উড়িয়া স্বতন্ত্র ভাষা নহে/প্রথম অধ্যায়


উড়িয়া স্বতন্ত্র ভাষা নহে।
ভারতের অধুনা প্রচলিত ভাষা-সমূহের আদি নিরূপণ।

 ভাষাতত্ত্ববিদ্‌ পণ্ডিতেরা বলেন ইয়ুরোপ ও আসিয়ায় যে সমস্ত ভাষা অধুনা প্রচলিত দেখা যায়, সে সকল প্রধানতঃ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা হিন্দু-জর্ম্মণীয় বা আর্য্য, সামীয় ও তুরাণীয়। হিন্দু-জর্ম্মণীয় আবার আট বিশেষ শ্রেণীতে বিভক্ত; যথা সংস্কৃত, ইরাণীয়, সেল্টীয়, ইটালীয়, টিয়ুটোনীয়, স্লাবোনীয়, হেলেনীয় ও ইল্লিরীয়। কিন্তু ভারতবর্ষে এই আট ভাষার মধ্যে সংস্কৃত ও ইরাণীয় এই দুই ভাষাই অধুনা প্রচলিত ও লোককথিত সকল ভাষার মূল। তাঁহারা কহেন সংস্কৃত ভাষা হইতে আবার দশ অপভাষার[] আবির্ভাব দেখা যায়; যথা হিন্দী, বাঙ্গালা, সিন্ধী, মহারাষ্ট্রী, গুজরাটী, নেপালী, উড়িয়া, কাশ্মীরী, আসামী ও দঘ্রা।

 অতি প্রাচীন বেদ-ভাষাই সংস্কৃত ভাষা। প্রাকৃতিক ভাষা ও বৌদ্ধভাষা পালী, সংস্কৃত হইতে সমুৎপন্ন বা সংস্কৃতের এক অংশ। জেন্দ, ইরাণীয় ভাষার মূল ও সংস্কৃত সদৃশ। এই সকলের বিশেষ কথন এ স্থলে অনাবশ্যক ও বহুবিস্তৃতি দোষ মূলক হইবে এই হেতু তৎ সমুদায় পরিত্যক্ত হইল।

 এক্ষণে এই বিস্তৃত ভারতবর্ষে যে সকল ভাষা প্রচলিত আছে তৎসমুদায় এতাদৃশ কাণ্ড ও শাখায় পরিবর্দ্ধিত হইয়া আসিয়াছে যে, তাহাদিগকে ইহার প্রদেশ-বিভাগ অনুসারে প্রকৃতরূপে বিভাগীয় সীসার মধ্যে বিভক্ত করা বড় কঠিন। পূর্ব্বে কথিত হইল, সংস্কৃত ভাষা হইতে হিন্দী বাঙ্গালা প্রভৃতি দশ ভাষা সমুৎপন্ন হইয়াছে। হিন্দী ভাষাও মৈথিলী, মাগধী, ভোজপুরী, পাঞ্জাবী প্রভৃতি আট ভাষায় বিভক্ত দেখা যায়, ঐ পাঞ্জাবী আবার পঞ্জাবের নানা প্রদেশে নানা শাখায় বিভক্ত আছে। যাহা বাঙ্গালা নামে অভিহিত হইল, তাহার বিশুদ্ধ ভাব কলিকাতার সমীপবর্ত্তী স্থানে উপলব্ধ হয়। কলিকাতা হইতে যে প্রদেশ যতই দূরবর্ত্তী তাহাতে ততই উহার বৈপরীত্য ভাব দেখা যায়। যাহা হউক, এক্ষণে দেখা যাউক কি কি কারণে এক এল মূল ভাষার এরূপ প্রভেদ হয়।

  1. কেহ কেহ সংস্কৃত ভাষা হইতে একাদশ অপভাষার আবির্ভার করিয়া পাঞ্জাবীকেও তাহার অন্তর্নিবিষ্ট করেন। ফলে পাঞ্জাবী হিন্দীরই অবাস্তনিক ভেদ মাত্র।