কথামালা (১৮৮৫)/কাক ও শৃগাল
এক কাক, কোনও স্থান হইতে, এক খণ্ড মাংস আনিয়া, বৃক্ষের শাখায় বসিল। সে ঐ মাংস খাইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়, এক শৃগাল, সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া, কাকের মুখে মাংসখণ্ড দেখিয়া, মনে মনে স্থির করিল, কোনও উপায়ে, কাকের মুখ হইতে, ঐ মাংস লইয়া, আহার করিতে হইবেক। অনন্তর, সে কাককে সম্বোধন করিয়া কহিল, ভাই কাক! আমি তোমার মত সর্ব্বাঙ্গসুন্দর পক্ষী কখনও দেখি নাই। কেমন পাখা! কেমন চক্ষু! কেমন গ্রীবা! কেমন বক্ষঃস্থল! কেমন নখর! দেখ, ভাই! তোমার সকলই সুন্দর; দুঃখের বিষয় এই, তুমি বোবা।
কাক, শৃগালের মুখে এইরূপ প্রশংসা শুনিয়া, অতিশয় আহ্লাদিত হইল, এবং মনে করিল, শৃগাল ভাবিয়াছে, আমি বোবা। এই সময়ে, যদি আমি শব্দ করি, তাহা হইলে, শৃগাল, এক বারে মোহিত হইবেক। এই বলিয়া, মুখবিস্তার করিয়া, কাক যেমন শব্দ করিতে গেল; অমনি তাহার মুখস্থিত মাংসখণ্ড ভূমিতে পতিত হইল। শৃগাল, যার পর নাই আহ্লাদিত হইয়া, ঐ মাংসখণ্ড উঠাইয়া লইল, এবং, মনের সুখে, খাইতে খাইতে, তথা হইতে চলিয়া গেল। কাক, হতবুদ্ধি হইয়া, বসিয়া রহিল।
আপন ইষ্ট সিদ্ধ করা অভিপ্রেত না হইলে, কেহ খোসামোদ করে না। আর, যাহারা খোসামোদের বশীভূত হয়, তাহাদিগকে তাহার ফলভোগ করিতে হয়।