কথামালা (১৮৮৫)/লাঙ্গূলহীন শৃগাল
কোনও সময়ে, এক শৃগাল ফাঁদে পড়িয়াছিল। যাহারা ফাঁদ পাতিয়াছিল, তাহারা তাহার প্রাণবধের উদ্যম করিল; কিন্তু, তাহার কাতরতা দেখিয়া, প্রাণে না মারিয়া, লাঙ্গুল কাটিয়া, ছাড়িয়া দিল। শৃগাল, লাঙ্গূল দিয়া, প্রাণ বাঁচাইল বটে; কিন্তু, লাঙ্গুল না থাকাতে, স্বজাতির নিকট যে অপমানবোধ হইবেক, তাহা ভাবিয়া, মনে মনে কহিতে লাগিল, লাঙ্গূল যাওয়া অপেক্ষা, আমার প্রাণ যাওয়া ভাল ছিল।
পরিশেষে, এই অপমান শুধরিয়া লইবার জন্য, সকল শৃগালকে একত্র করিয়া, সে কহিতে লাগিল, দেখ, ভাই সকল! আমার ইচ্ছা এই, তোমরা সকলে, আমার মত, স্ব স্ব লাঙ্গূল কাটিয়া ফেল। লাঙ্গূল না থাকাতে, আমি যেরূপ স্বচ্ছন্দ শরীরে বেড়িয়া বেড়াইতেছি, তোমরা কেহই তাহা অনুভব করিতে পারিতেছ না। যদি পরীক্ষা করিয়া না দেখিতাম, বোধ করি, আমিও কখনও বিশ্বাস করিতাম না। বিবেচনা করিয়া দেখিলে; লাঙ্গূল থাকিলে, অতি কদর্য্য দেখায়, পদে পদে, যার পর নাই অসুবিধা ঘটে। ফলকথা এই, লাঙ্গুল রাখায়, অনর্থক ভার বহিয়া বেড়ান মাত্র লাভ। আমার আশ্চর্য্য বোধ হইতেছে যে, আমরা এত দিন লাঙ্গুল রাখিয়াছি কেন। হে বন্ধুগণ! আমি স্বয়ং, যার পর নাই, উপকার বোধ করিয়াছি; এজন্য, তোমাদিগকে পরামর্শ দিতেছি, তোমরাও, আমার মত, আপন আপন লাঙ্গুল কাটিয়া ফেল। লাঙ্গুল না থাকায় কত আরাম, এখনই বুঝিতে পারিবে।
এই প্রস্তাব শুনিয়া, এক বৃদ্ধ শৃগাল, অগ্রসর হইয়া, লাঙ্গুলহীন শৃগালকে কহিল, ভাই হে! যদি তোমার লাঙ্গুল ফিরিয়া পাইবার সম্ভাবনা থাকিত, তাহা হইলে, তুমি, কদাচ, আমাদিগকে লাঙ্গুল কাটিয়া ফেলিতে পরামর্শ দিতে না।