কড়ি ও কোমল/সাত ভাই চম্পা
সাত ভাই চম্পা।
সাতটি চাঁপা সাতটি গাছে,
সাতটি চাঁপা ভাই।
রাঙ্গা-বসন পারুল দিদি,
তুলনা তার নাই।
সাতটি সোনা চাঁপার মধ্যে
সাতটি সোনা মুখ,
পারুল দিদির কচি মুখটি
কর্ত্তেছে টুক্টুক্!
ঘুমটি ভাঙ্গে পাখির ডাকে
রাতটি যে পোহালো,
ভোরর বেলা চাঁপার পড়ে
চাঁপার মত আলো।
শিশির দিয়ে মুখটি মেজে
মুখখানি বের কোরে,
কি দেখ্চে সাত ভায়েতে
সারা সকাল ধ’রে।
দেখ্চে চেয়ে ফুলের বনে
গোলাপ ফোটে ফোটে,
পাতায় পাতায় খোদ পড়েছে,
চিক্চিকিয়ে ওঠে।
দোলা দিয়ে বাতাস পালায়
দুষ্টু ছেলের মত,
লতায় পাতায় হেলাদোলা
কোলাকুলি কত!
গাছটি কাঁপে নদীর ধারে
ছায়াটি কাঁপে জলে,
ফুলগুলি সব কেঁদে পড়ে
শিউলি গাছের তলে।
ফুলের থেকে মুখ বাড়িয়ে
দেখ্চে ভাই বোন্,
দুখিনী এক মায়ের তরে
আকুল হল মন।
সারাটা দিন কেঁপে কেঁপে
পাতার ঝুরু ঝুরু,
মনের সুখে বনের যেন
বুকের দুরু দুরু!
কেবল শুনি কুলুকুলু
এ কি ঢেউয়ের খেলা!
বনের মধ্যে ডাকে ঘুঘু
সারা দুপুর বেলা।
মৌমাছি সে গুনগুনিয়ে
খুঁজে বেড়ায় কা’কে,
ঘাসের মধ্যে ঝিঁঝিঁ করে
ঝিঁঝিঁ পোক ডাকে।
ফুলের পাতায় মাথা রেখে
শুন্চে ভাই বোন,
মায়ের কথা মনে পড়ে
আকুল করে মন।
মেঘের পানে চেয়ে দেখে
মেঘ চলেছে ভেসে,
পাখীগুলি উড়ে উড়ে
চলেছে কোন্ দেশে!
প্রজাপতির বাড়ি কোথায়
জানে না ত কেউ।
সমস্ত দিন কোথায় চলে
লক্ষ হাজার ঢেউ!
দুপুর বেলা থেকে থেকে
উদাস হল বায়,
শুক্নো পাতা খসে পড়ে
কোথায় উড়ে যায়!
ফুলের মাঝে গালে হাত
দেখ্চে ভাই বোন,
মায়ের কথা পড়চে মনে
কাঁদচে প্রাণমন।
সন্ধে হলে জোনাই জ্বলে
পাতায় পাতায়,
অশথ গাছে দুটি তারা
গাছের মাথায়।
বাতাস বওয়া বন্ধ হল,
স্তব্ধ পাখীর ডাক,
থেকে থেকে করচে কা কা
দুটো একটা কাক!
পশ্চিমেতে ঝিকিমিকি,
পূবে আঁধার করে,
সাতটি ভায়ে গুটিসুটি
চাঁপা ফুলের ঘরে।
“গল্প বল পারুল দিদি”
সাতটি চাঁপা ডাকে,
পাল দিদির গল্প শুনে
মনে পড়ে মাকে।
প্রহর বাজে, রাত হয়েছে,
ঝাঁঝাঁ করে বন,
ফুলের মাঝে ঘুমিয়ে প’ল
আট্টি ভাই বোন।
সাতটি তারা চেয়ে আছে
সাতটি চাঁপার বাগে,
চাঁদের আলো সাতটি ভায়ের
মুখের পরে লাগে।
ফুলের গন্ধ ঘিরে আছে
সাতটি ভায়ের তনু—
কোমল শয্যা কে পেতেছে
সাতটি ফুলের রেণু।
ফুলের মধ্যে সাত ভায়েতে
স্বপন দেখে মাকে;
সকাল বেলা “জাগো জাগো”
পারুল দিদি ডাকে।