নূতন।

হেথাও ত পশে সূর্য্যকর!
ঘোর ঝটিকার রাতে
দারুণ অশণি পাতে
বিদীরিল যে গিরি-শিখর—
বিশাল পর্ব্বত কেটে,
পাষাণ-হৃদয় ফেটে,
প্রকাশিল যে ঘোর গহ্বর—
প্রভাতে পুলকে ভাসি,
বহিয়া নবীন হাসি,
হেথাও ত পশে সূর্য্যকর!
দুয়ারেতে উঁকি মেরে
ফিরে ত যায় না সে রে,
শিহরি উঠে না আশঙ্কায়,
ভাঙ্গা পাষাণের বুকে
খেলা করে কোন্‌ সুখে,
হেসে আসে, হেসে চলে যায়!

হের হের, হায়, হায়,
যত প্রতিদিন যায়—
কে গাঁথিয়া দেয় তৃণ জাল!
লতাগুলি লতাইয়া,
বাহুগুলি বিথাইয়া
ঢেকে ফেলে বিদীর্ণ কঙ্কাল।
বজ্রদগ্ধ অতীতের—
নিরাশার অতিথের—
ঘোর স্তব্ধ সমাধি আবাস,—
ফুল এসে, পাতা এসে
কেড়ে নেয় হেসে হেসে,
অন্ধকারে করে পরিহাস!

এরা সব কোথা ছিল!
কেই বা সংবাদ দিল!
গৃহ-হারা আনন্দের দল—
বিশ্বে তিল শূন্য হলে,
অনাহুত আসে চলে,
বাসা বাঁধে করি কোলাহল।

আনে হাসি, আনে গান,
আনেরে নূতন প্রাণ,
সঙ্গে করে আনে রবিকর,
অশোক শিশুর প্রায়
এত হাসে এত গায়
কাঁদিতে দেয় না অবসর।
বিষাদ বিশাল কায়া
ফেলেছে আঁধার ছায়া
তারে এরা করে না ত ভয়,
চারি দিক হতে তারে
ছোট ছোট হাসি মারে,
অবশেষে করে পরাজয়।

এই যে রে মরুস্থল,
দাব-দগ্ধ ধরাতল,
এই খানে ছিল “পুরাতন,”
এক দিন ছিল তার
শ্যামল-যৌবন ভার,
ছিল তার দক্ষিণ-পবন।

যদি রে সে চলে গেল,
সঙ্গে যদি নিয়ে গেল
গাত গান হাসি ফুল ফল,
শুষ্ক-স্মৃতি কেন মিছে
রেখে তবে গেল পিছে,
শুষ্ক শাখা শুষ্ক ফুলদল!
সে কি চায় শুষ্ক বনে
গাহিবে বিহঙ্গগণে
আগে তারা গাহিত যেমন?
আগেকার মত ক’রে
স্নেহ তার নাম ধ’রে
উচ্ছসিবে বসন্ত পবন?
নহে নহে, সে কি হয়!
সংসার জীবনময়,
নাহি হেথা মরণের স্থান।
আয়রে, নূতন, আয়,
সঙ্গে করে নিয়ে আয়,
তোর সুখ, তোর হাসি গান।

ফোটা’ নব ফুল চর,
ওঠা’ নব কিশলয়,
নবীন বসন্ত আয় নিয়ে।
যে যায় সে চলে যাক্‌,
সব তার নিয়ে যাক্‌,
নাম তার যাক্‌ মুছে দিয়ে।

এ কি ঢেউ-খেলা হয়,
এক আসে, আর যায়,
কাঁদিতে কাঁদিতে আসে হাসি,
বিলাপের শেষ তান
না হইতে অবসান
কোথা হতে বেজে ওঠে বাঁশি!
আয়রে কাঁদিয়া লই,
শুকাবে দু দিন বই
এ পবিত্র অশ্রুবারি ধারা।
সংসারে ফিরিব ভূলি,
ছোট ছোট সুখগুলি
রচি দিবে আনন্দের কারা।

না রে, করিব না শোক,
এসেছে নূতন লোক,
তারে কে করিবে অবহেলা!
সেও চলে যাবে কবে,
গীত গাম সাঙ্গ হবে,
ফুরাইবে দুদিনের খেলা।