কথামালা (১৮৮৫)/ঈগল ও দাঁড়কাক
ঈগল ও দাঁড়কাক
এক পাহাড়ের নিম্ন দেশে, কতকগুলি মেষ চরিতেছিল। এক ঈগল পক্ষী, পাহাড়ের উপর হইতে নামিয়া, ছোঁ মারিয়া, এক মেষশাবক লইয়া, পুনরায় পাহাড়ের উপর উঠিল। ইহা দেখিয়া, এক দাঁড়কাক ভাবিল, আমিও কেন, ঐ রূপ ছোঁ মারিয়া, একটা মেষ অথবা মেষশাবক লই না। ঈগল যদি পারিল, আমি না পারিব কেন? এই স্থির করিয়া, সে যেমন এক মেষের উপর ছোঁ মারিল, অমনি সেই মেষের লোমে তাহার পায়ের নখর জড়াইয়া গেল।
দাঁড়কাক, এই রূপে বদ্ধ হইয়া, ঝট্পট্ ও প্রাণভয়ে কা কা করিতে লাগিল। মেষপালক, আদি অবধি অন্ত পর্য্যন্ত, এই ব্যাপার দেখিয়া, হাসিতে হাসিতে, তথায় উপস্থিত হইল, এবং সেই নির্বোধ দাঁড়কাককে ধরিয়া, তাহার পাখা কাটিয়া দিল। পরে সে, সায়ংকালে, ঐ দাঁড়কাক গৃহে লইয়া গেল। মেষপালকের শিশু সন্তানেরা দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, বাবা! তুমি আমাদের জন্যে ও কি পাখী আনিয়াছ? মেষপালক কহিল, যদি তোমরা উহাকে জিজ্ঞাসা কর, ও বলিবেক, আমি ঈগল পক্ষী; কিন্তু, আমি উহাকে দাঁড়কাক বলিয়া আনিয়াছি।