কথামালা (১৮৮৫)/হরিণ
হরিণ
এক হরিণ খালে জলপান করিতে গিয়াছিল। জলপান করিবার সময়ে, জলে তাহার শরীরের প্রতিবিম্ব পড়িয়াছিল। সেই প্রতিবিম্বে দৃষ্টিপাত করিয়া, হরিণ কহিল, আমার শৃঙ্গ যেমন দৃঢ়, তেমনই সুন্দর; কিন্তু, আমার পা দেখিতে অতি কদর্য্য ও অকর্মণ্য। হরিণ, এই রূপে, আপন অবয়বের দোষ ও গুণের বিবেচনা করিতেছে, এমন সময়ে, ব্যাধেরা আসিয়া তাড়া করিল। সে, প্রাণভয়ে, এত বেগে পলায়িতে লাগিল যে, ব্যাধেরা অনেক পশ্চাতে পড়িল। কিন্তু, জঙ্গলে প্রবেশ করিবা মাত্র, তাহার শৃঙ্গ লতায়। এমন জড়াইয়া গেল যে, আর সে পলায়ন করিতে পারিল না। তখন ব্যাধেরা আসিয়া তাহার প্রাণবধ করিল। হরিণ, এই বলিয়া, প্রাণত্যাগ করিল যে, আমি, যে অবয়বকে কদর্ঘ্য ও অকর্মণ্য স্থির করিয়া, অসন্তুষ্ট হইয়াছিলাম, উহা আমায় শত্রুহস্ত হইতে বাঁচাইয়াছিল; কিন্তু, যে অবয়বকে দৃঢ় ও সুন্দর বোধ করিয়া, সন্তুষ্ট হইয়াছিলাম, তাহাই আমার প্রাণনাশের হেতু হইল।