আনন্দ-তুফান/বলিদান
না মিলে রসাল ফল যথা,
কাটে যদি তরু-মূল,
না হইতে কুসুম-মঞ্জরী তা’র;
রোপকের ব্যর্থ মনোরথ;
নাহি হয় ইষ্ট-উপহার।
সেইরূপ আমি গো জননি!
‘বড় সাধে’ রোপেছিনু ‘বিশ্বাস’-বিটপী;
‘প্রেম’ফল লভিতে সময়ে।—
কিন্তু, কে জানে ‘সংশয়’-কীট পশিয়া কেমনে,
কেটেছে সে বিশ্বাসের মূল। ‘পাপ’-বায়ু,
ধরাশায়ী তা’রে করিয়াছে প্রচণ্ড বহিয়া।
আহা! ‘কুচিন্তার’ তাপে শুষ্ক হেরি’ তরুবরে,
শক্রদলে বাঁধিয়াছে বাসা;
ভেঙ্গেছে মা! ‘সাধের’ দুরাশা[১];
উপহার না পারিনু দিতে,—
পূজা মোর হ’ল না পার্ব্বতি!
কিন্তু কত কাল রহিবে মা শত্রুদল—
শুষ্ক এই বিশ্বাসের শাখে?
শঙ্কা বড় হয় সদা মনে।
তাই শিবে! মাগি তোর কাছে,
“শক্তি দে মা! নাশি শক্রদলে।”
আহা! বড়ই সুযোগ আজি পেয়েছি তাহার!
শুন তবে, কাছে এস, কহি মা তোমায়!–
“বিনা উপচারে, পারি নাই পূজিতে তোমারে,—
শক্রদলে করি’ ‘বলি-দান’,
সাধ বড় হইয়াছে চিতে,
এবে তুষিব তোমারে, সুরেশ্বরি।–
আদ্যা শক্তি! শক্তি দে মা, শক্তিহীনে
এ ঘোর সংগ্রামে;[২]
চাহি না মা, অন্য কিছু,
পূর্ণ কর দাসের বাসনা।
আয় ভাই ‘কাম’ ‘ক্রোধ’! আয় রে সকলে,
অশ্রু-জলে কর্ সুখে স্নান!
রক্ত বস্ত্র হ’রে ‘পাপ’ তুই!
পরা’রে ‘বিশ্বাস’ ভাই, শক্ররে বসন;—
পরা’রে প্রেমের ফুল-মালা।
খড়গ তুমি হও হে ‘বিবেক’!
যূপকাষ্ঠ হও ‘নিষ্ঠা’ সখি,—
কষ্ট কিছু না হ’বে তোমার।
‘প্রাণ’ ভাই! অবিরাম কর ‘দুর্গা’-নাম;
খড়গধর হ’ব ‘আমি’ নিজে,—
স্বহস্তে করিব বলি-দান।
দিব মা’কে উত্তপ্ত রুধির,
হৃদয়ের পাত্রে ধরি’
জ্ঞান-বহ্নি জ্বালিব স্ব-বলে;
আশা-ঘৃতে দিব রে আহুতি।–
রাঁধিব স্ব-করে শেষে ভোগ,
দিব গো তোমারে তা’ জননি!
ভুঞ্জিব প্রসাদ শেষে মা তোমার! বড় সাধ,—
ভুলিতে মা, ভোগের যাতনা ভব-ধামে;–
পূরিবে না সাধ কি মা শিবে?