কথামালা (১৮৮৫)/শৃগাল ও কৃষক
শৃগাল ও কৃষক
ব্যাধগণে ও তাহাদের কুকুরে তাড়াতাড়ি করাতে এক শৃগাল, অতি দ্রুত দৌড়িয়া গিয়া, কোন কৃষকের নিকট উপস্থিত হইল, এবং কহিল ভাই! যদি তুমি কৃপা করিয়া আশ্রয় দাও, তবে, এ যাত্রা, আমার পরিত্রাণ হয়। কৃষক কহিল, তোমার ভয় নাই, আমার কুটীরে লুকাইয়া থাক। এই বলিয়া, সে আপন কুটীযর দেখাইয়া দিল। শৃগাল, কুটীরে প্রবেশ করিয়া, এক কোণে লুকাইয়া রহিল। ব্যাধেরাও, অবিলম্বে, তথায় উপস্থিত হইয়া, কৃষককে জিজ্ঞাসিল, অহে ভাই! এ দিকে একটা শিয়াল আসিয়াছিল, কোন দিকে গেল, বলিতে পার। সে, কিছুই না বলিয়া, কুটীরের দিকে অঙ্গুলিপ্রয়োগ করিল। তাহারা, কৃষকের সঙ্কেত বুঝিতে না পারিয়া, চলিয়া গেল।
ব্যাধের প্রস্থান করিলে পর, শৃগাল, কুটীর হইতে বহির্গত হইয়া, চুপে চুপে চলিয়া যাইতে লাগিল। ইহা দেখিয়া, কৃষক, ভর্ৎসনা করিয়া, শৃগালকে কহিল, যা হউক, ভাই! তুমি বড় ভদ্র; আমি, বিপদের সময়, আশ্রয় দিয়া, তোমার প্রাণরক্ষা করিলাম। কিন্তু, তুমি, যাইবার সময়, আমায় একটা কথার সম্ভাষণও করিলে না। শৃগাল কহিল, ভাই হে! তুমি ই যেমন ভদ্রতা করিয়াছিলে, যদি অঙ্গলিতেও সেইরূপ ভদ্রতা করিতে, তাহা হইলে, আমিও, তোমার নিকট বিদায় না লইয়া, কাদাচ, কুটীর হইতে চলিয়া যাইতাম না।
এক কথায় যত মন্দ হয়, এক ইঙ্গিতেও তত মন্দ হইতে পারে