উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/বেলুন : ২

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

বেলুন

 বাতাসের চাইতে হালকা জিনিস ভিতরে পুরিয়া দেওয়াতেই বেলুন উপরে উঠে, এই কথা তোমরা পূর্বেই শিখিয়াছ। এখন তোমাদিগকে আরো কতগুলি কথা বলিব।

 মনে কর অনেক দূর উঠিয়া বেলুন আর উঠিতে চাহিতেছে না। তখন যদি তোমার আরো উঠিতে ইচ্ছা হয়, তাহা হইলে কি করিবে? তাহার সংকেত বলি, শুন। বেলুনে চড়িবার পূর্বে কয়েক বস্তা বালি বেলুনে তুলিয়া দিতে হয়। বেলুন যখন আর উঠে না, তখন

এর একটি বস্তা খুলিয়া কিঞ্চিৎ বালি ফেলিয়া দিতে হয়। তাহা হইলেই বেলুন একটু হালকা হইল, এখন আর কিছু নিরাপদে উঠিবে। এইরূপে যখন বালির বস্তা ফুরাইয়া যাইবে, তখন তোমার নামিয়া আসার জোগাড় দেখাই ভালো। অনেক সময় কোনো সমুদ্রের উপর আসিয়া বেলুন পড়িয়া যাইবার জোগাড় করে। সমুদ্রে পড়িলে কি হয়, তা তো জানই; সুতরাং তখন বাধ্য হইয়া উপরের লিখিত উপায় অবলম্বন করিতে হয়। কখন কখন আবার ইহাতেও কুলায় না, তখন একটি দুইটি করিয়া সঙ্গের জিনিসপত্র পর্যন্ত ফেলিয়া দিতে হয়। তাহাতেও যদি না কুলাইল তবেই বিপদ।

 আচ্ছা, মনে কর এমন হইল যে বেলুন এত উপরে উঠিয়াছে যে তুমি তাহাতে সুবিধা মনে কর না; তখন যদি আর উঠিতে ইচ্ছা না হয়, কিম্বা যদি নামিয়া আসিতে ইচ্ছা হয়; তখন কি করিবে? তখনকার জন্য দুই প্রকারের ব্যবস্থা আছে। প্রথম—বেলুনের গায়ে একটি ছিদ্র করিয়া দিতে পারিলেই ভিতরের হালকা জিনিসটা বাহির হইয়া যাইবে, তখন বেলুনটিকে বাধ্য হইয়া নামিতে হইবে। অনেক সময় বেলুনটিকে উপরে রাখিয়াই নিজে নামিবার জোগাড় করিতে হয়। তাহার জন্য দ্বিতীয় উপায়টি উত্তম।

 দ্বিতীয় উপায়—কাপড়ের একটা মস্ত ছাতা কর। ছাতাটা শুধু কাপড়ের হইবে, তাহাতে শিক বাঁট দিতে হইবে না। ছাতার মাঝখানটায় একটা গোল ছিদ্র রাখ—ছিদ্রটা যেন খুব বড় হয়। তারপর ছাতার চারিধারে লম্বা দড়ি বাঁধিয়া সমস্তগুলি দড়ির মাথা একত্র করিয়া বাঁধ। যেখানে দড়ির মাথাগুলি বাঁধিয়াছ, সুবিধা হইলে সেখানে বসিবার কোনোরূপ উপায় কর। এই যন্ত্রটিও বেলুনে তুলিয়া লইতে হয়। নামিতে ইচ্ছা হইলে যেখানে বসিবার উপায় করিলে, সেই স্থানটা অবলম্বন করিয়া বেলুনের সহিত ছাতার সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করিয়া দিতে হয়। বাতাসে ছাতাটা আপনা আপনি ফুলিয়া উঠে। তখন ধুপ্‌ করিয়া পড়িয়া যাইবার আশংকা থাকে না।

 ছাতার মাঝখানে ঐ ছিদ্রটি না থাকিলে ছাতা ভয়ানক দুলিত, ও তোমার পড়িয়া যাইবার সম্ভাবনা হইত। ঐ ছিদ্রটি থাকাতে দেখা গিয়াছে যে, ঐরূপ দুলিবার কোনো ভয় থাকে না। (বল দেখি কেন এরূপ হয়?)

 অনেকেই মনে করিতে পারেন যে, লোকে কেবলমাত্র আমোদের জন্যই বেলুনে উঠে। অনেকে আমোদের জন্য বেলুনে উঠে বটে, কিন্তু তাছাড়া বেলুনে উঠাতে অনেক উপকার হয়। ইংরজি বইতে একটি ছবি দেখিলাম। ঐ ছবিতে যে দুইজন লোক বসিয়া আছেন, তাঁহাদের একজন গ্লেশার আর একজন কক্সওয়েল সাহেব। ইঁহারা ইংলণ্ডের দুইজন বৈজ্ঞানিক। পৃথিবী হইতে কত ঊর্দ্ধে বাতাসের অবস্থা কিরূপ, জানিবার জন্য ইঁহারা বেলুনে চড়িয়াছেন। গ্লেশার সাহেবের সম্মুখে বাতাস পরীক্ষা করিবার উপযোগী যন্ত্রগুলি সাজানো রহিয়াছে। একটি যন্ত্রের সাহায্যে জানা যায় যে ‘এত’ উর্দ্ধে উঠা হইয়াছে। অন্য একটি যন্ত্র বলিয়া দিতেছে যে সেখানকার বাতাসে ‘এত’ জলীয়বাষ্প আছে। আর একটি বলিতেছে যে সেখানকার বাতাস ‘এত’ গরম ইত্যাদি।

 আমরা একস্থানে বলিয়াছি যে, ‘বেলুন এত উপরে উঠিয়াছে যে তুমি তাহা সুবিধা মনে কর না।’ ইহার অর্থ হয়তো অনেকেরই বুঝিতে একটু গোল হইয়াছে, সুতরাং অত্যন্ত উচ্চে উঠিলে যে অসুবিধা হয়, তাহার দু-একটি উল্লেখ করা যাইতেছে। কিছু উপরে উঠিলেই দেখিবে শ্বাস ফেলিতে একটু কষ্ট হয়—বাতাস যেন কমিয়া গিয়াছে। এই অসুবিধাটা ক্রমেই বাড়িতে থাকে। এর চাইতে আরো উপরে উঠিলে দেখিবে তোমার গায়ের চামড়া ফাটিয়া যাইতেছে। আরো উপরে উঠিলে তোমার নাকের লোমকূপগুলি দিয়া বিন্দু বিন্দু রক্ত বাহির হইবে। তাই বলিতেছিলাম অধিক উপরে উঠিলে অসুবিধা হইবে।

 একটা গল্প বলিয়া শেষ করিতেছি। নেডার নামক এক সাহেব খুব জোগাড়যন্ত্র করিয়া একটা প্রকাণ্ড বেলুন প্রস্তুত করিলেন। তাহার ভিতরে কত কিছু ব্যাপারেরই আয়োজন হইল; সাহেব মনে করিলেন গরু হারাইলে ইহার ভিতর তাহাও পাওয়া যাইবে। সকলে শশব্যস্ত হইয়া তামাশা দেখিতে আসিল; মনে করিল, ‘এটা যখন শূন্যে উঠিবে তখন না জানি একটা কি ব্যাপারই হয়।’ ‘বহারম্ভে লঘু ক্রিয়া’, বেলুনটা কত দূর উঠিয়াই পড়িয়া গেল। যাহারা তামাশা দেখিতে গিয়াছিল তাহারা বাড়ি আসিয়া হাসিতে লাগিল।