উৎসর্গ/১৬
হে বিশ্বদেব , মোর কাছে তুমি
দেখা দিলে আজ কী বেশে ।
দেখিনু তোমারে পূর্বগগনে ,
দেখিনু তোমারে স্বদেশে ।
ললাট তোমার নীল নভতল
বিমল আলোকে চির - উজ্জ্বল
নীরব আশিস - সম হিমাচল
তব বরাভয় কর ।
সাগর তোমার পরশি চরণ
পদধূলি সদা করিছে হরণ ,
জাহ্নবী তব হার - আভরণ
দুলিছে বক্ষ ' পর ।
হৃদয় খুলিয়া চাহিনু বাহিরে ,
হেরিনু আজিকে নিমেষে —
মিলে গেছ ওগো বিশ্বদেবতা ,
মোর সনাতন স্বদেশে ।
শুনিনু তোমার স্তবের মন্ত্র
অতীতের তপোবনেতে —
অমর ঋষির হৃদয় ভেদিয়া
ধ্বনিতেছে ত্রিভুবনেতে ।
প্রভাতে হে দেব , তরুণ তপনে
দেখা দাও যবে উদয়গগনে
মুখ আপনার ঢাকি আবরণে
হিরণ - কিরণে গাঁথা —
তখন ভারতে শুনি চারি ভিতে
মিলি কাননের বিহঙ্গগীতে
প্রাচীন নীরব কণ্ঠ হইতে
উঠে গায়ত্রীগাথা ।
হৃদয় খুলিয়া দাঁড়ানু বাহিরে
শুনিনু আজিকে নিমেষে ,
অতীত হইতে উঠিছে হে দেব ,
তব গান মোর স্বদেশে ।
নয়ন মুদিয়া শুনিনু , জানি না
কোন্ অনাগত বরষে
তব মঙ্গলশঙ্খ তুলিয়া
বাজায় ভারত হরষে ।
ডুবায়ে ধরার রণহুংকার
ভেদি বণিকের ধনঝংকার
মহাকাশতলে উঠে ওঙ্কার
কোনো বাধা নাহি মানি ।
ভারতের শ্বেত হৃদিশতদলে ,
দাঁড়ায়ে ভারতী তব পদতলে ,
সংগীততানে শূন্যে উথলে
অপূর্ব মহাবাণী ।
নয়ন মুদিয়া ভাবীকালপানে
চাহিনু , শুনিনু নিমেষে
তব মঙ্গলবিজয়শঙ্খ
বাজিছে আমার স্বদেশে ।