আছে বটে, কিন্তু তাহার প্রত্যক্ষগম্য লক্ষণটি বর্তমানে পাওয়া যায়। তাহা আর কিছু নহে—সাধারণ সম্মতি,—সকলে মিলিয়া একত্রে একজীবন বহন করিবার সুস্পষ্টপরিব্যক্ত ইচ্ছা।
রেনাঁ বলিতেছেন, আমরা রাষ্ট্রতন্ত্র হইতে রাজার অধিকার ও ধর্ম্মের আধিপত্য নির্ব্বাসিত করিয়াছি, এখন বাকি কি রহিল? মানুষ, মানুষের ইচ্ছা, মানুষের প্রয়োজনসকল। অনেকে বলিবেন, ইচ্ছা-জিনিষটা পরিবর্তনশীল, অনেক সময় তাহা অনিয়ন্ত্রিত, অশিক্ষিত,— তাহার হস্তে নেশনের ন্যাশনালিটির মত প্রাচীন মহৎসম্পদ রক্ষার ভার দিলে, ক্রমে যে সমস্ত বিশ্লিষ্ট হইয়া নষ্ট হইয়া যাইবে।
মানুষের ইচ্ছার পরিবর্তন আছে—কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু আছে, যাহার পরিবর্ত্তন নাই? নেশনরা অমর নহে। তাহাদের আদি ছিল, তাহাদের অন্তও ঘটিবে। হয় ত এই নেশন্দের পরিবর্ত্তে কালে এক য়ুরোপীয় সম্প্রদায় সংঘটিত হইতেও পারে। কিন্তু এখনো তাহার লক্ষণ দেখি না। এখনকার পক্ষে এই নেশন্সকলের ভিন্নতাই ভাল, তাহাই আবশ্যক। তাহারাই সকলের স্বাধীনতা রক্ষা করিতেছে—এক আইন, এক প্রভু হইলে, স্বাধীনতার পক্ষে সঙ্কট।
বৈচিত্র এবং অনেকসময় বিরোধিপ্রবৃত্তি দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন নেশন্ সভ্যতাবিস্তারকার্য্যে সহায়তা করিতেছে। মনুষ্যত্বের মহাসঙ্গীতে প্রত্যেকে এক একটি সুর যোগ করিয়া দিতেছে, সবটা একত্রে মিলিয়া বাস্তবলোকে যে একটি কল্পনাগম্য মহিমার সৃষ্টি করিতেছে, তাহা কাহারও একক চেষ্টার অতীত।
যাহাই হউক, রেনাঁ বলেন, মানুষ, জাতির, ভাষার, ধর্ম্মমতের বা নদীপর্ব্বতের দাস নহে। অনেকগুলি সংযতমনা ও ভাবোত্তপ্তহৃদয় মনুষ্যের মহাসঙ্ঘ যে একটি সচেতন চারিত্র সৃজন করে, তাহাই নেশন্। সাধারণের মঙ্গলের জন্য ব্যক্তিবিশেষের ত্যাগস্বীকারের দ্বারা এই চারিত্র-চিত্র যতক্ষণ নিজের বল সপ্রমাণ করে, ততক্ষণ তাহাকে সাঁচ্চা বলিয়া জানা যায় এবং ততক্ষণ তাহার টিকিয়া থাকিবার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
রেনাঁর উক্তি শেষ করিলাম। এক্ষণে রেনাঁর সারগর্ভ বাক্যগুলি আমাদের দেশের প্রতি প্রয়োগ করিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত হওয়া যাক্।