কথামালা (১৮৮৫)/বৃদ্ধ সিংহ
এক সিংহ, অতিশয় বৃদ্ধ হইয়া, নিতান্ত দুর্ব্বল ও অক্ষম হইয়াছিল। সে, এক দিন, ভূমিতে পড়িয়া, ঘন ঘন নিশ্বাস টানিতেছে, এমন সময়ে, এক বনবরাহ তথায় উপস্থিত হইল। সিংহের সহিত ঐ বরাহের বিরোধ ছিল; কিন্তু, সিংহ অতিশয় বলবান বলিয়া, সে কিছুই করিতে পারিত না। এক্ষণে, সিংহের এই অবস্থা দেখিয়া, সে বারংবার দন্তাঘাত করিয়া চলিয়া গেল। সিংহের নড়িবার ক্ষমতা ছিল না; সুতরাং, বরাহের দন্তাঘাত সহ্য করিয়া রহিল। কিয়ৎ ক্ষণ পরে, এক বৃষ তথায় উপস্থিত হইল। সিংহের সহিত এই বৃষেরও বিরোধ ছিল। এক্ষণে সে, সিংহকে মৃতবৎ পতিত দেখিয়া, শৃঙ্গ দ্বারা প্রহার করিয়া, চলিয়া গেল। সিংহ এ অপমানও সহ্য করিয়া রহিল।
দেখাদেখি, এক গর্দ্দভ ভাবিল, সিংহের যখন বল ও বিক্রম ছিল, তখন আমাদের সকলের উপরেই অত্যাচার করিয়াছে। এখন, সময় পাইয়া, সকলেই সেই অত্যাচারের পরিশোধ করিতেছে। বরাহ ও বৃষ, সিংহের অপমান করিয়া, চলিয়া গেল; সিংহ কিছুই করিতে পারিল না। আমিও সময় পাইয়াছি, ছাড়ি কেন? এই বলিয়া, সিংহের নিকটে গিয়া, সে তাহার মুখে পদাঘাত করিল। তখন সিংহ, আক্ষেপ করিয়া, কহিল, হায়! সময়গুণে, আমার কি দুর্দ্দশা ঘটিল। যে সকল পশু, আমায় দেখিলে, ভয়ে কাঁপিত, তাহারা, অনায়াসে, আমার অপমান করিতেছে। যাহা হউক, বরাহ ও বৃষ বলবান জন্তু; তাহারা যে অপমান করিয়াছিল, তাহা আমার, কথঞ্চিৎ, সহ্য হইয়াছিল। কিন্তু, সকল পশুর অধম গর্দ্দভ যে আমায় পদাঘাত করিল, ইহা অপেক্ষা, আমার শত বার মৃত্যু হওয়া ভাল ছিল।