ইস্তাহার/নিরুপায়
তোমরা নিশ্চয়ই খবরটা শুনেছ!
কাল রাতে যদু তার বো আর ছেলেকে খুন করে,
তারপর নিজে আত্মহত্যা করেছে।
খবরটা কাগজেও বেরিয়েছে।
পুলিশের ছুটোছুটি,
লাসকাটা ঘরে পরীক্ষণ নিরীক্ষা,
প্রতিবেশীদের হয়রানি,
পাড়াময় উত্তেজনা জল্পনা কল্পনা আতঙ্ক।
কিন্তু যদু কোনদিনই রেশনের পুরো দাম সংগ্রহ করতে পারে নি,
সে কখনও দিতে পারেনি তার বৌ ছেলেকে
অন্ন বস্তু, রোগে ওষুধপথ্য।
বেচারা যদু বড়ই নিরুপায়!
কাল রাতে আকাশে ঘন কালো মেঘের জটলা,
বিষাক্ত ষড়যন্ত্রের সর্বনাশা মন্ত্রে বাতাসের ফিসফিসানি,
ছেলেটা জ্বরে বেহুঁস,
বৌটা ক্ষিধের জ্বালায় কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়েছে;
সারাটা দিন ভিখারীর মতো পথে পথে ঘুরে
সামান্য পয়সাও পায় নি। কেউ দেয় না।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি এল উপহাসের মতোই।
যদুর ছেঁড়া গেঞ্জীর পিঠ ভিজল।
ক্লান্ত। কপালের ঘাম করছে চোখের কোণে।
কান্না নয়। অশ্র অতীতকালে নিঃশেষিত।
কেরোসিনের অভাবে লণ্ঠন জ্বলে নি।
ঘরখানা অন্ধকারে খাঁ খাঁ করছে
নিঃশব্দ শয়তানির ছলনায়। মায়া মরীচিকা।
অগত্যা যদু নিদারুণ হতাশায় মেঝেয় বসে পড়েছে।
ছুরিখানা হাতের কাছে কোথা থেকে এল?
শানিত ছুরির ফলাকা চোখের দৃষ্টির মতো কঠিন।
ঘরের কানাচে তাল গাছের মাথায় বাড়ের দাপট,
বৃষ্টির ঝাঁক মুহুর্মুহু বর্শার মতো ছুটে আসে,
ঘরের চালের ফুটো থেকে কয়েক ফোঁটা ময়লা জল
যদুর কানের পাশে পড়ল। বিরক্তি
ঘুম। এবার শান্তির ঘুম আসুক।
বাপ বাপ দুটো কোপ। রক্তের নদী।
তারপর পরনের কাপড়ের টুকরোটা পাকিয়ে
চালের বাতায় বেঁধে, সে নিজে ঝুলে পড়ল।
সমাপ্তি।
বড় এবার থামবে।
বৃষ্টিও নিশ্চয়ই থামবে!