কথামালা (১৯৪৪)/কৃষক ও সারস

কৃষক ও সারস।

কতকগুলি বক, প্রতিদিন ক্ষেত্রের শস্য নষ্ট করিয়া যাইত। তাহা দেখিয়া কৃষক, বক ধরিবার নিমিত্ত, ক্ষেত্রে জাল পাতিয়া রাখিল। পরে, সে জাল তদারক করিতে গিয়া দেখিল, কতকগুলি বক জালে পড়িয়া আছে, এবং একটী সারসও সেই সঙ্গে জালে পড়িয়াছে। তখন সারস, কৃষককে বলিল, ভাই কৃষক, আমি বক নহি; আমি তোমার শস্য নষ্ট করি নাই; আমায় ছাড়িয়া দাও। তুমি বিবেচনা করিয়া দেখ, আমার কোনও অপরাধ নাই। যত পক্ষী আছে, আমি সে সকল অপেক্ষা অধিক ধর্মপরায়ণ। আমি কখনও কাহারও কোন অনিষ্ট করি না। আমি বৃদ্ধ পিতা মাতার যার পর নাই সম্মান করি, এবং নানা স্থানে ভ্রমণ করিয়া, প্রাণপণে তাঁহাদের ভরণ পোষণ করি। তখন কৃষক বলিল, শুন সারস, তুমি যে সকল কথা বলিলে, সে সকল যথার্থ, তাহাতে আমার সন্দেহ নাই। কিন্তু যাহরা আমার শস্য নষ্ট করে, তুমি তাহাদের সঙ্গে ধরা পড়িয়াছ; এজন্য তোমায় তাহাদের সঙ্গে শাস্তিভোগ করিতে হইবে।

 অসৎসঙ্গের অশেষ দোষ, যথার্থ সাধুদিগকেও, সঙ্গদোষে বিপদে পড়িতে হয়।

প্রতিদিন—প্রত্যহ, রোজ রোজ। নষ্ট–অপচয়, হানি, ক্ষতি।

তদারক—দেখোশুনা, অনুসন্ধান। ধর্মপরায়ণ—ধার্ম্মিক।

অনিষ্ট-ক্ষতি, হানি। প্রাণপণে—সাধ্যানুসাবে।

শান্তিভোগ-সাজা লওয়া। অশেষ-অসীম, অত্যন্ত।

সাধু-পুণ্যাত্মা, ধাৰ্মিক, সৎ। সঙ্গদোষে—সহবাসজনিত দোষে।